Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভোটযুদ্ধ জয়ে অমিতের অস্ত্র সেনা অভিযান

আর ঠারেঠোরে নয়। কোনও রকম রাখঢাক না করে সেনা অভিযানকেই উত্তরপ্রদেশে ভোট-যুদ্ধ জয়ের প্রধান হাতিয়ার করছে বিজেপি। দলের শীর্ষ নেতারা জানাচ্ছেন, সভাপতি অমিত শাহ মনে করেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক-এ সেনা সাফল্য পেলেও নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে আক্রমণের সিদ্ধান্তটি ‘রাজনৈতিক’।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৬
Share: Save:

আর ঠারেঠোরে নয়। কোনও রকম রাখঢাক না করে সেনা অভিযানকেই উত্তরপ্রদেশে ভোট-যুদ্ধ জয়ের প্রধান হাতিয়ার করছে বিজেপি। দলের শীর্ষ নেতারা জানাচ্ছেন, সভাপতি অমিত শাহ মনে করেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক-এ সেনা সাফল্য পেলেও নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে আক্রমণের সিদ্ধান্তটি ‘রাজনৈতিক’। আর সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার হিম্মত দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভোটের ময়দানে এটাই এখন বিজেপির সেরা অস্ত্র।

স্বাভাবিক ভাবেই ভোটের প্রচারে উন্নয়নের প্রসঙ্গ এতে পিছনের সারিতে চলে যাবে। অথচ ২০১৪-র লোকসভা ভোটে মোদীর উন্নয়নের ডাককে সামনে রেখেই উত্তরপ্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে ৭১টি নিজেদের ঝুলিতে পুরেছিলেন অমিতরা। কিন্তু এর পর দিল্লি ও বিহারে উন্নয়নের তাস মোটেই ফল দেয়নি বিজেপিকে। দুই রাজ্যের ভোটে ভরাডুবির সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেও অমিত শাহের বড় ভরসা এখন ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এ।

সাম্প্রতিক কিছু সমীক্ষা বলছে, বিজেপি উত্তরপ্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছাকাছি পৌঁছতে পারে। দু’নম্বরে থাকতে পারে মায়াবতীর দল। বিজেপির নেতারা জানাচ্ছেন, দলের সভাপতি মনে করেন এর চেয়ে অনেক বড় সাফল্য অপেক্ষা করছে তাঁদের জন্য। কারণ, ওই সব সমীক্ষা হয়েছিল ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর আগে। তার পরে মোদীর নেতৃত্ব ও বিজেপির প্রতি মানুষের আস্থা অনেক বেড়ে গিয়েছে। যে আস্থার অনেকটাই অবশ্য তৈরি হয়েছে জাতীয়তাবাদ ও উন্নয়নের প্রশ্নেই। দলের নেতাদের অমিত জানিয়েছেন, দেশের উন্নয়ন অবশ্যই জাতীয়তাবাদ। দেশের নিরাপত্তা আরও বড় জাতীয়তাবাদ। তাই সেটিকে পুঁজি করেই ক্ষমতা দখলে ঝাঁপাতে হবে উত্তরপ্রদেশে।

‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নিয়ে বিজেপির এই রাজনীতিতে বিরোধীরা তিতিবিরক্ত। এর মোকাবিলার পথ হাতড়াচ্ছেন তাঁরা। আগামিকাল সংসদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির বৈঠক আছে। সেখানে সেনার পক্ষ থেকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নিয়ে সাংসদদের জানানোর কথা ছিল। কিন্তু কংগ্রেস সেখানে চেপে ধরতে পারে বুঝে শেষ মুহূর্তে বৈঠকের আলোচ্যসূচিই বদলে ফেলা হয়েছে।

গত কাল প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর দাবি করেছেন, ২০১১-তে ৩ পাক সেনার মুন্ডু কেটে এনেছিলেন ভারতীয় জওয়ানরা। সেটা মোটেই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ছিল না। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ প্রথম বার হয়েছে মোদীর জমানায়। এই সূত্রেই সংসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য কংগ্রেসের সাংসদ অম্বিকা সোনি সরকারকে চেপে ধরতে চেয়েছিলেন বৈঠকে। ভারতীয় সেনা ২০০৪ থেকে এ পর্যন্ত ক’টা ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করেছে, সেই প্রশ্ন তুলে সরব হওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। কিন্তু বৈঠকের আলোচ্যসূচিই বদলে দেওয়ায় সেটা নিয়েই মুখর এখন কংগ্রেস।

অম্বিকা এ দিন বলেন, ‘‘সাংসদ হিসেবে আমরাও গোপনীয়তার শপথ নিয়েছি। সেনা যদি বিরোধী দলের নেতাদের জানাতে পারে, আমাদের কেন জানাবে না? ইউপিএ আমলে ক’টি ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ হয়েছে, আমাদেরও তা জানা দরকার।’’ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অতীত অভিযানের কথা অস্বীকার করে সেনার মনোবল খাটো করার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেন অম্বিকা। খোদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যে ভাবে আগরা, লখনউয়ে সেনা অভিযানের কুর্নিস নিচ্ছেন, সেনার বাহাদুরি নিয়ে কংগ্রেসের জমানাকে খাটো করছেন, তা নিয়ে সংসদ শুরু হতেই আক্রমণে ঝাঁপাতে তৈরি হচ্ছে বিরোধীরা।

অমিত কিন্তু তা-ও ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-কে সামনে রেখেই মোদীর জয়ধ্বনি তুলতে চাইছেন। বাকি দলগুলি উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী-মুখ ঘোষণা করলেও বিজেপি আপাতত মোদীকে সামনে রেখেই এগোতে চাইছে। গোড়া থেকেই জাত-পাতের ঊর্ধ্বে উঠে হিন্দুভোটকে একজোট করাই লক্ষ্য ছিল অমিতের। কিন্তু দলিত-সংখ্যালঘু নিগ্রহ বিতর্কে বিজেপির ভিত নড়বড়ে হতে শুরু করেছে। তার উপর ‘অচ্ছে দিন’ না আসা নিয়ে প্রতি মুহূর্তে মোদীকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। এই অবস্থায় উন্নয়নের রামধনু-আশাও মানুষের কাছে ফিকে লাগতে পারে। সেটা বুঝেই সেনা অভিযানকে সামনে রেখে জাতীয়তাবাদের হাওয়াকে এত চড়া মাত্রায় নিয়ে যেতে চাইছেন অমিত। যাতে বাকি সব বিতর্ক ধামাচাপা পড়ে যায়। শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, ভোট আসছে পাশের উত্তরাখণ্ডে এবং পাক-সীমান্তে পঞ্জাবেও। সেখানেও এই কৌশল কাজে আসবে বলে আশা করছেন বিজেপি সভাপতি।

হিন্দু-ভোট একজোট করার এই কৌশলের অঙ্গ হিসেবেই বিজয়া দশমীতে লখনউয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস মোকাবিলার কথা বলে বক্তব্যের শুরু ও শেষে বারবার ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান তুলেছেন। মোদীর মুখে এত দিন পর ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি ফিরে আসায়, তা নিয়েও বিরোধীরা এখন আক্রমণ শানাচ্ছেন। যা নিয়ে মোটেই বিচলিত নয় বিজেপি। এ নিয়ে দলের এক শীর্ষ নেতার সরস প্রশ্ন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর মুখে কি ওঁরা ‘জয় রাবণ’ শুনতে চাইছিলেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Amit shah Uttar pradesh Surgical attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE