Advertisement
১১ জুন ২০২৪

এখন টেবিলে শুধু সন্ত্রাস, বাকি কথা পরে হবে

আলোচনা হোক। তবে শুধু মাত্র সন্ত্রাস নিয়েই। পাঠানকোট-কাণ্ডের পরে পাকিস্তান নীতির প্রশ্নে এই সূত্রটি নিয়েই ভাবনাচিন্তা করছে নয়াদিল্লি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৭
Share: Save:

আলোচনা হোক। তবে শুধু মাত্র সন্ত্রাস নিয়েই।

পাঠানকোট-কাণ্ডের পরে পাকিস্তান নীতির প্রশ্নে এই সূত্রটি নিয়েই ভাবনাচিন্তা করছে নয়াদিল্লি।

এটা ঘটনা যে, পাঠানকোট-কাণ্ডের জেরে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাকে ফের হিমঘরে পাঠাতে চায় না নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া আবেগকে মাথায় রেখে সন্ত্রাসকেই এই মুহূর্তে আলোচনায় অগ্রাধিকার দিতে তৈরি হচ্ছে সরকার। যে সম্ভাবনাটি নিয়ে কথা চলছে তা হল, বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক আপাতত অনির্দিষ্ট কালের জন্য পিছিয়ে দেওয়া। এবং দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠকটি এখন করা।

পাঠানকোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে দিল্লি বুঝতে পারছে, এই মুহূর্তে দু’দেশের মধ্যে সন্ত্রাস ছাড়া অন্য কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনাই অর্থহীন। ঘরোয়া রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদীর পাক-নীতি। বিশেষ করে মোদীর আচমকা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ইসলামাবাদে গিয়ে জন্মদিন-কূটনীতির পরেই পাঠানকোটের ঘটনা বিরোধীদের হাতে বাড়তি অস্ত্র দিয়েছে। তবে মোদীর পক্ষে স্বস্তির হল, আরএসএস সরাসরি আলোচনা বন্ধের দাবি তোলেনি। বরং সঙ্ঘ-নেতা ইন্দ্রেশ কুমারের কৌশলী মতামত, ‘কৌশলগত ভাবে গ্রহণযোগ্য’ হলে কথা আপাতত বন্ধ থাক।

এই অবস্থায় আজ প্রধানমন্ত্রী দফায় দফায় বৈঠক করেন বিদেশমন্ত্রী, বিদেশসচিব, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাসের শীর্ষ কর্তারা। পাকিস্তানের সঙ্গে আগামী দিনে কোন পথে এগোনো হবে, সেটাই ভাবাচ্ছে তাদের। কূটনৈতিক শিবির মনে করছে, ভারত-পাক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়া এখনও যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে। এবং সেটাকে কাজে লাগানো উচিত।

কিন্তু কোন পথে? সেটা ভাবতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত সূক্ষ্ম বিচারের রাস্তায় হাঁটতে হচ্ছে সরকারকে। পাঠানকোটের প্রভাব ভারত-পাক সম্পর্কে পড়বে কিনা, জানতে চাওয়ায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ বলেন, ‘‘এখনও অভিযানের কাজ চলছে। আগে সেটা শেষ হোক। তার পর এই নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যাবে।’’ ঘটনা হল, আলোচনার পথ যাতে বন্ধ না হয়, সে জন্য এটা নিয়ে পাক সরকারি নেতৃত্বের সঙ্গেও আলোচনা চালাচ্ছে সরকার। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও মনে করছেন, মোদীর বেনজির ইসলামাবাদ যাত্রা নিয়ে চড়া সুরে প্রচারের পরে পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক সরাসরি বাতিল করে দেওয়া হলে নিজেদেরই মুখ পোড়ার সম্ভাবনা। আবার এটাও ঘটনা যে, দু’দেশের বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা বাণিজ্য থেকে কাশ্মীর— সব নিয়েই। কিন্তু সমস্যা হল, এই মুহূর্তে সেগুলি নিয়ে আলোচনার প্রশ্নই উঠছে না। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসই এখন আমাদের কাছে লাল দাগ। পাকিস্তানের সেটা বোঝা উচিত।’’

এই পরিস্থিতিতে বাতিল হয়ে গিয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের প্রস্তাবিত চিন সফর। আগামিকাল চিনের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে আলোচনার জন্য বেজিং যাওয়ার কথা ছিল ডোভালের। কিন্তু তাঁকে এখন দিল্লি ছাড়তে নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পাঠানকোট কাণ্ডের সমস্ত নথি ও তথ্য একত্র করে তা ডোভালের কাছে পাঠানো হচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সন্ত্রাস-আলোচনায় এই সব তথ্য তুলে দেওয়া হতে পারে বলেই সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE