Advertisement
২৪ মে ২০২৪
বিরোধী ঐক্য ভাঙতে সক্রিয় কেন্দ্র

নোটকাণ্ডে মোদীকেই বিঁধুন, দাওয়াই রাহুলের

দিল্লির বুকে বিরোধীরা একজোট হতেই তাঁদের ঐক্য ভাঙতে তৎপর হলেন নরেন্দ্র মোদী। বসে নেই রাহুল গাঁধীও। খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আক্রমণকে চূড়ান্ত স্তরে নিয়ে যেতে কংগ্রেস কর্মীদের নির্দেশ দিলেন তিনি। ফলে বছর শেষের ছুটি ছুটি আমেজ ঝেড়ে ফেলে শাসক-বিরোধী দ্বৈরথে আপাতত উত্তপ্ত রাজধানী।

ধর্মশালায় প্রচারে রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

ধর্মশালায় প্রচারে রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৩
Share: Save:

দিল্লির বুকে বিরোধীরা একজোট হতেই তাঁদের ঐক্য ভাঙতে তৎপর হলেন নরেন্দ্র মোদী। বসে নেই রাহুল গাঁধীও। খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আক্রমণকে চূড়ান্ত স্তরে নিয়ে যেতে কংগ্রেস কর্মীদের নির্দেশ দিলেন তিনি। ফলে বছর শেষের ছুটি ছুটি আমেজ ঝেড়ে ফেলে শাসক-বিরোধী দ্বৈরথে আপাতত উত্তপ্ত রাজধানী।

দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় তুলে ক’দিন আগেই বিরোধী শিবিরকে তাতিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। সরকার বিরোধী আন্দোলনকে সংসদের বাইরে নিয়ে যেতে আগামিকালই দিল্লিতে বিরোধী নেতাদের বৈঠক ডেকেছে কংগ্রেস। এই অবস্থায় গত কাল রাতেই মোদী তাঁর মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন বিরোধী ঐক্য যাতে দানা বাঁধতে না পারে, তার জন্য এখন থেকেই উদ্যোগী হতে হবে। যে বিরোধী নেতার সঙ্গে যাঁর ভাল সম্পর্ক আছে, তাঁকে ওই নেতার সঙ্গে নিরন্তর কথা বলতে হবে। প্রকাশ্যে রাজনৈতিক আক্রমণ যাই হোক, অন্তত ব্যক্তিগত স্তরে কথাবার্তা বলে বিরোধী শিবিরে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

বিরোধীদের ঐক্যে অবশ্য এমনিতেই চিড়ের লক্ষণ দেখা গিয়েছে। আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি এসে পৌঁছনোর আগেই কলকাতায় তাঁর বিরুদ্ধে তোপ দেগে কাল বিরোধী মঞ্চে না যাওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশের দুই নেতা মুলায়ম ও মায়াবতীকে এক মঞ্চে আনা কার্যত অসম্ভব। কাল বিরোধী মঞ্চে যাওয়ার ব্যাপারে এখনও সম্মতি জানায়নি মায়াবতীর দল। তামিলনাড়ুর ডিএমকে এবং এডিএমকে-র ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে।

তবে এই বাস্তব পরিস্থিতি মাথায় রেখেই তথাকথিত বিরোধী জোটের বহর বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন সনিয়া-রাহুল। পাশাপাশি, নিজেদের দলকেও পুরোদস্তুর ময়দানে নেমে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা। আজ সন্ধ্যায় কংগ্রেসের ‘ওয়ার রুম’-এর বন্ধ ঘরে রাহুল দলীয় কর্মীদের বলেছেন, নরেন্দ্র মোদী ‘চোর’— বিনা সঙ্কোচে এই প্রচার দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই আক্রমণের কৌশল শিখতে বলেছেন বিজেপির কাছ থেকেই। রাহুলের মতে, ভাবমূর্তি নির্মাণ করতে হয়, কোনও জাদুবলে সেটা হয় না। আর সেটা কী করে করতে হয়, তা বিজেপির কাছ থেকেই শেখা উচিত। এ প্রসঙ্গে ইউপিএ আমলে বিজেপি-র করা জন লোকপাল বিল আন্দোলনের কথা তুলে ধরেন রাহুল।

বফর্স কেলেঙ্কারির পরে ঐক্যবদ্ধ বিরোধীরা দেশ জুড়ে স্লোগান তুলেছিল, ‘গলি গলি মো শোর হ্যায়, রাজীব গাঁধী চোর হ্যায়।’ এ বার নরেন্দ্র মোদীর গায়ে সেই তকমা এঁটে মাঠে নামতে চাইছেন রাজীব-পুত্র। কংগ্রেস সূত্রে খবর, দলীয় নেতাদের রাহুল বলেছেন, সহারা ও বিড়লার ডায়েরি থেকে মোদীর দুর্নীতির যে তথ্য সামনে এসেছে, সেটা সত্যি। মোদী প্রচারের জোরে মিথ্যাকে সত্যি প্রমাণ করে দেন। আর কংগ্রেসকে তো শুধু সত্যিটাই তুলে ধরতে হবে।

এক কংগ্রেস নেতা জানান, এ দিনের বৈঠকে রাহুল বলেছেন, ‘‘সহারা ও বিড়লার ডায়েরি সম্পর্কে এই নিয়ে সাত বার আমি বলেছি, আজও রাজস্থানে বলেছি। প্রথম বার গুজরাতে বলা আর আজকের বলার সময় যে প্রতিক্রিয়া তার মধ্যে ফারাক রয়েছে। আজ সহারার কথা বলা মাত্র জনতা নিজে থেকেই বলে ওঠে, নরেন্দ্র মোদী চোর হ্যায়।’’

নোট-নাকচ নিয়ে মোদীর ‘হঠকারী’ সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি তাঁদের অনুকূলে এনে দিয়েছে বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা। রাহুল এ দিন তাঁদের বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বরের পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম সরকার মানুষের আর্থিক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে বলে দিচ্ছে, ‘আমার টাকা আমার নয়।’ আমজনতার সেই ক্ষোভের সুযোগ নিতে দলকে নির্দেশ দিয়েছেন রাহুল। ২৯ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত কী ভাবে আন্দোলন করতে হবে তার রূপরেখাও তুলে দেন বিভিন্ন রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের হাতে।

নোট নাকচ নিয়ে কংগ্রেস যে ক্রমশ চাপ বাড়াবে সেটা বুঝেই বিরোধী ঐক্য ভাঙার উপরে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ডিজিটাল লেনদেনের চল বাড়াতে চন্দ্রবাবু নায়ডুর নেতৃত্বে মুখ্যমন্ত্রীদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিজেপি সূত্রের খবর, চন্দ্রবাবুকে মোদী পরামর্শ দিয়েছেন, অবিলম্বে বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদেরও এই উদ্যোগে সামিল করতে। তাঁর মতে, নীতীশ কুমার, মানিক সরকারের মতো মুখ্যমন্ত্রীরা এই কমিটিতে থাকতে চাননি, কিন্তু আলোচনায় তো আসতে পারেন।

পাশাপাশি, সহারার ডায়েরি নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে গোলমাল পাকানোর চেষ্টাও বিজেপি চালাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, ডায়েরিতে নাম আছে কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও উত্তরপ্রদেশের আসন্ন ভোটে দলের মুখ শীলা দীক্ষিতেরও। ডায়েরির সত্যতা নেই বলে দাবি করে শীলা আজ কার্যত রাহুলেরই সমালোচনা করেছেন। কংগ্রেসের একাংশের ধারণা, শীলাকে খেপিয়ে তোলার পিছনে বিজেপিরই হাত রয়েছে। দলীয় নেতা জয়রাম রমেশ তাই তড়িঘড়ি বলেছেন, ‘‘ডায়েরিতে যাঁর নামই থাকুক, নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। কেউ নির্দোষ হলে তদন্তেই তা প্রমাণ হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul Gandhi Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE