ধাক্কা খেল পঠানকোট কাণ্ডের তদন্ত। সেই সঙ্গে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আবার পৌঁছে গেল বিশ বাঁও জলে।
তবে হাল ছাড়ছেন না দু’দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব। আগামি মার্চের শেষে ওয়াশিংটন ডিসি-তে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। আন্তর্জাতিক পরমাণু সম্মেলনে যোগ দিতে এই দুই রাষ্ট্রনায়কই যাচ্ছেন মার্কিন মুলুকে। আমেরিকার মাটিতে ওই বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দু’টি দেশের মধ্যে সামগ্রিক শান্তি আলোচনা শুরু করার ফের একটা চেষ্টা হবে। স্বাভাবিক ভাবেই এর পিছনে থাকবে হোয়াইট হাউসের সক্রিয় সহযোগিতা। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, তবে এর মধ্যে যদি ফের নাশকতার ঘটনা ঘটে তা হলে অবশ্যই সবার সমস্ত প্রয়াস মাঠে মারা যাবে, যেমনটা বারবার যাচ্ছে।
পঠানকোট কাণ্ডে দোষীদের শাস্তি দেওয়ার প্রশ্নে যথেষ্ট রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করেছিল নওয়াজের সরকার। প্রাথমিক ভাবে জৈশ-ই-মহম্মদের কিছু ঘাঁটিতে পাক সেনার হানা দেওয়ার খবরও প্রচারিত হয়েছিল সে দেশের সংবাদমাধ্যমে। এ ব্যাপারে যে পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সেনাবাহিনী তথা আইএসআই একই সঙ্গে হাঁটছে, জানানো হয়েছিল সে কথাও। কিন্তু সাউথ ব্লককে যথেষ্ট হতাশ করে গতকালই সেই ‘সিট’ জানিয়ে দিয়েছে যে এমন কোনও তথ্য তদন্তে উঠে আসেনি যা থেকে সিদ্ধান্তে আসা যায় যে জৈশ নেতা মাসুদ আজহারই এই নাশকতার প্রধান মস্তিষ্ক। এক কথায় ভারতের দেওয়া তথ্যকে কার্যত ভিত্তিহীন বলেই উড়িয়ে দিচ্ছে রাওয়ালপিন্ডি।
পাশাপাশি, গতকাল থেকে শুরু হয়েছে ডেভিড কোলম্যান হেডলির জবানবন্দি। ওই জবানবন্দি থেকে আবারও স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে পাক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবা এবং পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই হাত মিলিয়ে মুম্বইয়ে আক্রমণ চালিয়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নতুন নথি তৈরি করে পাকিস্তানকে দেবে। হেডলির এই জবানবন্দির ফলে এক দিকে যেমন পাক সন্ত্রাসবাদীদের ভারত বিরোধী ভূমিকা আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে, তেমনই দু’দেশের সম্পর্কে কিছুটা স্নায়ু টান টান ভাব তৈরি করছে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। পঠানকোট তদন্ত নিয়ে নতুন করে অগ্রসর হওয়ার প্রশ্নে যা যথেষ্ট নেতিবাচক।
সাউথ ব্লকের অস্বস্তি আরও কিছুটা বাড়িয়ে গত কাল হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ ওমর ফারুখ এবং আজ গিলানির সঙ্গে বৈঠক করেছেন নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত আব্দুল বাসিত। যদিও হুরিয়ত নেতারা বাসিতের সঙ্গে আলোচনায় দু’দেশের মধ্যে প্রস্তাবিত বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছেন, কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ছিলা টানটান পরিস্থিতিতে হুরিয়ত-পাকিস্তান বৈঠক যে আদৌ ইতিবাচক ঘটনা নয় এমনটাই মনে করছেন বিদেশমন্ত্রকের কর্তারা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গেই আগ বাড়িয়ে পাক রাষ্ট্রদূতের বৈঠকের একটি ঘটনাতেই কিন্তু নয়াদিল্লির তরফ থেকে ভেস্তে দেওয়া হয়েছিল ভারত-পাক বিদেশসচিব পর্যায়ের আলোচনা। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, সে সময় অবশ্য মোদী সরকারের অনুমতি না নিয়েই হুরিয়তদের সঙ্গে বৈঠকের কারণেই কড়া পদক্ষেপ করেছিল সাউথ ব্লক। এ বার যা করা হচ্ছে, তা কিন্তু আগে থেকে ভারত সরকারকে জানিয়েই করা হচ্ছে।
কবে দু’দেশের বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিদেশমন্ত্রক সূত্রে জানানো হচ্ছে যে পরিস্থিতির চাপে এই বৈঠক বাতিল করে দেওয়া হবে না। কারণ মোদী এবং শরিফ, দু’জনেই প্রবল প্রয়াস করছেন যাতে সীমান্তের দু’দিকের মধ্যে বাণিজ্য-সহ অন্যান্য যোগাযোগ নির্বিঘ্ন হয়। তবে বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক হলেও, ওই বৈঠককে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাবেক আলোচনার সূচনা বলা যাবে না। সন্ত্রাস নিয়ে পাকিস্তানের কাছ থেকে সদুত্তর না পাওয়া পর্যন্ত এবং দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠকে ঐকমত্য তৈরি না-হওয়া পর্যন্ত, কোনও ধারাবাহিক সামগ্রিক আলোচনা শুরু হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy