Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
২৬/১১ হামলা

দিল্লিকে অস্ত্র দিলেন প্রাক্তন পাক কর্তা

সংঘাতের মধ্যেই চলতি মাসের শেষে আলোচনায় বসতে চলেছেন ভারত এবং পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা (এনএসএ)। তার ঠিক আগে অপ্রত্যাশিত ভাবেই ভারতের হাতে একটি মোক্ষম অস্ত্র তুলে দিলেন পাকিস্তানের ‘ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি’-র প্রাক্তন ডিজি তারিক খোসা।

জ্বলছে তাজ হোটেল। —ফাইল চিত্র।

জ্বলছে তাজ হোটেল। —ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৫ ০০:০২
Share: Save:

সংঘাতের মধ্যেই চলতি মাসের শেষে আলোচনায় বসতে চলেছেন ভারত এবং পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা (এনএসএ)। তার ঠিক আগে অপ্রত্যাশিত ভাবেই ভারতের হাতে একটি মোক্ষম অস্ত্র তুলে দিলেন পাকিস্তানের ‘ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি’-র প্রাক্তন ডিজি তারিক খোসা। ২৬/১১-এর মুম্বই হামলা পাকিস্তান থেকেই চালানো হয়েছিল বলে সাফ জানিয়েছেন তিনি।

একটি প্রথম সারির পাক সংবাদপত্রে সন্ত্রাস-দমন নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছেন খোসা। তাঁর মতে, করাচি, বালুচিস্তান-সহ পাকিস্তানের নানা অংশে সন্ত্রাসে ভারতীয় মদতের অভিযোগ তুলে ঠিকই করছে ইসলামাবাদ। এই ঘটনাগুলি নিয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণও দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে পাকিস্তানিদের নিজেদের কৃতকর্মের কথাও মানতে হবে। গোপন লড়াইয়ে দু’পক্ষের ভূমিকার কথা স্বীকার করা গেলে তবেই উফা বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী ও নওয়াজ শরিফের সন্ত্রাস-দমনের প্রতিশ্রুতি সফল হবে।

পাকিস্তানের কৃতকর্মের কথা বলতে গিয়ে মুম্বই হামলার প্রসঙ্গ তুলেছেন খোসা। তিনি জানান, ২৬/১১-এর ছক পাকিস্তানের মাটিতেই কষা। জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকেই ভারতে গিয়ে হামলা চালায়।

এই বিষয়ে এফআইএ-র তদন্ত উঠে আসা কয়েকটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন খোসা। তাঁর মতে, আজমল কসাব যে পাকিস্তানি তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সে পাকিস্তানেই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছিল। প্রাক্তন গোয়েন্দা কর্তার দাবি, মুম্বইয়ে হামলাকারী জঙ্গিরা সিন্ধুপ্রদেশের থাট্টার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। তার পর তাদের সমুদ্রপথে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর দাবি, সিন্ধুতে ওই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির চিহ্নিত করেছিলেন এফআইএ-র তদন্তকারীরা। মুম্বই হামলায় ব্যবহার করা বিস্ফোরকের বাক্সগুলি এই শিবির থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলি না-ফাটা বিস্ফোরকের সঙ্গে মিলেও গিয়েছে।

খোসার আরও দাবি, জঙ্গিরা মাঝসমুদ্র অবধি যে পাক ট্রলারে গিয়েছিল সেটিও খুঁজে পেয়েছে এফআইএ। মাঝসমুদ্র থেকে তারা একটি ভারতীয় ট্রলার ছিনতাই করে মুম্বইয়ের দিকে রওনা হয়। পাক ট্রলারটিকে করাচি বন্দরে ফিরিয়ে এনে সেটির ভোলবদলের চেষ্টা হয়। ট্রলারটিতে নতুন রংও করা হয়েছিল। কিন্তু এফআইএ ওই ট্রলারের সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে। ভারতীয় ট্রলার থেকে মুম্বই উপকূলে পৌছতে জঙ্গিরা একটি ডিঙি ব্যবহার করেছিল। খোসা জানিয়েছেন, ওই ডিঙির ইঞ্জিনে একটি পেটেন্ট নম্বর পাওয়া গিয়েছে। এফআইএ-র গোয়েন্দারা সেই নম্বরের সূত্র ধরে জেনেছেন ডিঙিটিকে জাপান থেকে লাহৌর এবং তার পরে করাচির এক খেলার সরঞ্জামের দোকানে আনা হয়েছিল। সেখান থেকে এক লস্কর-ই-তইবা জঙ্গি ডিঙিটি কেনে। সে গ্রেফতার হয়েছে। টাকার লেনদেনের প্রমাণও এফআইএ-র হাতে রয়েছে।

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন

করাচির একটি ‘অপারেশনস রুম’ থেকেই হামলার উপরে নজর রাখা হয়েছিল বলে বার বার দাবি করেছেন ভারত-সহ বহু দেশের গোয়েন্দারা। তা মেনে নিয়ে খোসা জানিয়েছেন, ওই ‘অপারেশনস রুম’ এফআইএ গোয়েন্দারা চিহ্নিত করেছেন। সেখান থেকে ইন্টারনেটে ‘ভয়েস ওভার প্রটোকলে’-র মাধ্যমে জঙ্গিদের সঙ্গে মূল চক্রীদের কথার প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে। তা ছাড়া পাক আদালতে ২৬/১১-এর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত লস্কর কম্যান্ডার ও তার সহযোগীদের বিচার চলছে। এই ষড়যন্ত্র আর্থিক মদত দেওয়ার অভিযোগে বিদেশ থেকেও কয়েক জনকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে আনা হয়েছে। খোসার বক্তব্য পাকিস্তানকে দেওয়া ভারতের সাক্ষ্যপ্রমাণের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে বলেই দাবি বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের।

পাক আদালতে মুম্বই হামলার বিচার যে বড় বেশি সময় ধরে চলেছে তা মেনে নিয়েছেন খোসা। অভিযুক্তদের কৌশলের ফলে দেরি হওয়া, বার বার বিচারক পরিবর্তন, সরকারি কৌঁসুলির খুন হওয়ার মতো ঘটনা সরকার পক্ষকে বিপাকে ফেলছে বলে মনে করেন প্রাক্তন পাক গোয়েন্দা কর্তা। তাঁর মতে ভারত ও পাকিস্তান, দু’দেশে এই ঘটনার বিচার হয়েছে। ভারতে কসাবের সাজা হয়ে গেলেও পাকিস্তানের মাটিতে ষড়যন্ত্রের কথা কোর্টে প্রমাণ করা বেশ কঠিন। তবে দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা হওয়া উচিত।

এনএসএ স্তরের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও পাক সেনা ও আইএসআইয়ের তরফে প্ররোচনার কোনও অভাব নেই। সীমান্তে গুলিবর্ষণ চলছেই। তার সঙ্গে আবার কমনওয়েলথ সংসদীয় অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার স্পিকারকে আমন্ত্রণ জানাতে রাজি হয়নি পাকিস্তান। সেপ্টেম্বরে ইসলামাবাদে ওই সম্মেলন হওয়ার কথা। তাতে রীতি মেনে ভারতের অন্য সব রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু বাদ পড়েছেন জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার স্পিকার কবীন্দ্র গুপ্ত ও জম্মু-কাশ্মীর সরকারের প্রতিনিধি। পাকিস্তান জানিয়েছে, রাষ্ট্রপুঞ্জে গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ীই জম্মু-কাশ্মীর ওই সম্মেলনে যোগ দিতে পারে না। সীমান্ত সংঘর্ষ নিয়েও আজ আর আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করেছে ইসলামাবাদ। তাদের দাবি, আজ পুখলিয়ান-আখনুর সেক্টরে প্ররোচনা ছাড়াই গুলি চালিয়েছে ভারতীয় সেনা। পাক বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ভারত একতরফা গুলি চালাতে শুরু করে। পাকিস্তানি রেঞ্জার্সরাও জবাব দেয়। প্রত্যাশিত ভাবেই ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমরা কখনওই আগে গুলি চালাই নি। চালাইনা।’’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবি, গত দশ দিনে পাক রেঞ্জার্সের গুলিতে একাধিক জওয়ান ছাড়াও এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন চার জন গ্রামবাসীও। এমনকি ইদের দিনেও পাক বাহিনী গুলি বর্ষণ বন্ধ করেনি।

সাউথ ব্লক সূত্রের মতে, ঘরের শত্রু তারিক খোসাকে নিয়ে প্যাঁচে পড়েছে ইসলামাবাদ। এনএসএ স্তরের বৈঠকে যে দিল্লি খোসার বক্তব্য তুলে ধরবে তা নিয়ে পাকিস্তানের কোনও সন্দেহ নেই। সাউথ ব্লকের কর্তাদের মতে, খোসা এখন সরকারি পদে নেই ঠিকই। তবু তিনিই মুম্বই হামলার তদন্তে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর এই প্রতিবেদনের অস্বস্তি কাটাতেই ইসলামাবাদ কূটনৈতিক ভাবে কড়া মনোভাব দেখানোর চেষ্টা করছে।

কূটনীতির খেলায় নতুন অস্ত্র দিল্লিকে কতটা সুবিধে দেয় তাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tariq Khosa 26 11 Mumbai 11 Pakistan India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE