Advertisement
০৬ মে ২০২৪
National News

আদিবাসী ঘরে অমিতের নৈশভোজ, নিমেষ পৌঁছল এলপিজি-বেসিন-কুলার

‘আহার’ই এখন রাজনীতি। আহারেই জনসংযোগ। শুরু হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ থেকে। তার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্র বারাণসীতে। এ বার গুজরাতে। নিজের রাজ্যে ‘বুথ চলো’ কর্মসূচিতে সামিল হয়ে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ রাতের খাওয়া সারলেন আদিবাসী পরিবারের ঘরে।

গুজরাতে আদিবাসী পরিবারের ঘরে নৈশভোজে অমিত শাহ। ছবি:পিটিআই।

গুজরাতে আদিবাসী পরিবারের ঘরে নৈশভোজে অমিত শাহ। ছবি:পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৭ ১৯:৫৭
Share: Save:

‘আহার’ই এখন রাজনীতি। আহারেই জনসংযোগ।

শুরু হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ থেকে। তার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্র বারাণসীতে। এ বার গুজরাতে। নিজের রাজ্যে ‘বুথ চলো’ কর্মসূচিতে সামিল হয়ে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ রাতের খাওয়া সারলেন আদিবাসী পরিবারের ঘরে। বাংলায় যাঁর ঘরে দুপুরের খাওয়া সেরেছিলেন শাহ, ভিড়ের চাপে তাঁর বাড়ির দাওয়া বসে গিয়েছিল বলে খবর। গুজরাতে কিন্তু আদিবাসী পরিবারটির হাল তেমন হয়নি। বরং ওয়াশ বেসিন, এয়ার কুলার, এলপিজি স্টোভে সেজে উঠল একচিলতে গেরস্থালি।

গুজরাতের ছোটা উদয়পুর জেলায় সম্প্রতি সফর করেছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। আদিবাসী প্রধান জেলা ছোটা উদয়পুরে বিজেপি-র জনভিত্তি কোনও কালেই খুব দৃঢ় নয়। কংগ্রেসের গড় ওই জেলা। এলাকার বিধায়কও কংগ্রেসের। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে গুজরাতের ২৬টি আসনের সব ক’টিই জিতেছিল বিজেপি। অন্য সব আসনে জয় এসেছিল হইহই করে। ছোটা উদয়পুরে কিন্তু কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হয়েছিল। কয়েক দশক ধরে গুজরাতে বিজেপি-র শাসন চললেও ছোটা উদয়পুর বা সবরকাঁথার মতো আদিবাসী প্রধান জেলাগুলিতে গেরুয়া ব্রিগেড এখনও দাঁত ফোটাতে পারেনি সে ভাবে। কিন্তু এ বার সেই সব এলাকাতেও প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে মোদী-শাহের দল। সংরক্ষণ আন্দোলনের ধাক্কায় নিজেদের দীর্ঘ দিনের ভোটব্যাঙ্ক পটেল-পতিদারদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে বিজেপি-র। বিজেপি শাসিত রাজ্যে দলিত নির্যাতনের বেশ কয়েকটি ঘটনা বিরূপ প্রভাব ফেলেছে দলিতদের মধ্যেও। তাই কোনও ঝুঁকি নিতে চান না অমিত শাহ। যেখানে যেটুকু ক্ষতি হয়েছে, তা মেরামত করার চেষ্টা তো চলছেই, একই সঙ্গে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও চলছে এত দিন ধরে বিজেপি থেকে দূরে সরে থাকা সম্প্রদায়গুলিকে কাছে টেনে।

নকশালবাড়িতে এক দলিত পরিবারের বারান্দায় বসে দুপুরের খাওয়া সারছেন অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।

এমন এক পরিস্থিতিতেই মঙ্গলবার ছোটা উদয়পুরের দেভালিয়া গ্রামে জনসংযোগ কর্মসূচি নিয়েছিলেন অমিত শাহ। আদিবাসী গ্রাম। রাতের খাওয়া সেই গ্রামেই সারবেন বলে স্থির করেছিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি। যাঁর বাড়িতে নৈশভোজ সারার কথা ছিল অমিত শাহের, সেই বিজেপি কর্মী পোপটভাই রাঠওয়ার কাছে কিন্তু আশীর্বাদ হলেই এল গোটা ঘটনাটা। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি আদিবাসী পরিবারের ঘরে বসে রাতের খাওয়া সারবেন, ন্যূনতম পরিকাঠামোটুকু তো থাকা দরকার। তাই স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীরাই সে ব্যবস্থা সেরে ফেলেন। পোপটভাইয়ের বাড়িতে দ্রুত পৌঁছে যায় এলপিজি সিলিন্ডার এবং স্টোভ। গৃহস্বামীর চিন্তা অবশ্য তাতেও কাটছিল না। অত বড় ভিভিআইপি যদি শৌচাগারে যেতে চান, তা হলে কী হবে? তৈরি হয়ে যায় নতুন শৌচাগারও। বসানো হয় ওয়াশ বেসিন। এতেই থামেননি স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। একজোড়া এয়ার কুলারও ঢুকিয়ে দেওয়া হয় পোপটভাইয়ের ছোট্ট গেরস্থালিতে।

আরও পড়ুন: লোকে হাসুক, হাল ছাড়ছেন না এই ‘ময়ূর বিচারপতি’

নির্বিঘ্নেই মিটেছে নৈশভোজ। শুধু অমিত শাহ নন, পোপটভাইয়ের ঘরে রাতের খাওয়া সারেন বিজেপির গুজরাত পর্যবেক্ষক ভূপেন্দ্র যাদব, রাজ্য সভাপতি জিতু বাঘানি, বেশ কয়েক জন মন্ত্রী, সাংসদ এবং দলীয় পদাধিকারী। তবে নৈশভোজ সেরে অমিত শাহ ফিরে যাওয়ার পর কোনও বিতর্ক যাতে না হয়, সে বিষয়ে গুজরাত বিজেপি অত্যন্ত সতর্ক নজর রেখেছিল। পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়িতে দলিত বাড়ির দাওয়ায় বসে দুপুরের খাওয়া সেরেছিলেন শাহ। ভিড়ের চাপে বাড়ির দাওয়া বসে গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছিল। অন্য দিকে, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সম্প্রতি গিয়েছিলেন পাক হামলায় শহিদ হওয়া সেনাকর্মী প্রেম সাগরের বাড়িতে। যোগীর সফরের আগে সে বাড়িতে সোফা, কার্পেট, এসি মেশিন পাঠিয়ে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। যোগী ফিরে যেতেই সে সব তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। শহিদের পরিবারের সঙ্গে এ রকম আচরণ নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। ছোটা উদয়পুরে অমিত শাহের সফরকে ঘিরে এই ধরনের কোনও বিতর্ক অবশ্য আর উঠতে দেয়নি বিজেপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE