Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জামাইকে আড়াল করে তোপ সনিয়ার

দিনের পর দিন জামাইকে নিয়ে শত অভিযোগের পরেও শাশুড়ি ছিলেন চুপ। কিন্তু এই প্রথম বার জামাই রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে পাল্টা আক্রমণে গেলেন সনিয়া গাঁধী। বললেন, রোজ মিথ্যা অভিযোগ আনার ষড়যন্ত্র চলছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০৩:৫০
Share: Save:

দিনের পর দিন জামাইকে নিয়ে শত অভিযোগের পরেও শাশুড়ি ছিলেন চুপ। কিন্তু এই প্রথম বার জামাই রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে পাল্টা আক্রমণে গেলেন সনিয়া গাঁধী। বললেন, রোজ মিথ্যা অভিযোগ আনার ষড়যন্ত্র চলছে।

সনিয়ার জামাইয়ের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ, ২০০৯-এ অস্ত্র ব্যবসায়ী সঞ্জয় ভান্ডারী রবার্টের নামে একটি ‘বেনামী’ সম্পত্তি কিনেছিলেন। এই প্রসঙ্গে রবার্ট ও তাঁর সচিবের কিছু মেলের আদান-প্রদানের কথা সামনে আনা হচ্ছে। যেখানে বাড়িটি মেরামতির জন্য টাকাপয়সা দেওয়া নিয়ে দু’পক্ষের কথা হয়েছে। লন্ডনের অভিজাত এলাকায় বাড়িটি নাকি এক বছরের মাথাতে বিক্রিও করে দেওয়া হয়েছে। অরুণ জেটলির অধীনে অর্থ মন্ত্রক এখন গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। রবার্টের আইনজীবী অবশ্য সব অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন। তাঁর দাবি, লন্ডনের ওই সম্পত্তি নিয়ে রবার্ট বা তাঁর সচিবের সঙ্গে ওই অস্ত্র ব্যবসায়ীর কোনও লেনদেন হয়নি।

কিন্তু রবার্টকে নিয়ে দীর্ঘদিনের চাপানউতোরে নয়া সংযোজন সনিয়ার আজকের মন্তব্য। এত দিন সনিয়ার জামাইয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে কংগ্রেস দূরত্ব রেখে বলত, রবার্ট বঢরা এক জন ‘প্রাইভেট সিটিজেন’। তিনি কংগ্রেসের সদস্য নন। বড় জোর রবার্টের আইনজীবীর সাফাইকে সামনে রেখে কংগ্রেস মুখপাত্ররা বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করতেন। তবে এক বার প্রিয়ঙ্কা বঢরা তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। বলেছিলেন, যে ভাবে তাঁর পরিবারের উপরে আক্রমণ হচ্ছে, তাতে তিনি ‘ব্যথিত’। কিন্তু জামাইয়ের হয়ে আজ প্রকাশ্যে প্রথম মুখ খুললেন সনিয়া।

আজ নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র রায়বরেলীতে গিয়েছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। মোদী সরকারের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে সেখানে তাঁর কটাক্ষ, সরকারের কাজ নিয়ে যত ঢাক পেটানো চলছে, আগে কখনও তা হয়নি। সনিয়া বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী দেশের প্রধানমন্ত্রী। শাহেনশা নন!’’ এর পরেই রবার্টের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগেরও পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, ‘‘দেশকে কংগ্রেস-মুক্ত করতে চেয়ে রোজ মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। এ সব ষড়যন্ত্র। তদন্ত হলে ‘দুধ কা দুধ, পানি কা পানি’ হয়ে যাবে।’’

বিজেপি সনিয়ার সফরের দিকে আগে থেকেই নজর রাখছিল। দলের মুখপাত্ররা ‘শাহেনশা’ কটাক্ষের জবাব দেওয়ার জন্য তৈরিও ছিলেন। তাঁদের মতে, ইন্দিরা গাঁধীর আমলের জরুরি অবস্থা আর কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রই আসল ‘শাহেনশা’র নমুনা। কিন্তু সনিয়া যে ভাবে রবার্টের পাশে এসে দাঁড়ান, সেটাই বিজেপির হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে। ‘‘এ-তো ষষ্ঠীর আগেই জামাই রবার্টকে উপহার’’— কটাক্ষ করেন বিজেপির এক নেতা।

রবার্ট সম্পর্কে এত দিনের অবস্থান থেকে খোদ দলের নেত্রী সরে আসায় কংগ্রেস নেতারাও থতমত খেয়ে যান। কিছু দিন আগে যন্তর-মন্তরে পোস্টারে সনিয়া-রাহুলের সঙ্গে রবার্টের ছবি নিয়ে দলে অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। তবে আজ কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যা, মোদী সরকার কোনও প্রমাণ ছাড়াই সুকৌশলে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ আনছে। কপ্টার-দুর্নীতি নিয়ে সরাসরি সনিয়াকেও নিশানা করা হয়েছে। এ বার রবার্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভাসিয়ে দিলেও আসল লক্ষ্য সনিয়াই। সে কারণেই তাঁর ক্ষোভ বাইরে বেরিয়ে এসেছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় কংগ্রেস এখন সেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহের যোগাযোগের খবর সামনে এনেছে। দলের অভিযোগ, সঞ্জয় ভাণ্ডারীর সঙ্গে ফোনে কথা এবং এসএমএস চালাচালি হয়েছে সিদ্ধার্থের। জবাব দিয়েছেন সিদ্ধার্থও। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ফোন করা মানেই ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়া নয়। সামাজিক যোগাযোগ।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সনিয়া গাঁধী কি তা হলে এক জন ‘প্রাইভেট সিটিজেন’কেও জনতার প্রতীক বলে মেনে নিচ্ছেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sonia Gandhi Robert Vadra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE