উরি হামলার জেরে গত বছর ইসলামাবাদের সার্ক সম্মেলন বয়কট করেছিল ভারত। প্রায় এক বছর পরে সেই সার্ক-এর বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক বসতে চলেছে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকছেন পাকিস্তানের নতুন বিদেশমন্ত্রী খাজা আসিফও। অর্থাৎ দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে না হলেও দীর্ঘ দিন পরে একমঞ্চে দেখা যাবে ভারত ও পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীদের।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক যোগাযোগ, নিরাপত্তা এবং বাণিজ্য নিয়ে সার্বিক আলোচনা হবে। কিন্তু কথাবার্তার সুযোগ নিয়ে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সন্ত্রাসবাদ আটকাতে পাকিস্তানের ইচ্ছাকৃত গাফিলতি নিয়ে সরব হতে চলেছেন। ভারতের তরফে বলা হবে, গত এক বছরে পঠানকোট কিংবা উরিকাণ্ডে অভিযুক্তদের শাস্তির ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপই করেনি ইসলামাবাদ।
উরিতে জঙ্গি হানার পরে ভারতের নেতৃত্বে সার্কের বেশিরভাগ দেশই পাকিস্তানকে একঘরে করতে সক্রিয় হয়েছিল। ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মলদ্বীপ— সার্ক-এর গত বারের ‘সভাপতি দেশ’ নেপালকে চিঠি লিখে জানিয়েছিল, একটি রাষ্ট্রের মদতে দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাস যে ভাবে ডালপালা মেলছে, তাতে কোনও সহযোগিতামূলক বৈঠক সম্ভব নয়। মোদী সরকারের উদ্দেশ্য ছিল, আন্তর্জাতিক ভাবে পাকিস্তানকে একঘরে করে চাপ বাড়ানো।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এক বছর পরেও পাকিস্তান প্রশ্নে শেষ পর্যন্ত লাভের ঘরে শূন্যই পড়ে থাকছে। বরং এই সময়ে চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়িয়েছে ইসলামাবাদ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্ত বিষয়েই বেজিংকে পাশে নিয়ে সাউথ ব্লকের রক্তচাপ বাড়িয়ে চলেছে ইসলামাবাদ। চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর থেকে শুরু করে পাক মদতপ্রাপ্ত সন্ত্রাসবাদী মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি তালিকার বাইরে রাখা— সব ক্ষেত্রেই ভারতের অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চিন-পাক অক্ষ।
তাই শুধুমাত্র ব্রিক্স–এর বিদেশমন্ত্রীদের মঞ্চই নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনেও ভারতের কৌশল হল, জঙ্গি মদতে পাকিস্তানের ভূমিকাকে যতটা সম্ভব সামনে নিয়ে আসা। গত কাল আমেরিকা জাপানের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকেও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সুষমা। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সমালোচনা করতে গিয়ে নাম না করে পাক প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন বিদেশমন্ত্রী। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রভিশ কুমার বলেন, ‘‘উত্তর কোরিয়ার সম্প্রতিক পদক্ষেপের নিন্দা করে বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, তাদের পরমাণু অস্ত্র সম্প্রসারণের যোগসূত্রকেও খতিয়ে দেখা উচিত। এতে যারা জড়িত তাদের জবাবদিহি করা প্রয়োজন। দরকার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার।’’ উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচির পিছনে পাকিস্তানের বড় ভূমিকা রয়েছে— এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গুঞ্জন কূটনৈতিক শিবিরে। ভারতও এ নিয়ে ঘরোয়া ভাবে পশ্চিম বিশ্বকে জানিয়েছে। গত কালের বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ আবার টেনে এনে ইসলামাবাদের উপর চাপ তৈরির চেষ্টা করেছে নয়াদিল্লি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy