Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বই-বোমায় সন্ত্রস্ত সনিয়া নটবরের বাড়িতে

এক বই বোমার আঘাতে বিপর্যস্ত হয়েছিল দশ নম্বর জনপথ। মাঝে চার মাসের ব্যবধান। আর একটি বোমা মাটিতে পড়ার আগে ত্রস্ত সেই ঠিকানার বাসিন্দা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪২
Share: Save:

এক বই বোমার আঘাতে বিপর্যস্ত হয়েছিল দশ নম্বর জনপথ। মাঝে চার মাসের ব্যবধান। আর একটি বোমা মাটিতে পড়ার আগে ত্রস্ত সেই ঠিকানার বাসিন্দা।

কংগ্রেস সূত্রে খবর, সনিয়া গাঁধী এতটাই উদ্বিগ্ন যে ক’দিন আগে মেয়ে প্রিয়ঙ্কা বঢরাকে নিয়ে দেখা করেন বইয়ের লেখকের সঙ্গে। যাতে বোমাটি আছড়ে পড়ার আগেই সেটির তেজ যতটা সম্ভব কমানো যায়। তাতে কাজ বিশেষ হয়নি বলেই জানাচ্ছে কংগ্রেস নেত্রীর ঘনিষ্ঠ শিবির।

লেখক আর কেউ নন, প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী নটবর সিংহ। ‘ওয়ান লাইফ ইজ নট এনাফ’ নামে নটবর তাঁর আত্মজীবনী লিখছেন। ঘরোয়া আলোচনায় যে বইকে কংগ্রেস নেতারা এখন থেকেই ‘এন-বোমা’ বলতে শুরু করেছেন। কারণ, তাঁরা জানতে পেরেছেন বইটিতে গাঁধী পরিবারের এমন সব হাঁড়ির খবর ফাঁস করতে চলেছেন নটবর, যাতে প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে যেতে পারেন সনিয়া-রাহুল। অগস্ট মাসের গোড়ায় বইটি প্রকাশিত হওয়ার কথা।

সনিয়া-প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে নটবর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি। কিন্তু সূত্রের খবর, নটবর ও তাঁর প্রকাশক বইটি পূর্ব নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ করতে অনড়। পাণ্ডুলিপিতে আর কোনও সংশোধনেও প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী রাজি নন।

নটবর সিংহের সঙ্গে গাঁধী পরিবারের সম্পর্ক নিয়ে এক সময় কংগ্রেসের অনেক নেতা ঈর্ষা করতেন। গাঁধী পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই ১৯৮৪ সালে কংগ্রেসে যোগ দেন নটবর। প্রাক্তন এই কূটনীতিকের সঙ্গে গাঁধী পরিবারের সম্পর্ক এমন ছিল যে তাঁকে ‘আঙ্কল’ বলতেন সনিয়া। তাই কেন্দ্রে প্রথম ইউপিএ সরকার গঠনের সময় নটবরই যে বিদেশমন্ত্রী হতে চলেছেন তা নিয়ে কারও সন্দেহ ছিল না।

কিন্তু নটবরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তাঁর সঙ্গে গাঁধী পরিবারের তিক্ততা চরমে পৌঁছয়। ইরাকের সঙ্গে তেলের বিনিময়ে খাদ্য কাণ্ডে নটবর বিপুল অঙ্কের দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিরোধীরা বিদেশমন্ত্রীর পদ থেকে তাঁকে সরানোর দাবি করেন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও তাঁকে আর মন্ত্রিসভায় রাখতে রাজি হননি।

তখন সংসদের অলিন্দে সরকারের শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীদের হাত ধরে নটবর কান্নাকাটি করলেও চিড়ে ভেজেনি। সনিয়া এতটাই ক্ষুব্ধ হন যে নটবর তাঁর কাছে ইস্তফা পেশ করতে গেলে কংগ্রেস নেত্রী কোনও কথা বলেননি। পরে নটবরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাঁর ছেলেকেও রাজস্থান ভোটে দলের প্রার্থী করা হয়নি। তার পর থেকে সনিয়া-নটবর অনেক বার সংসদের সেন্ট্রাল হলে মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেস সভানেত্রী কখনও তাঁর সঙ্গে কথা বলেননি।

অনেকের মতে, অনেক দিন ধরেই প্রতিশোধ নিতে চাইছিলেন নটবর। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনায় সে কথা অনেক বার বলেছেন তিনি। গাঁধী পরিবারের হাঁড়ির খবর ফাঁস করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন। এ বার সে পথেই এগোচ্ছেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী।

লোকসভা ভোটের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রাক্তন মিডিয়া উপদেষ্টা সঞ্জয় বারুর প্রকাশিত একটি বই নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছিলেন। কারণ, সেই বইয়ে বলা হয়েছিল, সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সনিয়াই নিতেন। মনমোহনের কোনও গুরুত্ব ছিল না। নামেই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। এবার নটবর কী ফাঁস করবেন তা নিয়েই আতঙ্কে রয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। লোকসভা ভোটের পর এমনিতেই বিপর্যস্ত অবস্থা কংগ্রেসের। তার পর নতুন আঘাত এলে আরও বিপাকে পড়বে দল।

ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির সময়ে এক বার সনিয়াকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন প্রাক্তন এই বিদেশমন্ত্রী। তিনি দাবি করেছিলেন, আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তির ব্যাপারে সনিয়া রাজি ছিলেন না। উল্টে সরকারের ওই উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। পরে সনিয়া রাতারাতি কী ভাবে তাঁর মত বদলালেন তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন নটবর।

তাঁর বই সম্পর্কে প্রশ্ন করা কংগ্রেসের এক শীর্ষ সারির নেতা আজ জানান, নটবর যে রণে ভঙ্গ দেবেন না তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। এক বার বইটি প্রকাশ হয়ে গেলে কংগ্রেসের বিশেষ কিছু করার থাকবে না। দলীয় তরফে হয়তো এটাই দাবি করা হবে যে নটবর প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ভ্রান্ত তথ্য জানাচ্ছেন। এর কোনও ভিত্তি নেই!

বারুর বই প্রকাশের পর ঠিক একই ধরনের বিবৃতি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে অস্বস্তি এড়ানো গিয়েছিল কি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE