বছর শেষের রাতে কে কোন পার্টিতে যাবে, সেই জল্পনা আপাতত জলে। বন্ধুদের আড্ডায় খাদ্য-পানীয় কী থাকবে, তা নিয়ে তর্কও থমকে গিয়েছে।
আপাতত সব নজর ফের তাঁর দিকে। বর্ষশেষের রাতে টিভির পর্দায় ফিরছেন নরেন্দ্র মোদী। ফের জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
শেষ বার, ৮ নভেম্বর রাত ৮টায় তিনি হঠাৎই টিভি-র পর্দায় উদয় হয়ে এক ধাক্কায় ৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিল করে দিয়েছিলেন। নোট বাতিলের সেই সিদ্ধান্ত নিয়েই আজ অবধি গোটা দেশ তোলপাড়।
আজ মোদী সরকারের শীর্ষ সূত্রে জানানো হয়েছে, ৩১ ডিসেম্বরের সম্ভবত সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ ফের জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দেবেন মোদী। ‘মিত্রোঁ’ ডাক দিয়ে বছরশেষের সন্ধ্যায় তিনি কী বলবেন, তা নিয়ে সব মহলে জল্পনা-উৎকণ্ঠা-উৎসাহ এমনকী উদ্বেগও। হইচই ফেসবুক-টুইটারেও। কেউ বলছেন, এ বার সোনায় হাত পড়বে। কেউ বলছেন, বেনামি সম্পত্তিতে। কারও রসিকতা, ওই দিন টিভি-তে চোখের জল ফেলবেন মোদী! কেউ বলছেন, পানভোজনের রাতে সুরাপানই না নিষিদ্ধ হয়ে যায়!
জাতির উদ্দেশে ফের বক্তৃতার আগে মোদী এ দিন এক টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, কোনও ব্যক্তিগত ফায়দা বা রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য তিনি নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেননি। কালো টাকা, জাল নোট বা সন্ত্রাসে আর্থিক মদত— সব ক্ষেত্রেই নোট বাতিলের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। পাশাপশি তাঁর দাবি, মানুষের সমস্যার প্রতি তাঁর সরকার সংবেদনশীল বলেই এত বার নিয়ম বদল করা হয়েছে। মোদী সরকারের মন্ত্রীরা আজ ঘরোয়া আলোচনায় ইঙ্গিত দিয়েছেন, বর্ষশেষের রাতে টিভি বক্তৃতায় ভোগান্তির পরে আমজনতার জন্য সুরাহার কথা ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী। শহর ও গ্রামের গরিবদের জন্য থাকতে পারে নববর্ষের উপহার।
সরকারি সূত্রের খবর, উপহার ঘোষণা ছাড়াও নোট বাতিলের ফলে অর্থনীতির কতটা লাভ হয়েছে, তা-ও ব্যাখ্যা করতে পারেন মোদী। গত কালই রাহুল গাঁধী প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছিলেন। যার অন্যতম হল, কত কালো টাকা ঘরে ফিরল? কতই বা আর্থিক ক্ষতি হল? মোদী বলতে পারেন, নোট বাতিলের ফলে অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগেনি, উল্টে লাভ হয়েছে।
বছরশেষের রাতে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তৃতার সুর ধরেই নতুন বছরে দেশ জুড়ে প্রচারে নামবে মোদী সরকার ও বিজেপি। টিভি-রেডিওয় বিজ্ঞাপন তো থাকবেই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদেরও বলা হয়েছে, নোট বাতিলের উপকারিতা বোঝাতে গ্রাম-শহর মিলিয়ে মাথা পিছু অন্তত ১০টি করে জনসভা বা প্রচার কর্মসূচি করতে হবে। প্রচারে বলার জন্য প্রত্যেকটি মন্ত্রককে ৬০ পৃষ্ঠার একটি খতিয়ান পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। কেন নোট বাতিল দরকার ছিল, তাতে কী প্রভাব পড়েছে, ভবিষ্যতে কী হবে, তা নিয়ে পুস্তিকাও তৈরি হবে।
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ বলেছেন, নতুন নোট জোগানে যে সঙ্কট তৈরি হচ্ছিল, তা এখন অতীত। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে এখন যথেষ্ট নোট রয়েছে। ব্যাঙ্কের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বেড়েছে। জেটলির দাবি, রবি চাষের পরিমাণ বেড়েছে। আয়কর, পরোক্ষ কর-সহ সব ক্ষেত্রেই রাজস্ব আয় বেড়েছে। জীবন বিমার ব্যবসা, আন্তর্জাতিক পর্যটক, জ্বালানির বিক্রি, মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি— সবই বাড়তির দিকে।
বিজেপির এই প্রচারের পাল্টা দিতে কংগ্রেস অস্ত্র করছে মোদীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত দুর্নীতির অভিযোগকে। কংগ্রেস ৬ জানুয়ারি থেকে দেশ জুড়ে প্রচারে নামবে। আজ দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা প্রশ্ন তোলেন, প্রধানমন্ত্রী কেন এই অভিযোগের জবাব দিচ্ছেন না? কেনই বা অমিত শাহর নেতৃত্বাধীন আমদাবাদের সমবায় ব্যাঙ্কে ৫০০ কোটি টাকা জমার তদন্ত হচ্ছে না? জবাবে রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘সনিয়া গাঁধীকে প্রশ্ন করতে চাই, তাঁর পুত্র ও অনুচরদের এই বালখিল্য বিবৃতিতে তাঁর সম্মতি আছে কি না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy