Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সংস্কৃতিতেই মিলল শিলচর

৭৫ বছর পেরিয়ে গেল অধরচাঁদ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সেই উপলক্ষে বছরভর নানা অনুষ্ঠান করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্ররাও এগিয়ে এসেছেন। পরিকল্পনা করেছেন ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের।

অমৃতা ভৌমিক
শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৫৪
Share: Save:

৭৫ বছর পেরিয়ে গেল অধরচাঁদ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সেই উপলক্ষে বছরভর নানা অনুষ্ঠান করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্ররাও এগিয়ে এসেছেন। পরিকল্পনা করেছেন ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের। কার্যত তারই অঙ্গ হিসেবে দু’দিনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হল বঙ্গভবনে।

শেষ দৃশ্যটা এখনও চোখে লেগে রয়েছে বলে সেখান থেকেই শুরু করি! এক মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন জনাপঞ্চাশেক। তাঁদের সবার একটিই পরিচয়, অধরচাঁদের প্রাক্তন ছাত্র। এক দিকে ছিলেন অপূর্বকুমার পালিত। তিনি একাধারে প্রাক্তন ছাত্র, এই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির সভাপতি। তিনি প্রথম ব্যাচের ছাত্র। আবার সদ্য গোঁফ গজানো বিনায়কও রয়েছেন ওই ফ্রেমেই। ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব শেখর দেবরায়ও। আবেগ-উচ্ছ্বাসে প্রাক্তনীরা গাইলেন ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে...’। আর এ ভাবেই শেষ হল প্ল্যাটিনাম জয়ন্তীর বছরভর অনুষ্ঠান।

সমাপ্তি-পর্বের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে সঙ্গীত শিল্পী প্রবুদ্ধ রাহা প্রেক্ষাগৃহ ভর্তি দর্শককে দীর্ঘসময় ধরে রেখেছিলেন। তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরে যেন মন্ত্রমুগ্ধ ছিলেন সবাই। তাঁর পরেই মঞ্চে ওঠেন বাচিক শিল্পী জগন্নাথ বসু ও উর্মিমালা বসু। শিলচরে তাঁদের যে একটি বড়সড় অনুরাগী-গোষ্ঠী রয়েছে, সে দিন তা স্পষ্ট ধরা পড়ে। বঙ্গভবনে উপস্থিত বাকিরাও তাঁদের বাক-ভঙ্গিমায় একই গোষ্ঠীভুক্ত হয়ে পড়েন। ছোট-বড় সব বয়সী পুরোদমে মজে গিয়েছিলেন জগন্নাথ-উর্মিমালার শ্রুতিনাটকে।

পরদিন একে একে অতুলপ্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলাল ও রজনীকান্তের গান গেয়ে আসর মাতান নুপুরছন্দা ঘোষ। সব শেষে দেশাত্মবোধক গানের একটি কোলাজ পরিবেশন করে স্তব্ধ করে দেন দর্শকদের। আগামীদিনে শিলচরে এসে কর্মশালা করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন নুপুরছন্দা। দারুন সব গান উপহার দিলেন শিল্পী শমীক পালও।

প্রাক্তনীদের উদ্যোগে দু’দিনের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ছিল একেবারে সাজানো-গোছানো। গান-বাজনার সঙ্গে কৃতী ছাত্রদের সম্বর্ধনাও জানানো হয়। প্রয়াত গোবিন্দনারায়ণ ঘোষ এবং প্রয়াত দ্বিজেন্দ্রলাল দাস পুরকায়স্থ স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয় স্কুলের কৃতী ছাত্রদের। বিশেষ ভাবে সম্বর্ধিত হন এভারেস্ট বিজয়ী মিজোরামের লাল রিনকোয়াঙ্গি। পরে অসমঞ্জ বিশ্বাস, সুশান্ত ভট্টাচার্য, সুব্রত চন্দ্র পাল, সুশীল পাল এবং মনমোহন মিশ্রের মত প্রাক্তনীদের হাতে উন্মোচিত হয় স্মরণিকা।

এ দিন অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রাক্তনীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক অসমঞ্জ বিশ্বাস। এর পরই প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন শিলচর রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমের সচিব স্বামী সত্যস্থানন্দ মহারাজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব ছিলেন মনোজ দেব, বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য ও দেবযানী ভট্টাচার্য।

এই দু’দিন ধরে দর্শক-শিল্পীর মেলবন্ধনে যাঁরা বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। মলয় দাস ও শান্তনু বিশ্বাস ছিলেন তবলায়। সিন্থেসাইজারে দেবাশিস সাহা ও অরূপকুমার দত্ত। গিটারে গৌতম চট্টোপাধ্যায় ও প্যাডে ছিলেন স্থানীয় শিল্পী জুয়েল চৌধুরী।

অনুষ্ঠান সার্থক করে তুলতে প্রাক্তনীদের সঙ্গে ছিলেন স্কুলের বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছিল বর্তমান ছাত্ররাও। সচরাচর স্কুলের এ ধরনের জয়ন্তীতে শুধু বর্তমান ছাত্র এবং তাদের অভিভাবকরাই থাকেন দর্শকাসনে। আর থাকেন হাতেগোনা কয়েকজন প্রাক্তনী। অধরচাঁদ স্কুলের অনুষ্ঠান উপভোগে হাজির ছিলেন শহরের বিভিন্ন অংশের মানুষ, যাঁদের সঙ্গে এই স্কুলের সেই অর্থে কোনও সম্পর্কই নেই। তবে তাঁরা মুহূর্তে সম্পর্ক গড়ে নিয়েছিলেন শিল্পীদের সঙ্গে। তাই জগন্নাথ বসু যখন জিজ্ঞেস করেন, ‘‘রাত ১০টা তো পেরিয়ে গেল। বাড়ি যাবেন না আপনারা?’’ জবাব আসে, আরও কটা শুনে যাই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cultural Programmes Silchar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE