Advertisement
১১ মে ২০২৪

কুয়াশা-সমস্যা মেটাতে নতুন যন্ত্র বসাচ্ছে রেল

এই ‘নিয়ম’গুলোই এ বারে বদলাতে চাইছে রেল। কুয়াশা মোকাবিলার আশ্বাস দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকার নিয়মটা এ বার ভাঙতে উদ্যোগী হয়েছে তারা।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনমিত্র সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:১৮
Share: Save:

প্রতি বছরই শীতের মরসুমে কুয়াশায় বিপর্যস্ত হবে ট্রেন চলাচল— গত কয়েক বছরে এটা এক রকম নিয়ম হয়ে গিয়েছে!

প্রতি বছরই শীতের সময়ে কুয়াশার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনে আটকে থেকে যাত্রীরা চূড়ান্ত ভোগান্তির শিকার হবেন, চেঁচামেচি করবেন, বিক্ষোভ দেখাবেন— যেন নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছে এটা!

এই ‘নিয়ম’গুলোই এ বারে বদলাতে চাইছে রেল। কুয়াশা মোকাবিলার আশ্বাস দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকার নিয়মটা এ বার ভাঙতে উদ্যোগী হয়েছে তারা।

আগামী বছর কুয়াশার সময়ে ট্রেন চলাচলের ছবিটা অনেকটাই বদলাবে বলে আশাবাদী রেল কর্তারা। রেল বোর্ড সূত্রের খবর, কুয়াশা মোকাবিলায় এ বার নতুন একটি যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া হবে। ‘ফগ পাস’ নামে একটি নয়া যন্ত্র রেলের হাতে এসেছে। যার সাহায্যে ঘন কুয়াশার মধ্যেও চালানো যাবে ট্রেন। সেটি চলবে জিপিএস প্রযুক্তিতে।

দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ডিব্রুগড় পর্যন্ত দীর্ঘ রুটের ৫০০টি ইঞ্জিনে বিদেশি সংস্থার তৈরি ওই যন্ত্র আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে লাগানো হচ্ছে। পরীক্ষায় পাশ করলে গোটা দেশের জন্য ২৫০০টি এই যন্ত্রের বরাত দেওয়া হবে। যন্ত্রের সঙ্গে লাগানো একটি এলসিডি স্ক্রিনের সাহায্যে চালক গাঢ় কুয়াশাতেও বুঝতে পারবেন, সামনের সিগন্যাল লাল না সবুজ, লেভেল ক্রসিং বন্ধ না খোলা, সর্বোপরি একই লাইনে সামনে ঠিক কতটা দূরে রয়েছে অন্য ট্রেন। বোর্ড কর্তারা জানিয়েছেন, পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে বলে এই নয়া যন্ত্র বসানোর খরচ এখনও হিসেব করা যায়নি। তবে প্রতিটি যন্ত্রের দাম কমবেশি ৩৫ হাজার টাকা, সঙ্গে জিএসটি। তবে এর জন্য অর্থ জোগানের ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হবে না বলেই দাবি তাঁদের।

গত পুজোর আগে পর পর চারটি দুর্ঘটনার পরে রেল বোর্ড যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে একাধিক নির্দেশ জারি করেছিল। তার মধ্যে একটি ছিল, চালক মনে করলে যাত্রী সুরক্ষার কথা ভেবে গতি কমাতে পারেন। তার পর থেকে ট্রেনের চালক এবং গার্ড কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। কুয়াশা হলেই তাঁরা ওই নিয়ম মেনে ট্রেনের গতি কমিয়ে দিচ্ছেন। তাতেই ঘটছে দেরি।

গত কয়েক বছর ধরে দূষণের জেরে উত্তর ভারতে কুয়াশার সঙ্গে বাতাসের ধুলিকণা মিশে ধোঁয়াশা তৈরি করছে। যাতে আরও বেশি গাঢ় হচ্ছে কুয়াশা। রেল বোর্ডের কর্তাদের বক্তব্য, কুয়াশায় দৃশ্যমানতা কমে গেলেই যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য চালকেরা ট্রেনের গতি কমিয়ে ১০ কিলোমিটার করে দিচ্ছেন। তাতেই ‘লেট’ বাড়ছে। ইঞ্জিনে ওই নতুন যন্ত্র থাকলে চালকেরা স্বচ্ছন্দে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে ট্রেন চালাতে পারবেন। তাতে দেরিও কমবে। তবে রেল কর্তাদের একাংশের অভিমত, যতই যন্ত্র বসানো হোক, শুধু কুয়াশা নয়। ট্রেনের জট পাকাচ্ছে অহরহ লাইন মেরামতির কাজও। তাই এ অবস্থায় কিছু ট্রেন বাতিল না করলে গতি বাড়বে না। কিন্তু রেল আর্থিক ক্ষতির কথা ভেবে সে রাস্তায় হাঁটছে না।

কুয়াশায় বিমান চলাচল অব্যাহত রাখার জন্য বিমানবন্দরগুলোতে অনুরূপ যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে তাতেও কুয়াশায় বিমানের বিপাকে পড়া বন্ধ হয়নি। তাই এই যন্ত্র চালু করে ট্রেনের সমস্যা কতটা মিটবে, রেলের প্রাক্তন ও বর্তমান অনেক কর্তাই সেই বিষয়ে সন্দিহান।

বছর দশেক আগে ‘অ্যান্টি-কলিশন ডিভাইস’ নামে দুর্ঘটনা প্রতিরোধী একটি যন্ত্র বসানো হচ্ছে বলে প্রচার করেছিল রেল। কম দূরত্বের দু’তিনটি ক্ষেত্রে তা লাগানো হলেও বেশির ভাগ রুটেই ওই যন্ত্র আজও লাগানো হয়নি। এখন কুয়াশা জব্দ করতে যন্ত্রের কথা বলছে রেল। এটিও কত দিনে শেষ পর্যন্ত লাগানো হবে, সেই বিষয়ে সংশয়ে রেল-কর্তারাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rail Fog
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE