Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জেলে যাব তবু খেসারত দেব না, অনুষ্ঠানের আগে হুঙ্কার শ্রীশ্রী-র

শুধু অনুষ্ঠান করার জন্যই খরচ হয়েছে ২৬ কোটিরও বেশি টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য খরচ। কিন্তু আদালতের নির্দেশ মেনে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে আপত্তি তাঁর। কারণ, তিনি মনে করেন, কোনও অন্যায় করেননি। তাই কেন্দ্রীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্নই নেই।

আজ, শুক্রবার দিল্লিতে শুরু হচ্ছে শ্রী শ্রী রবিশঙ্করের সংস্থা আর্ট অব লিভিং-এর বিশ্ব সাংস্কৃতিক উৎসব। বৃহস্পতিবার চলছে তারই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে যমুনার চরে অনুষ্ঠানের ছাড়পত্র পেয়েছিল এই সংস্থা। কিন্তু রবিশঙ্করের দাবি, তিনি কোনও ভুল করেননি। তাই খেসারতও দেবেন না। বরং সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। শীর্ষ আদালত যদি একই রায় দেয়, তিনি জেলে যেতেও রাজি। ছবি: পিটিআই।

আজ, শুক্রবার দিল্লিতে শুরু হচ্ছে শ্রী শ্রী রবিশঙ্করের সংস্থা আর্ট অব লিভিং-এর বিশ্ব সাংস্কৃতিক উৎসব। বৃহস্পতিবার চলছে তারই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে যমুনার চরে অনুষ্ঠানের ছাড়পত্র পেয়েছিল এই সংস্থা। কিন্তু রবিশঙ্করের দাবি, তিনি কোনও ভুল করেননি। তাই খেসারতও দেবেন না। বরং সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। শীর্ষ আদালত যদি একই রায় দেয়, তিনি জেলে যেতেও রাজি। ছবি: পিটিআই।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩৪
Share: Save:

শুধু অনুষ্ঠান করার জন্যই খরচ হয়েছে ২৬ কোটিরও বেশি টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য খরচ। কিন্তু আদালতের নির্দেশ মেনে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে আপত্তি তাঁর। কারণ, তিনি মনে করেন, কোনও অন্যায় করেননি। তাই কেন্দ্রীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্নই নেই। প্রয়োজনে জেলে যাবেন। আজ একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের কাছে এমনটাই দাবি করেছেন শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর। তাঁর কথায়, তিনি আদালতকে সম্মান করেন। কিন্তু বুধবার কেন্দ্রীয় পরিবেশ আদালত যে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে, তা তিনি মানছেন না। তাই তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন। শীর্ষ আদালত যদি ওই একই রায় বহাল রাখে, তবে তিনি জেলে যেতেও প্রস্তুত।

কাল থেকে নয়াদিল্লিতে শুরু হচ্ছে শ্রী শ্রী রবিশঙ্করের সংস্থা আর্ট অব লিভিং-এর বিশ্ব সাংস্কৃতিক উৎসব। অনুষ্ঠানটি ঘিরে বিতর্ক আর পিছু ছাড়ছে না। এ দিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে ভারতীয় কিসান মজদুর সমিতি একটি পিটিশন জমা দিয়েছিল। তাদের বক্তব্য, অনুষ্ঠানটি বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হোক। কিন্তু প্রধান বিচারপতি ওই পিটিশন গ্রহণ করতে চাননি। উল্টে আদালত পাল্টা প্রশ্ন তোলে, ‘‘এতদিন ধরে প্রস্তুতি হচ্ছে। আর এখন আপনারা এসেছেন? আপনারা কি প্রচারে আসতে চাইছেন? আপনারা পরিবেশ আদালতেই যান।’’ বৃহস্পতিবার এই একই প্রশ্ন তুলেছিল পরিবেশ আদালত। এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে যমুনার অববাহিকায় (রিভার বেসিন) দূষণ যে হয়েছে তা মেনে নিয়ে ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে অনুমতি দেয় পরিবেশ আদালত।

রাষ্ট্রপতি কয়েক দিন আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি অনুষ্ঠানে যাবেন না। তাই প্রধানমন্ত্রীকে অনুষ্ঠানে হাজির করাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন সংগঠকেরা। অবশষে, বৃহস্পতিবার রাতে জানা যায়, আগামিকাল বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠানে যাবেন মোদী।

তবে অনুষ্ঠান স্থলে প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা দিল্লি পুলিশ, এসপিজি কর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠানের জায়গাটি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তার পর তাঁরা রিপোর্টে দেন যে, প্রধানমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপিদের ক্ষেত্রে তো বটেই, সাধারণ মানুষের পক্ষেও অনুষ্ঠান মঞ্চটি যথেষ্ট নিরাপদ নয়। ইঞ্জিনিয়ারদের বক্তব্য, ২০০ ফুট উঁচু এবং এক হাজার ফুট চওড়া যে মূল মঞ্চটি তৈরি করিয়েছে ওই সংস্থা, তার কাঠামোটি যথেষ্ট পাকাপোক্ত নয়। এই অবস্থায় এক সঙ্গে এক হাজার জন শিল্পী যখন অনুষ্ঠান করবেন, তখন সেই ভার ওই মঞ্চ নিতে পারবে কি না, সেটাই পূর্ত দফতরের কাছে চিন্তার বিষয়। ওই দফতরের কর্তাদের অভিযোগ, অনুষ্ঠান মঞ্চ তৈরি করার সময় ‘ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড’-এর নক্সা মানা হয়নি।

বৃহস্পতিবার রাতভর চলেছে তারই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ছবি: প্রেম সিংহ।

বিজেপির একটি বড় অংশ চাইছিলই, ওই অনুষ্ঠানে যান প্রধানমন্ত্রী। কারণ বিষয়টির সঙ্গে এক দিকে হিন্দুত্ব এব‌ং অন্য দিকে দেশের সম্মানের প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে। পরিবেশের দোহাই দিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব যে ভাবে এর বিরোধিতায় সরব হয়েছেন, রাজনৈতিক ভাবে তার জবাব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। সংসদে এ দিন তিনি জানান, ‘‘যার সঙ্গে হিন্দু, ভারত বা ভারতীয় শব্দটি জুড়ে রয়েছে, তাতেই আপত্তি রয়েছে এ দেশের বিরোধীদের।’’ বেঙ্কাইয়ার মতে, ‘‘বিরোধীদের বুঝতে হবে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে এ দেশের সম্মান জড়িত। কারণ ৩৫টির বেশি দেশ থেকে রাষ্ট্রপ্রধানেরা এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন।’’ যদিও, আজ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অনুষ্ঠানে আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন জিম্বাবোয়ের রাষ্ট্রপ্রধান রবার্ট মুগাবে।

তবে সার্বিক ভাবে নিরাপত্তা প্রশ্নে যে খামতি রয়েছে, তা বোঝা যায় অনুষ্ঠান স্থল ঘুরে দেখলেই। পূর্ব দিল্লির যমুনার অববাহিকায় যেখানে ওই অনুষ্ঠানটি হচ্ছে, সেখানে পৌঁছনোটাই দর্শকদের কাছে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মূল রাস্তাগুলো থেকে অনুষ্ঠানের জায়গাটি দু’-তিন কিলোমিটার দূর। পুরো পথটাই মাটি বোঝাই করে অস্থায়ী ভাবে তৈরি করা হয়েছে। সেই রাস্তায় এক সঙ্গে পাশাপাশি দু’টি বড় বাস যাওয়াও মুশকিল। একটি গাড়ি গেলেই রাস্তার ওই ঝুরঝুরে মাটি উড়ে গোটা এলাকা ধুলোতে ঢেকে ফেলছে। সকলেই যাওয়া আসা করছেন মুখে রুমাল বেঁধে। তবে দিল্লির মৌসম ভবন শনি ও রবিবারের জন্য বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। যদি বৃষ্টি হয়, তবে অন্তত ধুলোর হাত থেকে রক্ষা পাবেন শিল্পী থেকে দর্শক, সবাই।

বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই অনুষ্ঠান স্থলের বেশির ভাগ কাজই প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। দর্শক আসন থেকে শুরু করে স্টেজ, সাউন্ড সিস্টেম— সব কিছুই প্রস্তুত। এ দিন দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মঞ্চতে একটি দল গানের মহড়া দিচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে মঞ্চের সাউন্ড সিস্টেমও, যাতে কয়েক লক্ষ দর্শক ভাল ভাবে শুনতে পান। শুরু হয়েছে দিল্লি পুলিশের কড়া পাহারাও। লক্ষ লক্ষ দর্শককে সামাল দিতে মোতায়েন করা হয়েছে হাজার দুয়েক পুলিশ। সঙ্গে থাকছে, স্বশস্ত্র পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। রাতে দর্শকদের ফেরার কথা মাথায় রেখে দিল্লি মেট্রোর কাছে উদ্যোক্তারা অবেদন জানিয়েছেন, যাতে এই তিন দিন বেশি রাত পর্যন্ত মেট্রো চালানো হয়।

এ দিকে, এবিপি নিউজকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর দাবি করেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্ব সাংস্কৃতিক উৎসবটি কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। নভেম্বরে সেই কথোপকথনের সময় রবিশঙ্কর মমতাকে জানান, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আগে এই প্রস্তাবটি পেলে তাঁরা অবশ্যই ভেবে দেখতেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cultural event shri shri ravi shankar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE