Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সাইকেল গেলে খাব কী? কমিশনে দরবার, চলছে রফার খোঁজও

পরিবারের যাবতীয় বলভরসা সাইকেলটা। বাপ-ব্যাটার ঝগড়ায় সেটাতেই তালাচাবি পড়ে গেলে থাকবেটা কী! বড় বিপদ! তাই সাইকেল নিয়ে টানাটানির মধ্যেও শান্তির পথ খুঁজছে দু’পক্ষ।

গন্তব্য নির্বাচন কমিশন। ছবি: পিটিআই

গন্তব্য নির্বাচন কমিশন। ছবি: পিটিআই

অনমিত্র সেনগুপ্ত ও প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি ও লখনউ শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০৪:১১
Share: Save:

পরিবারের যাবতীয় বলভরসা সাইকেলটা। বাপ-ব্যাটার ঝগড়ায় সেটাতেই তালাচাবি পড়ে গেলে থাকবেটা কী!

বড় বিপদ! তাই সাইকেল নিয়ে টানাটানির মধ্যেও শান্তির পথ খুঁজছে দু’পক্ষ।

কিন্তু বিপদটা কী? মুলায়ম-অখিলেশ যাদবের যুদ্ধে সমাজবাদী পার্টি সরকারি ভাবে না হলেও দু’টুকরো হয়ে গিয়েছে। সামনেই ভোট। এখন দুই শিবিরই যদি সপা-র নির্বাচনী প্রতীক ‘সাইকেল’ নিয়ে ভোটে নামতে চায়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন মনে করলে ‘সাইকেল’ প্রতীকটি বাজেয়াপ্ত তো করবেই, নিষেধাজ্ঞা জারি হবে ‘সমাজবাদী পার্টি’ নাম ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। তখন নতুন প্রতীক, নতুন নামের দল নিয়ে লড়লে ভোটে ভরাডুবি নিশ্চিত, বুঝেই এখন পথ খুঁজছে দু’পক্ষ।

তবে প্রকাশ্যে অন্তত বাপ-ব্যাটার দ্বন্দ্ব আজও অব্যাহত। আজই বিকেলে কমিশনে গিয়ে মুলায়ম জানিয়ে এসেছেন, ‘সাইকেল’-এর প্রকৃত দাবিদার তাঁর শিবিরই। আগামিকাল সকালে একই দাবি নিয়ে কমিশনে দরবার করবেন অখিলেশের দূত রামগোপাল যাদব।

সপা-র একটি শীর্ষ সূত্রের দাবি, প্রকাশ্যে টানাপড়েন চললেও গত কাল বেশি রাতে লখনউয়ে গোপন বৈঠকে বসেছিলেন অখিলেশ ও মুলায়ম। তার পরে আজ মুলায়ম দিল্লি পাড়ি দিলেও লখনউয়ে দলের বিধায়ক ও ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অখিলেশ। সূত্রের খবর, বৈঠকে অখিলেশের নির্দেশ, ‘নেতাজি’ মুলায়মের বিরুদ্ধে একটি কথাও নয়। নেতাজি তাঁর সঙ্গেই রয়েছেন। অনেকেই বলছেন, সপা-র ভাঙন নিশ্চিত মনে হলেও দল বাঁচাতে মুলায়ম শেষবেলায় কিছু করতেই পারেন। যদিও এমন প্রশ্ন উঠছে, জল যা গড়িয়েছে, তার পরে আর মুলায়ম সামলাতে পারবেন কি?

সপা সূত্রের খবর, অখিলেশের নেতৃত্ব মেনে নিতে মানসিক ভাবে আর আপত্তি নেই মুলায়মের। তাই ছেলেকে বহিষ্কার করেই পরের দিন ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সুযোগে ছেলে যে তাঁকে শেষ পর্যন্ত লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো মার্গদর্শক মণ্ডলীতে পাঠিয়ে দেবেন, তা ভাবেননি মুলায়ম! তাই দলের ক্ষমতা অখিলেশ হাতে নিতেই দ্রুত পটপরিবর্তন হতে থাকে। ভাই শিবপাল বা লন্ডন থেকে তড়িঘড়ি উড়ে আসা অমর সিংহ মুলায়মকে বোঝান, ছেলের চাপে তিনি যেন কোনও ভাবেই রণে ভঙ্গ না দেন। তার পরেই সাইকেলের উপর ‘হক’ জমাতে শিবপাল-মুলায়ম দিল্লি উড়ে আসেন।

কমিশনকে মুলায়ম জানিয়েছেন, সপা-র প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান প্রধান তিনিই। রবিবার রামগোপাল যাদবের ডাকা যে বৈঠকে তাঁকে সরিয়ে অখিলেশকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে, তা অবৈধ। রামগোপালের ওই বৈঠক ডাকার অধিকারই নেই। কারণ দু’দিন আগেই তাঁকেও দল থেকে চিঠি দিয়ে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বহিষ্কারের পরের দিন তাঁদের মৌখিক ভাবে দলে ফেরানো হলেও তা চিঠি দিয়ে জানানো হয়নি। তাই তাঁদের বহিষ্কৃত হিসেবেই গণ্য করতে হবে।

অখিলেশ শিবিরের পাল্টা যুক্তি, তাঁদের প্রথমে শো-কজ করা হয়। তার জবাব দেওয়ার আগেই বহিষ্কার করা হয়। দলের নিয়মানুযায়ী, এটা করা যায় না। আর সেই নিয়ম মানলে অখিলেশ-রামগোপাল বহিষ্কৃত হননি। তা ছাড়া দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কের সমর্থন যে অখিলেশের পিছনে, তা-ও কমিশনকে জানানো হবে।

কমিশন জানাচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে দু’পক্ষকেই নিজেদের বক্তব্য রাখার জন্য সময় দেওয়া হয়। গোটা প্রক্রিয়া মিটতে প্রায় তিন-চার মাস লাগে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্য। ক’দিনের মধ্যেই রাজ্যে ভোট। এই অবস্থায় দুই শিবিরই সাইকেলের মালিকানা দাবি করলে প্রতীকটিকে ‘ফ্রিজ’ করতে পারে কমিশন। অর্থাৎ কেউই ওই প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না। প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশির কথায়, ‘‘নিষেধাজ্ঞা জারি হবে দলের নাম ব্যবহারেও।’’ নতুন প্রতীক নিয়ে ভোটে লড়তে হবে দু’পক্ষকে। ভোট মিটলে শুনানির পর বিষয়টির নিষ্পত্তি করবে কমিশন।

নতুন দল ও নতুন প্রতীক নিয়ে ভোটে নামতে হলে ভরাডুবি নিশ্চিত বুঝেই দু’পক্ষ রফার পথ খুঁজছে। সক্রিয় হয়েছেন সপা-র বাঙালি নেতা মৎস্যমন্ত্রী কিরণময় নন্দ।

দ্বন্দ্ব মিটবে কি, প্রশ্ন সেটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Samajwadi Party Two Sides Agreement
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE