Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লাভ কী হবে বালুচ তাসে, উঠছে প্রশ্ন

স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বালুচিস্তান তাস খেলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত দেশের কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক শিবির। অনেকের প্রশ্ন, ইসলামাবাদের ঢিলের বদলে পাটকেল ছোড়ার এই নতুন পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে কি না?

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়দিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৬ ০৪:১১
Share: Save:

স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বালুচিস্তান তাস খেলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত দেশের কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক শিবির। অনেকের প্রশ্ন, ইসলামাবাদের ঢিলের বদলে পাটকেল ছোড়ার এই নতুন পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে কি না?

সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষ দিন সর্বদল বৈঠকে প্রথম বালুচিস্তান, পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ইসলামাবাদের অত্যাচার নিয়ে প্রচারের কথা বলেছিলেন মোদী। গত কাল বক্তৃতায় খোলাখুলি বলেন, ‘‘আমি বালুচিস্তান, গিলগিট ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে বলতে চাই। এ নিয়ে ভারত সরব হওয়ায় গত কয়েক দিনে ওই সব এলাকার অনেক লোক আমায় ধন্যবাদ দিয়েছেন। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।’’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, আগামী নভেম্বরে সার্ক অধিবেশনের আগে সন্ত্রাস প্রশ্নে দরকষাকষির জন্য এখন থেকেই সুর চড়াতে শুরু করাই উচিত। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের চাপের বিরুদ্ধে এই তাসই ব্যবহার করতে হবে।

চলতি মাসে পাকিস্তানে সার্কের অর্থমন্ত্রী বৈঠক হওয়ার কথা। কিন্তু তাতে অরুণ জেটলির যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে সরকারি সূত্রে খবর। এ দিনই পাকিস্তানকে নরকের সঙ্গে তুলনা করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। এ ভাবেও ভারত পাকিস্তানের উপরে চাপ বাড়াতে চাইছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

সরকারের বালুচ-তাসের প্রকাশ্যেই বিরোধিতা করেছেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ। তাঁর মতে, অন্য দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে ভারতের উদ্বেগ রয়েছে ঠিকই। কিন্তু খোলাখুলি ভাবে তা নিয়ে ভারত নাক গলায় না। তাঁর কথায়, ‘‘সে দেশের নেতাদের কাছে ঘরোয়া ভাবে আমরা উদ্বেগ জানাই ঠিকই। কিন্তু সেটাকে কখনও নীতি হিসেবে ব্যবহার করি না। তাহলে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য কী হল?’’ তাঁর মতে, বালুচিস্তান নিয়ে ভারত গলা চড়ালে পাকিস্তানও কাশ্মীর নিয়ে আরও সরব হওয়ার সুযোগ পাবে।

কিন্তু খুরশিদের দল তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। বরং প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রীর মন্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত মত’ বলে দূরত্ব বাড়িয়েছে। এ নিয়ে মোদীকে সমর্থন করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। এআইসিসি মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘বালুচিস্তানই হোক বা পাক-অধিকৃত কাশ্মীর—সে দেশের সেনা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। ভারতের উচিত এই বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়া।’’

সাত বছর আগে মিশরের শর্ম- অল-শেখ-এ মনমোহন সিংহ সরকার বালুচ-অশান্তিতে দিল্লির হাত থাকার কথা কার্যত মেনে নিয়েছিল। তা হলে কংগ্রেস এখন মোদীর পাশে দাঁড়াল কেন? কংগ্রেস সূত্রের মতে, ঘরোয়া রাজনৈতিক আবেগের দিকটি বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মোদীর এই আক্রমণাত্মক পাক-বিরোধী বক্তব্য ঘরোয়া ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে ঝড় তুলবে। তাই পিছিয়ে থাকতে চায় না কংগ্রেস।

তবে কূটনীতিকদের একাংশের মত, বালুচিস্তান নিয়ে ভূকৌশলগত খেলা চালিয়ে পাকিস্তানের উপর চাপ তৈরি করা যাবে। কিন্তু তাতে কাশ্মীর সমস্যা মিটবে না। বালুচিস্তানের সঙ্গে চিন ও ইরানের স্বার্থও জড়িত। মোদীর এই তাসে ওই দু’টি দেশও ক্ষুব্ধ হবে বলেই মত অনেক কূটনীতিকের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Modi Pakistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE