Advertisement
E-Paper

কাশ্মীর নিয়ে নওয়াজও সরব, সুর চড়াল ভারত

প্রথমে বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতি। তার পরে খোদ পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। শেষে ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে উদ্বেগ জানানো।

নিজস্ব সংবাদদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০৩:২৬
মুখোমুখি পুলিশ ও বিক্ষোভকারীরা। সোমবার শ্রীনগরে। ছবি: এএফপি

মুখোমুখি পুলিশ ও বিক্ষোভকারীরা। সোমবার শ্রীনগরে। ছবি: এএফপি

প্রথমে বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতি। তার পরে খোদ পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। শেষে ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে উদ্বেগ জানানো। কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে কূটনীতির সুর ধাপে ধাপে চড়িয়ে প্রায় নজিরবিহীন পর্যায়ে নিয়ে গেল পাকিস্তান। সার্ক গোষ্ঠীর বৈঠকের আগে জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুতে জ্বলে ওঠা আগুনে যে পাকিস্তান হাওয়া দিতে চায়, তা এখন নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে বেশ স্পষ্ট।

পাকিস্তানের কৌশল বুঝে আসরে নেমে পড়েছে ভারতও। প্রধানমন্ত্রী নির্বচিত হওয়ার পর থেকেই নরেন্দ্র মোদী যাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত সখ্য গড়ে তুলেছেন, সেই নওয়াজ শরিফও এক হিজবুল জঙ্গির মৃত্যু নিয়ে মুখ খোলায় সুর চড়াচ্ছে দিল্লি। সেই সঙ্গে দেশের সব রাজনৈতিক দল যাতে কাশ্মীর প্রসঙ্গে এক সুরে কথা বলে সে জন্যও উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র।

জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির সঙ্গে আগেই কথা বলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। এ দিন ক‌ংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী, ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লা ও সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ফোন করেন লোকসভা ও রাজ্যসভায় কংগ্রেসের নেতা যথাক্রমে মল্লিকার্জুন খড়্গে ও গুলাম নবি আজাদকেও। কাশ্মীরের অবস্থা কী, এবং কী পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বুরহান ওয়ানির মৃত্যু হয়েছে, বিরোধী নেতাদের তা বুঝিয়ে বলেছেন রাজনাথ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে সব দলই। তবে একই সঙ্গে বিরোধীদের পরামর্শ, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ উচিত নয়। বরং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা শুরুর চেষ্টা করুক কেন্দ্র।

এর পাশাপাশি ইসলামাবাদকে কড়া বার্তা দিতে বিদেশ মন্ত্রক আজ বলেছে, ‘‘বুরহান ওয়ানি নিয়ে বিবৃতি দেখেই বোঝা যাচ্ছে পাকিস্তান এখনও সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের নাক গলানো উচিত নয়।’’ কেনিয়া সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রীও পাকিস্তানের নাম না করে বলেছেন, ‘‘যারা জঙ্গিদের আশ্রয় দেয় ও সন্ত্রাস নিয়ে রাজনীতি করে, তাদেরও নিন্দা করা উচিত।’’ প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে আগামিকালই বৈঠকে বসবেন।

হিজবুল মুজাহিদিন নেতা বুরহানের মৃত্যুর পরে কাশ্মীরের নানা প্রান্তে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। আজ নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে। সংঘর্ষ থামার কোনও লক্ষণ নেই। বরং খাস শ্রীনগরের নওহাট্টা এলাকায় সিআরপিএফের কনভয়ে গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছেন ১২ জন জওয়ান। বিজবেহরা এলাকায় আবার বাহিনীর বিরুদ্ধেই হাসপাতালে ঢুকে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছে। কুলগামের বেহিবাগে ধৃত বিক্ষোভকারীদের মুক্তির দাবিতে এক পুলিশ অফিসারকে পণবন্দি করে রেখেছে জনতা।

কাশ্মীরে এই হিংসায় পাকিস্তানি মদত রয়েছে‌ বলে গোড়া থেকেই জানাচ্ছিলেন গোয়েন্দা কর্তারা। এ দিন পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে একটি সভা করেছেন লস্কর-ই-তইবা প্রধান হাফিজ সইদ ও হিজবুল মুজাহিদিন নেতা সৈয়দ সালাউদ্দিন। ওই সভায় হাফিজ বলেছেন, ‘‘এক বুরহানের মৃত্যুতে অনেক বুরহান জন্ম নেবে।’’

কিন্তু জঙ্গি নেতার মৃত্যুতে কূটনৈতিক স্তরে এমন সক্রিয়তার কথা মনে করতে পারছেন না কেউই। গত কাল পাক বিদেশ মন্ত্রক সরাসরি বিবৃতি দিয়ে বুরহান ও অন্য ‘নির্দোষ’ কাশ্মীরিদের হত্যার জন্য ভারতের কড়া সমালোচনা করে। আজ প্রায় নজিরবিহীন পদক্ষেপ করেছে ইসলামাবাদ। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দফতর থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘‘ভারতীয় বাহিনীর হাতে কাশ্মীরি নেতা বুরহান ওয়ানি ও সাধারণ মানুষের হত্যার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী গভীর ভাবে দুঃখিত।’’ তার পরে আবার ভারতীয় হাইকমিশনার গৌতম বাম্বাওয়ালেকে ডেকে কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তানের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন সে দেশের বিদেশসচিব ইজাজ আহমেদ চৌধুরি।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, মোদীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সখ্য বাড়িয়ে শান্তি প্রক্রিয়া চালাতে গিয়ে দেশে শত্রু বাড়িয়েছেন নওয়াজ। পাক সেনাবাহিনী ও মৌলবাদীরা তাঁর উপরে খাপ্পা। পাক সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ সরকারের ভারত নীতি স্থির করার ক্ষেত্রে প্রভাব খাটাচ্ছেন বলে জানতে পেরেছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। আজ আবার সে দেশের প্রধান বিরোধী দল পিপিপি-র নেতা বিলাবল ভুট্টোও বলেছেন, ‘‘শরিফ মোদীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে গিয়ে কাশ্মীরকে বিসর্জন দিচ্ছেন।’’ বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরে সুর চড়িয়ে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে চাইছেন শরিফ। আবার অগস্টে সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক। সেখানে সন্ত্রাস প্রশ্নে ভারতের চাপ সামলাতে কাশ্মীরের এই পরিস্থিতিকে ব্যবহার করতে চায় ইসলামাবাদ।’’ সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক দরবারে কাশ্মীর নিয়ে আর এক দফা ভারত-বিরোধী প্রচারের সুযোগও পাচ্ছে তারা। সে জন্যই গত কাল কৌশলে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাব মেনে কাশ্মীরে গণভোটের প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে তুলেছে পাকিস্তান। আজ নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতরে দক্ষিণ সুদানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মহাসচিব বান কি মুন। তার পরেই এক পাকিস্তানি সাংবাদিক মন্তব্য করেন, ‘‘কাশ্মীরের পরিস্থিতিকে তো মহাসচিব গুরুত্বই দিচ্ছেন না?’’ জবাবে মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, ‘‘এটা ভুল কথা। কাশ্মীর নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন।’’ ভারতীয় কূটনীতিকদের মতে, এ থেকেই প্রমাণ হয় আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিতে পেরেছে ইসলামাবাদ।

বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘শান্তি প্রক্রিয়াটা ফের ঠান্ডা ঘরেই চলে গেল বলে মনে হচ্ছে।’’

Kashmir India warns Nawaz Sharif Syed Salahudeen সৈয়দ সালাউদ্দিন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy