Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সময় নষ্টের রাজনীতি জিএসটি বিল নিয়েও

জমির পর এ বার জিএসটি! সংস্কারের উল্টোরথে চেপে পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি) বিলেও এ বার বাধা দিতে নামলেন সনিয়া গাঁধী। কেন্দ্রীয় অথর্মন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ লোকসভায় বিলটি পেশ করলে তড়িঘড়ি তা পাশ করানোর ক্ষেত্রে আপত্তি জানান সনিয়া। নরেন্দ্র মোদীর সরকার ইউপিএ জমানার জমি নীতি থেকে অনেকটাই সরে এসে নতুন জমি বিল এনেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১২
Share: Save:

জমির পর এ বার জিএসটি!

সংস্কারের উল্টোরথে চেপে পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি) বিলেও এ বার বাধা দিতে নামলেন সনিয়া গাঁধী। কেন্দ্রীয় অথর্মন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ লোকসভায় বিলটি পেশ করলে তড়িঘড়ি তা পাশ করানোর ক্ষেত্রে আপত্তি জানান সনিয়া। নরেন্দ্র মোদীর সরকার ইউপিএ জমানার জমি নীতি থেকে অনেকটাই সরে এসে নতুন জমি বিল এনেছে। কংগ্রেস সেই বিল রুখতে মরিয়া। কিন্তু জিএসটি বিলের ক্ষেত্রে বড় কোনও পরিবর্তন করেনি সরকার। সুনির্দিষ্ট ভাবে বিলের কোন ধারাটি নিয়ে কংগ্রেসের আপত্তি, সে ব্যাপারেও গোল গোল কথা বলছেন আনন্দ শর্মারা। ঘুরে ফিরে তাঁদের দাবি একটিই, সামান্য হলেও আগেরটির থেকে এই বিলে পরিবর্তন করা হয়েছে। এটি তাই নতুন বিল। সংসদে পাশ করানোর আগে তা স্থায়ী কমিটির বিবেচনার জন্য পাঠানো হোক। সরকার সেই দাবি না মানায় আজ লোকসভা থেকে ওয়াক আউট করেন সনিয়া ও অন্য বিরোধীরা।

কংগ্রেসের আপত্তিটা আসলে কোথায়? দলের এক নেতার কথায়, ‘‘সংখ্যার দাপটে বিরোধীদের তোয়াক্কা না করার যে হাবভাব দেখাচ্ছেন মোদী, তারই জবাব দিতে চান সনিয়া।’’ অন্য সূত্রের মতে, আসলে আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচিতে মোদী সরকারকে সফল হতে না দেওয়াটাই সনিয়ার লক্ষ্য। সংস্কারের ঢিমে গতি নিয়ে ইতিমধ্যেই সরকারের উপর আস্থা হারাতে শুরু করেছেন শিল্পপতি ও বিদেশি লগ্নিকারীদের একটি অংশ। তাঁদের অনাস্থায় কংগ্রেস অক্সিজেন জোগাতে চায় সরকারের কাজকর্ম রুখে দিয়ে। এর আগে কয়লা খনি বণ্টনের বিলের ক্ষেত্রেও কংগ্রেস দেরি করানোর একই কৌশল নিয়েছিল। কিন্তু সে বারে বিরোধী ঐক্য টেকেনি। তৃণমূল ওই বিলে সমর্থন করায় বিল পাশ হওয়া ঠেকাতে পারেনি কংগ্রেস।

কংগ্রেস এখন জিএসটি বিল নিয়ে দেরি করানোর কৌশল নিলেও অতীতে তাদের সরকারই রাজ্যওয়াড়ি জটিল কর কাঠামোর অবসান ঘটিয়ে গোটা দেশে অভিন্ন একটি সরল কর কাঠামো চালু করার জন্য আইন করতে চেয়েছিল। কারণ কর কাঠামো সহজ হলে এ দেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে দেশি-বিদেশি লগ্নিকারীদের আগ্রহ বাড়বে। তখন বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি, বিশেষ করে মোদী-শাসিত গুজরাতই সেই প্রস্তাবে জোরালো আপত্তি জানায়। ফলে ইউপিএ জমানায় বিলটি পাশ করাতে পারেননি মনমোহন সিংহ। দৃশ্যত আক্রমণাত্মক সনিয়া আজ সে প্রসঙ্গও তোলেন। জেটলির উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনারাই এক সময় এতে বাধা দিয়েছিলেন।’’ শুধু জিএসটি নয়, খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি থেকে বিমা বিল সবেতেই আপত্তি জানিয়েছিল মোদী-জেটলির দল।

কংগ্রেস কি তবে স্রেফ বদলা নিতেই বিজেপিকে তাদের রাজনীতি সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিতে চাইছে? কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলছেন, ‘‘তা নয়! কংগ্রেসই জিএসটি-র প্রস্তাব দিয়েছিল। নীতিগত ভাবে কংগ্রেসের আপত্তি নেই এতে। কিন্তু সরকার যখন আগের বিলে বদল এনে কৃতিত্ব নিতে চাইছে, তখন সেটি স্থায়ী কমিটিতে আরও এক বার আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘জিএসটি পাশ করাতে মোদী যখন ৪ বছর অপেক্ষা করতে পারলেন, তখন আরও একটু ধৈর্য করতে ক্ষতি কী?’’

আগামী বছরের ১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করতে চাইছে সরকার। বিজেপির আশঙ্কা, সরকার যাতে সেই লক্ষ্য পূরণ না করতে পারে সেটাই সুনিশ্চিত করতে চাইছে কংগ্রেস। বিরোধীদের নরম করতে জেটলি আজ বলেন, ‘‘আমি তো বলছি, জিএসটি প্রস্তাব করে কংগ্রেস ভাল কাজ করেছিল। আমরা সেই ভাল কাজই এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছি। কংগ্রেসের এ জন্য খুশিই হওয়া উচিত।’’ কিন্তু জেটলি এ সব বলার আগেই সনিয়া ওয়াকআউট করেন। কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, এনসিপি-র মতো বিরোধী দলগুলির সাংসদরাও ওয়াক আউট করেন।

জিএসটি চালু করতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তাই এই বিল পাশ করাতে সংসদের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন। লোকসভায় বিলটি পাশ করাতে সরকারের অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বিরোধীরা এককাট্টা থাকলে রাজ্যসভায় তা পাশ করানো কার্যত সম্ভব নয়। তা ছাড়া বিলটি কার্যকর করার আগে পঞ্চাশ শতাংশ রাজ্যের বিধানসভাতেও এটি পাশ করাতে হবে। কংগ্রেস বা আঞ্চলিক দলগুলি বেঁকে বসলে তা সম্ভব নয়। সরকারের এই সঙ্কটের জায়গাটিতেই বিজেপিকে চেপে ধরতে চাইছে কংগ্রেস।

কয়লা খনি বণ্টন বিলের ক্ষেত্রে দেরি করানোর একই কৌশল ভেস্তে গিয়েছিল। কংগ্রেস তাই তেমন একটা আত্মবিশ্বাসী নয় এ বার। তা ছাড়া বিষয়টি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীতীশ কুমার, জয়ললিতা, মুলায়ম সিংহ, নবীন পট্টনায়কের মতো আঞ্চলিক নেতাদের উপরেও অনেকাংশে নির্ভরশীল। সরকার যদি এঁদের বুঝিয়ে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে, কংগ্রেস তবে একঘরে হয়ে পড়বে। আগামী মঙ্গলবার জিএসটি নিয়ে ফের আলোচনা হবে লোকসভায়। তার আগে আঞ্চলিক দলগুলির নেতানেত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় কংগ্রেস-বিজেপি দুই শিবিরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE