Advertisement
১৭ মে ২০২৪

আমরা কি সবাই প্রতিবন্ধী! প্রশ্নে থতমত মন্ত্রী থাওরচন্দ

প্রশ্নটি শুনেই থতমত খেলেন মন্ত্রীমশাই। শীতের দিল্লিতে মাথায় শিমলা টুপি, কানে হেডফোন নিয়ে রাজ্যসভায় বসে আছেন। হঠাৎই কানে এল, মন্ত্রীমশাই কি আমাদের সকলকেই প্রতিবন্ধী বানিয়ে দিলেন!

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৩৮
Share: Save:

প্রশ্নটি শুনেই থতমত খেলেন মন্ত্রীমশাই।

শীতের দিল্লিতে মাথায় শিমলা টুপি, কানে হেডফোন নিয়ে রাজ্যসভায় বসে আছেন। হঠাৎই কানে এল, মন্ত্রীমশাই কি আমাদের সকলকেই প্রতিবন্ধী বানিয়ে দিলেন!

ব্যাপারটি কী হতে চলেছে, ঠাওর করতে পারলেন না থাওরচন্দ গহলৌত। সংসদে তুমুল হট্টগোলের মধ্যে তাঁর মন্ত্রকের প্রতিবন্ধীদের অধিকার সংক্রান্ত বিলটি পাশেই সন্ধি হয়েছে বিরোধীদের সঙ্গে। তবে কি দু’বছর ধরে বিলের উপরে ঘুরতে থাকা অনিশ্চয়তার মেঘ এ যাত্রাতেও কাটল না?

এ সব সাত-পাঁচ ভাবার আগেই প্রথম হামলাটি এল সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির কাছ থেকে। তার সঙ্গে পাল্লা দিলেন মায়াবতীর দলের সতীশ মিশ্র। বিলে লেখা আছে— যাঁর ভাবনাশক্তি, মুডেও যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে, তিনি ‘মানসিক অসুস্থ’। আর সমস্যা নিরসনে, যুক্তি পেশে সমস্যা থাকলে তাঁকে বলা হবে বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে প্রতিবন্ধী বা ‘ইন্টেলেকচুয়ালি ডিজএব্‌লড’।

সীতারামের প্রশ্ন, বিলেই যদি এমন সংজ্ঞা থাকে, তা হলে তো গোটা সংসদই এর আওতায় চলে আসবে! শাসক বিরোধীদের বলবে মানসিক অসুস্থ অথবা প্রতিবন্ধী। চেয়ারে তখন ছিলেন ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়েন। সীতারাম তাঁকে বলেন, ১৯৩টি সংশোধন পেশ করতে করতে নিশ্চয়ই আপনার ‘মুড’ ঠিক নেই। তা হলে কী আপনিও? এখন নগদ হাতে পেতে লোকের নাজেহাল অবস্থা। তা হলে তাদেরও তো যে কোনও
সময় বলা যেতে পারে মানসিক অসুস্থ। সীতারাম-সতীশ প্রশ্ন করেন— মানসিক অসুস্থ কে, সেটা কে ঠিক করবে?

থাওরচন্দ তখনও থতমত। আমতা আমতা করে বললেন, আসলে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী সব বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে এই সংজ্ঞা স্থির করেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের কনভেনশনও মানা হয়েছে। ফের ধেয়ে এল প্রশ্ন, ‘‘কিন্তু ঠিক কে করবে?’’ মন্ত্রী তখন অফিসার গ্যালারির দিকে তাকাচ্ছেন। আমলারা যদি লিখে পাঠান ঠিক জবাবটি। এই করেই কেটে গেল বেশ কয়েক মিনিট। তার পর মন্ত্রীর হাতে এল জবাব। সেটি দেখে অভয় দিলেন, মেডিক্যাল বোর্ডই ঠিক করবে, কে প্রতিবন্ধী। সেই উত্তরে মোটের উপর সন্তুষ্ট হয়ে লড়াই ছাড়লেন বিরোধীরা।

দেশের প্রায় তিন কোটি প্রতিবন্ধীর স্বার্থে করা যে বিলটি কংগ্রেস আমল থেকে আটকে আছে, সেটি পাশ করাতে আজ বিরোধীরা বেনজির ঐকমত্য দেখাল। ১৯৯৫ সালের খসড়া বিলটিতে মাত্র ৭টি বিষয়ে প্রতিবন্ধকতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। সেটিকে বাড়িয়ে ২১ করা হয়েছে। যার মধ্যে সেলিব্রাল পলসি, হিমোফিলিয়া, থ্যালাসেমিয়া, পার্কিনসন রোগী এমনকী অ্যাসিডে আক্রান্তকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষা ও চাকরিতে ৪ শতাংশ সংরক্ষণও থাকবে। সরকারি ভবনগুলির পাশাপাশি বেসরকারি ভবনেও অনায়াস
যাতায়াতের সুবিধা দেওয়া হবে। প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে বৈষম্যের শাস্তি হবে দু’বছর পর্যন্ত জেল ও ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর সাধারণ সম্পাদক কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, প্রতিবন্ধীদের ধারাবাহিক আন্দোলনেই রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হল। বাকি দু’দিন অধিবেশনের মধ্যে এ’টি লোকসভায় পাশ করানোর দাবি জানান তিনি।

অধিকার রক্ষায়

• বৈষম্যের শাস্তি দু’বছর পর্যন্ত জেল, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা

• শিক্ষা ও চাকরিতে ৪% সংরক্ষণ

• সেলিব্রাল পালসি, হিমোফিলিয়া, থ্যালাসেমিয়া, পার্কিনসন রোগ এমনকী অ্যাসিডে আক্রান্তও প্রতিবন্ধী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Disabilities Bill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE