কখনও ভাতে আরশোলা, বিরিয়ানিতে টিকিটিকি। কখনও চপের মধ্যে পেরেক! ট্রেনের খাবার নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ বিস্তর।
সেই অভিযোগ কার্যত মেনেও রেলকর্তাদের দাবি, খাবারে বিষক্রিয়ার কোনও ঘটনা এখনও জানা যায়নি। তাঁরা এ ক্ষেত্রে ঢাল করেছেন যাত্রী-সমীক্ষাকে। তবে রেল জানাচ্ছে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বাড়াতে প্রতিটি কোচে খাবার রাখার আলাদা জায়গা করা হবে। প্রতিটি কামরায় যে চারটি শৌচাগার থাকে, তার মধ্যে একটিকে হটিয়ে সেই জায়গা ব্যবহার হবে খাবার রাখা ও পরিবেশনের জন্য। তবে প্রশ্ন উঠেছে, একটি শৌচাগার সরালে যাত্রীদের অসুবিধে হবে না তো!
সম্প্রতি কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) চাঁছাছোলা ভাষায় রেলের খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আজ মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে খাবারের মান নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন বিভিন্ন দলের সাংসদেরা। যদিও নিজেদের একটি সমীক্ষা-রিপোর্ট তুলে ধরে রেলের দাবি, খাবারের দাম, স্বাদ, সময়ানুবর্তিতা এমনকী কেটারিং কর্মীর ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ থাকলেও খাবারে ‘বিষক্রিয়া’র কোনও অভিযোগ মেলেনি।
রেল সূত্রের দাবি, অফিসারেরা ট্রেনে উঠে খাবার নিয়ে সমীক্ষা করেছিলেন। তাতে কাজও হয়েছে। এক কর্তার কথায়, ‘‘১৬২টি ট্রেনে সমীক্ষা চালিয়ে ছ’মাসে ৩৪০টি অভিযোগ মিলেছে। তার মধ্যে ২২১টি অভিযোগই দাম বেশি নেওয়ার। খারাপ স্বাদের অভিযোগ মিলেছে ৫২টি। পরিচ্ছন্নতা নিয়েও অভিযোগ মিলেছে। কিন্তু খাবারে বিষাক্ত বা ক্ষতিকারক জিনিস রয়েছে, এমন অভিযোগ নেই।’’ দেশের সব ক’টি জোনের পরিসংখ্যানে এই রকমই তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি রেলকর্তাদের।
আজ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে পরিচ্ছন্নতার প্রশ্নে নিজেদের গাফিলতি মেনে নিয়েছেন রেলকর্তারা। যে ভাবে বেসিনের নীচে, শৌচাগারের পাশে খাবারের ট্রে রেখে তার পরে তা পরিবেশন করা হয়, তা যে স্বাস্থ্যসম্মত নয় সে কথা মেনে নিয়েছেন রেলকর্তারা। যাত্রীরা ছবি-সহ অভিযোগ করেছেন যে, ট্রেন ছাড়ার আগে জায়গার অভাবে শৌচাগারের মেঝেতে জড়ো করে রাখা হচ্ছে কম্বল। রেল কর্তারা জানাচ্ছেন, এই ব্যবস্থা পাল্টানো হবে। কোচের অভাবে পুরনো প্রায় ৪০ হাজার কামরাকেই আগামী পাঁচ বছরে নতুন করে সাজিয়েগুজিয়ে নামাতে চলেছে রেল। সেই কামরাগুলিতে খাবার ও কম্বল রাখার আলাদা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
রেলকর্তারা জানিয়েছেন, এখন প্রতিটি কামরার শুরু ও শেষে দু’টি করে মোট চারটি শৌচাগার থাকে। তার মধ্যে একটি শৌচাগার সরিয়ে দিয়ে সেটিকে কম্বল রাখা ও খাবার রাখার একটি ছোট ঘরের চেহারা দেওয়া হবে। একটি শৌচাগার কমে গেলে যাত্রীদের অসুবিধে হতে পারে, এই যুক্তি মেনে নিয়েও রেলকর্তারা বলেছেন, একমাত্র সকালের কয়েক ঘণ্টা বাদে কামরার চারটি শৌচাগার কখনওই একসঙ্গে ব্যবহার হয় না।
মোটের ওপর পরিচ্ছন্নতার প্রসঙ্গ বাদ দিলেও রেলের কর্তারা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ট্রেনের খাবারের মান কমে যাওয়ার অভিযোগ অনেকটাই সত্যি। তবে তাঁরা মনে করেন, রেলের খাবারে টিকটিকি-আরশোলা মেলার নেপথ্যে অন্য কারণও থাকতে পারে। রেলে কেটারিংয়ের বরাত পাওয়া নিয়ে গোষ্ঠী-কোন্দলের জেরে খাবারে পোকামাকড় বা অন্য ক্ষতিকারক জিনিস মিশিয়ে অন্তর্ঘাতের চেষ্টার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy