Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ছাত্র এক! সাপ-ভরা গ্রামে পড়াতে যান রজনী

আট বছর ধরে রুটিনটা একই রজনীকান্ত মেন্ধের। এক ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার কাদামাখা রাস্তা মোটরবাইকে পেরিয়ে স্কুলে পৌঁছন তিনি। যে রাস্তার দু’পাশে ৪০০ ফুট খাড়া ঢাল। আর এখন স্কুলে মাত্র এক জনই ছাত্র। ২৯ বছরের রজনীকান্ত সরকারি স্কুলের শিক্ষক।

গুরু-শিষ্য: চন্দর গ্রামে। ছবি: ফেসবুক।

গুরু-শিষ্য: চন্দর গ্রামে। ছবি: ফেসবুক।

সংবাদ সংস্থা
পুণে শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪৮
Share: Save:

আট বছর ধরে রুটিনটা একই রজনীকান্ত মেন্ধের। এক ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার কাদামাখা রাস্তা মোটরবাইকে পেরিয়ে স্কুলে পৌঁছন তিনি। যে রাস্তার দু’পাশে ৪০০ ফুট খাড়া ঢাল। আর এখন স্কুলে মাত্র এক জনই ছাত্র। ২৯ বছরের রজনীকান্ত সরকারি স্কুলের শিক্ষক। পুণে থেকে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে ভোর বলে একটি জায়গা। সেখানকার চন্দর গ্রামে পড়াতে যান রজনী।

এখানে মানুষের চেয়ে সাপ বেশি! ১৫টি কুঁড়েঘরে বাসিন্দার সংখ্যা ৬০। আট বছর ধরে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন এই যুবক। প্রথম দিকে ১১ জন পড়ুয়া ছিল। কমে কমে ঠেকেছে মাত্র একটিতে। ছাত্রের নাম যুবরাজ সাঙ্গালে। তাকেও বাবা-বাছা বলে পড়ানো! বেশির ভাগ দিনই মাস্টারমশাইকে ছাত্রের খোঁজে এ দিক ও দিক দৌড়ে বেড়াতে হয়। গ্রামে পৌঁছে তিনি দেখেন, আট বছর বয়সি ওই খুদে হয় গাছের আড়ালে। নয় তো নিজের ঘরে। তবুও ধৈর্য হারান না রজনী। বলেন, ‘‘ওর অনিচ্ছেটা বুঝি। বন্ধু ছাড়া স্কুলে কারও ভাল লাগে? এই বয়সে বাচ্চারা খেলবে। আর ও স্কুলে শুধু আমায় দেখে!’’

জাতীয় সড়ক থেকে নেমে চন্দরের পথে যেতে বর্ষাকালে অবস্থা আরও চরমে ওঠে। ছোট্ট গ্রামটি শরদ পওয়ার কন্যা এবং সাংসদ সুপ্রিয়া সুলের নির্বাচনী এলাকায় পড়ে। কিন্তু সুপ্রিয়াকে কোনও দিন চোখে দেখেননি বলে দাবি গ্রামবাসীদের। ‘‘সরকার! শুধু বোঝা যায় পোলিয়ো খাওয়াতে এলে’’, বলেছেন এক বাসিন্দা। গরু চড়িয়ে, পাথর ভেঙে ওঁদের দিন গুজরান।

আরও পড়ুন: যান-শাসনেও এ বার প্রিয়ার চোখের ইশারা

এ গ্রামে স্কুলে যায় না কেন কেউ? রজনী বলেন, ‘‘উঁচু ক্লাসের পড়ার জন্য ওদেরও ১২ কিলোমিটার এই ভয়ঙ্কর রাস্তা পেরোতে হবে। মেয়েদের তো সব গুজরাতে দিনমজুর করে পাঠিয়ে দেয়। অনেক বলেছি। কেউ শোনে না।’’ চন্দর গ্রামের স্কুল তৈরি হয় ১৯৮৫ সালে। কয়েক বছর আগে ছিল শুধু চারটে দেওয়াল, ছাদও ছিল না। এখন ওপরটা অ্যাসবেস্টসে ঢাকা। এক দিন ওই খান থেকেই সাপের ঝাঁপ রজনীর গায়ে! কাদা রাস্তা দিয়ে আসার সময়ে এক দিন মাস্টারমশাই নিজেই সাপের ঘাড়ে। এখন বলছেন, ‘‘তৃতীয় বার কিছু হলে আর বাঁচব না!’’

তবু সব কিছু অগ্রাহ্য করে লড়ে যাচ্ছেন রজনী। পাঁচ বছরের আগে বদলি হয় না। তা-ও পদ শূন্য হলে তবেই। আপাতত চন্দরেই আটকে মাস্টারমশাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE