প্রস্তর-যুগ: উপত্যকায় এই দৃশ্যও এখন রোজকার অভিজ্ঞতা। রয়টার্সের ফাইল চিত্র।
হরতাল ছিল জানতাম। কিন্তু ওটা তো কাশ্মীরে এখন রুটিন। আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়াটা জরুরি। তাই সকালে বেরিয়ে পড়েছিলাম কুপওয়ারার দিকে।
বাটামালুতে বিএসএফের গুলিতে এক যুবকের মৃত্যুর জেরে আজ কাশ্মীরে হরতাল ডেকেছিল হুরিয়ত। কিন্তু তাতে প্রভাব বিশেষ পড়েনি। দোকানপাট, স্কুল কলেজ অবশ্য বন্ধ ছিল। সরকারি বাসও চলেনি তেমন। সকালে একটা টাটা সুমোকে কুপওয়ারা যেতে রাজি করাতে পারলাম।
সুমোর মাঝের আসনে বসেছিলাম আমি, আমার স্ত্রী, আমাদের পাঁচ বছরের ছেলে আর দু’বছরের মেয়ে। সামনে আর পিছনে ছিলেন আরও কয়েক জন যাত্রী। গাড়িতে ওঠার পরে চালক মহম্মদ সাদিকের কাছে জানতে চাইলাম, ‘‘রাস্তার অবস্থা কেমন?’’ হেসে সাদিক বললেন, ‘‘গোলমাল কিছু নেই আজ। রাস্তা ঠিকই আছে বলে শুনেছি।’’
আরও পড়ুন:ধর্মীয় অসহিষ্ণুতায় চারে ভারত! বলছে আন্তর্জাতিক সমীক্ষা
শ্রীনগর থেকে কুপওয়ারা ঘণ্টা তিনেকের রাস্তা। যেতে যেতে ছেলেমেয়ে ঘুমিয়েই পড়েছিল। চোখ বন্ধ করে বসে ঘুম এসে গিয়েছিল আমারও। এক বার চোখ খুলে বুঝলাম বারামুলার তুজের মোড়ের কাছে এসে গিয়েছি। হঠাৎ জানলার কাচে ভীষণ একটা শব্দ। চিৎকার করে উঠলেন চালক ও সামনের আসনে বসা যাত্রী। চমকে উঠে দেখি আমার দিকের জানলার কাচ ভেঙে গিয়েছে কিছুটা। আমার স্ত্রী ততক্ষণে ছেলেমেয়েকে জড়িয়ে ধরেছে। চেষ্টা করছে ওদের আড়াল করার। একটার পর একটা পাথর ছুটে আসতে দেখে আমিও ওদের আড়াল করার চেষ্টা করলাম। ততক্ষণে ঘায়েল হয়েছেন সাদিক। কিন্তু আশ্চর্য স্নায়ুর জোর। স্টিয়ারিংয়ে হাত একটুও কাঁপল না। বরং গতি বাড়িয়ে এগিয়ে চললেন।
কিছু ক্ষণ বাদে আর পাথর আসছে না দেখে বুঝলাম বিপদ আপাতত কেটেছে। জল খেলাম সকলে। থরথর করে কাঁপছে হাত-পা। আত্মীয়ের বাড়িতে পৌঁছে মনে হল আর নড়াচড়ার শক্তি নেই। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙার পরে দেখি ছেলে আমার কাছেই বসে আছে। জিজ্ঞেস করল, ‘‘বাবা, ওরা পাথর ছুড়ছিল কেন?’’ কী জবাব দেব ভেবে পেলাম না। ‘আজাদি’র যোদ্ধারা পাথর ছোড়ার সময়ে শিশুদেরও ছেড়ে কথা বলে না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy