Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নিজের লড়াইয়ের গল্পে ঝাড়খণ্ডকে চেনাল সুনীতা

আফগানিস্তান আর ঝাড়খণ্ড মিলল গিয়ে কোপেনহাগেনে। সম্প্রতি ডেনমার্কের ওই শহরে সেমিনার সেরে এসে ঝাড়খণ্ডের কিশোরী সুনীতা কুমারীর তেমনটাই মনে হয়েছে। তার নিজের রাজ্যে মেয়ে পাচারের কথা সেখানে বলতে গিয়ে সুনীতা শুনে এসেছে আফগানিস্তানের মেয়েদের পক্ষে স্কুলে যাওয়াটাই কতটা কঠিন!

সুনীতা কুমারী। — নিজস্ব চিত্র

সুনীতা কুমারী। — নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
রাঁচি শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৬ ০৩:৫৩
Share: Save:

আফগানিস্তান আর ঝাড়খণ্ড মিলল গিয়ে কোপেনহাগেনে। সম্প্রতি ডেনমার্কের ওই শহরে সেমিনার সেরে এসে ঝাড়খণ্ডের কিশোরী সুনীতা কুমারীর তেমনটাই মনে হয়েছে। তার নিজের রাজ্যে মেয়ে পাচারের কথা সেখানে বলতে গিয়ে সুনীতা শুনে এসেছে আফগানিস্তানের মেয়েদের পক্ষে স্কুলে যাওয়াটাই কতটা কঠিন!

ঝাড়খণ্ডের ওরমাঝির সুনীতা কুমারী রাঁচি বিমানবন্দরে নামার পরে বললেন, “ভাবতে পারিনি আমার মতো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কত মেয়ে আছে যারা মেয়েদের জন্যই লড়াই করছে। কেউ স্কুলে পড়াশোনার জন্য লড়ছে, কেউ মেয়েদের অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়ছে কেউ বা লড়ছে বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে। ভবিষ্যতে নিজের লড়াইটা চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পেলাম।”

সম্প্রতি একটি মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কোপেনহাগেনে মেয়েদের সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির শাখা রয়েছে রাঁচির ওরমাঝিতে। তাদের মাধ্যমেই কোপেনহাগেনে সেমিনারে যোগ দিতে গিয়েছিল বছর পনেরোর নবম শ্রেণীর ছাত্রী সুনীতা।

নিজের লড়াইয়ের কথা শোনা গেল সুনীতার মুখেই।

সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন ওর বিয়ের প্রস্তাব আসে। ওর এক দিদির বিয়ে হয়ে যায় নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে। সুনীতা কিন্তু স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ‘‘বিয়ে করব না। পড়াশোনা করব। ইংরেজিতে কথা বলা শিখব।’ নেশা ফুটবল খেলা। ফুটবলটাও খেলতে চেয়েছে সে। সুনীতা এখন বলে, “পড়াশোনার চেয়েও ফুটবল খেলাটাও আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে বেশি। আমি ফরোর্য়াড পজিশনে খেলি। ফুটবল কতটা লড়াই করার শক্তি দিয়েছে তা-ও আমি বলেছি ওই দেশে।”

লড়াকু মেয়েটা কোপেনহাগেন থেকে ফিরে আসার পরে গ্রামের বন্ধুরা তাকে জড়িয়ে ধরে। জানতে চায় তার অভিজ্ঞতার কথা। সুনীতা জানায়, তাদের গ্রামের বাল্য বিবাহের সমস্যার কথা সবাইকে বলেছে। কী ভাবে মেয়ে পাচার হয়ে যায় গ্রাম থেকে, বলে এসেছে সেটাও। সুনীতার কথায়, “সেমিনারে বয়সের দিক থেকে সব থেকে ছোট প্রতিনিধি ছিলাম আমিই। বলার পরে সবাই খুব হাততালি দিয়েছে। আরও বলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের বেশি বলার নিয়ম নেই!”

আফগানিস্তান থেকে আসা বেশ কয়েক জন মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে সুনীতার। বন্ধু হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু মেয়েও। আফগানিস্তানের বন্ধুরা যখন সুনীতাকে বলেছে, বন্দুকের নল উপেক্ষা করে কী ভাবে তারা স্কুল যায়, শুনে চোখে জল এসে গিয়েছিল ঝাড়খণ্ডের মেয়েটির। আর আফগানিস্তানের বন্ধুত্বরা বড় বড় চোখে শুনেছে ঝাড়খণ্ড থেকে কী ভাবে মেয়েরা পাচার হয়ে যায়।

সুনীতাকে যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পাঠিয়েছিল, সেটির প্রতিনিধি ফ্রান্স গাস্টলার বলেন, “সুনীতার আত্মবিশ্বাস খুব প্রবল। তাই ওকেই আমরা পাঠিয়েছিলাম। সুনীতা এখন পড়াশোনার সঙ্গে বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধেও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sunita Kumar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE