Advertisement
১১ মে ২০২৪

মেয়ে বিধির চোখে জল, আদালতে অজ্ঞান ইন্দ্রাণী

মাকে কাঠগড়ায় দেখে সোমবার বান্দ্রা আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বিধি। ইন্দ্রাণী এবং স়ঞ্জীব খন্নার মেয়ে বিধি মুখোপাধ্যায় সোমবার হাজির ছিলেন আদালতে। মায়ের সঙ্গে তাঁকে দেখা করার অনুমতি দিয়েছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট।

ডান দিকে বিধি মুখোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।

ডান দিকে বিধি মুখোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:১৭
Share: Save:

মাকে কাঠগড়ায় দেখে সোমবার বান্দ্রা আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বিধি।

ইন্দ্রাণী এবং স়ঞ্জীব খন্নার মেয়ে বিধি মুখোপাধ্যায় সোমবার হাজির ছিলেন আদালতে। মায়ের সঙ্গে তাঁকে দেখা করার অনুমতি দিয়েছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। আদালত সূত্রের খবর, বিধি কান্নায় ভেঙে পড়লেও ইন্দ্রাণী তখন নির্লিপ্তই ছিলেন। কিন্তু তিনি জ্ঞান হারান এজলাসের মধ্যে। আদালত তাঁর পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়ার পরে।

শিনা বরা হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে এই প্রথম সংবাদ মাধ্যমে মুখ খুললেন বিধি। তিনি বলেন, পিটার তাঁকে দত্তক নিয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকে তাঁকেই বাবা বলে ডাকেন। ইন্দ্রাণী সম্পর্কে বিধির মত, আর পাঁচ জন মা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, তেমনই ছিল তাঁদের। আর তিনি শিনাকে চিনতেন মাসি হিসেবেই। সপ্তাহান্তে শিনা তাঁদের বাড়ি আসতেন। সেই সূত্রে বার কয়েক তাঁদের দেখা হয়। আর ইন্দ্রাণীই তাঁকে বলেছিলেন, লস অ্যাঞ্জেলেসে পড়তে গিয়েছেন মাসি। মায়ের কাছাকাছি থেকেও তিনি এত কাণ্ডের কিছু জানতেন না, ভেবে অবাক বিধি নিজেই।

বিধি জানিয়েছেন, বার দুয়েক গুয়াহাটি গিয়েছিলেন তিনি। প্রথম বার গিয়েছিলেন মায়ের সঙ্গে। দ্বিতীয় বার অবশ্য একাই যান । ইন্দ্রাণীর বাবা-মাকে বিধি ডাকতেন নানা-নানি বলে। কিন্তু শিনা তাঁদের মাম্মি-পাপা বলেই ডাকতেন।

সোমবার মিখাইল বরাকে খুনের চেষ্টার জন্য ইন্দ্রাণীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৮ ধারায় আরও একটি চার্জ গঠন করেছে মুম্বই পুলিশ। শিনার ভাই মিখাইল বরা আগেই অভিযোগ জানিয়েছিলেন, শিনাকে যে দিন খুন করা হয় সে দিন তাঁকেও মাদক মেশানো পানীয় খাইয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। সব মিলিয়ে বার তিনেক তাঁকে খুন করার চেষ্টা করেছিলেন মা। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই এই নয়া চার্জ।

এ দিন বান্দ্রা আদালতে সরকারি কৌঁসুলি দাবি করেন, শিনা বরা হত্যাকাণ্ডে ওই তিন জন ছাড়া আরও কেউ যুক্ত ছিল, এমনটাই সন্দেহ পুলিশের। তারা মহারাষ্ট্রের বাইরের লোকও হতে পারে। এই সংক্রান্ত তথ্য জানতে ওই তিন জনকে আরও জেরা করা প্রয়োজন। তাই ইন্দ্রাণীদের আরও কয়েক দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার আবেদন জানান তিনি। তা শুনেই সংজ্ঞা হারান ইন্দ্রাণী।

ইন্দ্রাণীর আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাঁর মক্কেলের উপরে নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এমনকী পুলিশ ইন্দ্রাণীকে মারধর করছে বলেও তাঁর অভিযোগ। ওই আইনজীবীর আরও দাবি, ২৫ অগস্ট গ্রেফতার করার পর থেকে তাঁর মক্কেলকে প্রায় ৯০ ঘণ্টা জেরা করা হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, এত ক্ষণ জেরার পরেও আর কী প্রশ্ন থাকতে পারে পুলিশের। আর সঞ্জীব খন্নার আইনজীবী যুক্তি দেন, পুলিশ এখন ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার অপেক্ষায়। তাই সঞ্জীবের পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। আদালতে তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, জেরায় মুখ খোলেননি এক জনও। পুলিশের সঙ্গে অসহযোগিতা করছেন প্রত্যেকেই। তাই আরও কিছু দিন ওই তিন জনের হেফাজত চান তাঁরা।

শেষমেশ সরকারি কৌঁসুলির আবেদন মেনে নেয় আদালত। শিনা হত্যা মামলায় তিন অভিযুক্ত ইন্দ্রাণী, সঞ্জীব এবং গাড়িচালক শ্যাম রাইকেও ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত।

আদালতে যুক্তি-পাল্টা যুক্তির ফাঁকফোকরে উঠে এসেছে বেশ কিছু তথ্য। তদন্তকারীদের দাবি, শিনাকে খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে তাঁরা জেনেছেন, মেয়েকে কোথায় খুন করা হবে এবং দেহ কোথায় ফেলা হবে— এ সব নিয়ে সঞ্জীবের সঙ্গে বহু দিন ধরে আলোচনা করেন ইন্দ্রাণী। তাঁদের কথা হতো মূলত স্কাইপে।

সঞ্জীব প্রথমে পরিকল্পনা করেন, শিনার মুম্বইয়ের বাড়িতেই তাঁকে খুন করা হবে। সেখানে শিনা থাকতেন পিটার মুখোপাধ্যায়ের ছেলে রাহুলের সঙ্গে। সঞ্জীবের যুক্তি ছিল, ওই বাড়িতে শিনা খুন হলে পুলিশ সন্দেহ করত রাহুলকেই। তবে এই ছক পছন্দ হয়নি ইন্দ্রাণীর। তাঁর মনে হয়েছিল, খুন করতে ঢোকার বা বেরোনোর সময় প্রতিবেশীরা তাঁদের চিনে ফেলতে পারে। সে ক্ষেত্রে ফেঁসে যেতে পারেন তাঁরা।

পুলিশের দাবি, পিটার দেশের বাইরে থাকার সময় একটি ছক কষেন ইন্দ্রাণী। নিজেদের ওরলির বাড়িতে ডেকে ইন্দ্রাণী খুন করতে চেয়েছিলেন মেয়েকে। সঞ্জীব তা নাকচ করেন। ইন্দ্রাণীকে বোঝান, বাড়িতে শিনা খুন হলে সরাসরি তাঁদেরই সন্দেহ করা হবে।

শেষ পর্যন্ত গাড়িতে খুন করে শিনার দেহ রায়গড়ের জঙ্গলে ফেলে আসার প্রস্তাব দেন সঞ্জীব। তাতে সম্মতি দেন ইন্দ্রাণী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE