Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
কাশ্মীর সমস্যা থেকে গো-তাণ্ডব

লালকেল্লার মঞ্চ থেকে সকলকে নিয়ে চলার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার মঞ্চে আজ কাশ্মীর নিয়ে সোজাসাপটা এমন কথা বললেন মোদী, যেটি এত দিন ধরে শুনতে চাইছিল উপত্যকা। অটলবিহারী বাজপেয়ী বলতেন ‘ইনসানিয়ত, কাশ্মীরিয়ত, জামুরিয়ত’-এর কথা।

নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৭ ০১:৩৩
Share: Save:

কাশ্মীর-চিন-পাকিস্তান-শিশুমৃত্যু, গো-তাণ্ডব— গত তিন বছর ধরে নানা বিষয়ে দেশব্যাপী তুমুল বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে আজ অন্য পথ নিলেন প্রধানমন্ত্রী। বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ নিরন্তর শুনতে হচ্ছে তাঁকে। লালকেল্লার মঞ্চ থেকে এ দিন তাই ‘সকলকে নিয়ে চলার’ বার্তাই দিলেন।

কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, এ সব তো মুখের কথা। প্রধানমন্ত্রী বললেন, কিন্তু নরেন্দ্র মোদী মানবেন কী?

স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার মঞ্চে আজ কাশ্মীর নিয়ে সোজাসাপটা এমন কথা বললেন মোদী, যেটি এত দিন ধরে শুনতে চাইছিল উপত্যকা। অটলবিহারী বাজপেয়ী বলতেন ‘ইনসানিয়ত, কাশ্মীরিয়ত, জামুরিয়ত’-এর কথা। আজ মোদী আরও এক ধাপ উঠে বললেন, গালি বা গুলি নয়, গলায় মিলেই সমস্যা মিটবে। বুঝিয়ে দিলেন, মুষ্টিমেয় বিচ্ছিন্নতাবাদীর থেকে কাশ্মীর আলাদা। সন্ত্রাবাদের বিরুদ্ধে বলা মানেই কাশ্মীরের বিরুদ্ধে বলা নয়। কাশ্মীরিদের বুকে টেনে নেওয়ার এই কথাটাই এত দিন মোদীর মুখ থেকে বেরোয়নি। আজ সেটিই হল।

আরও পড়ুন: দুর্নীতি দমনে সরব মোদী, জবাব নেই নোট ফেরতের প্রশ্নে

শুধু এটুকু নয়। পরতে পরতে শোনালেন ভিন্ন সুর। ভারত-ছাড়োর স্লোগান বদলে বললেন ‘ভারত-জোড়ো’। বললেন, এ হল গাঁধী-বুদ্ধর ভূমি। শান্তি, সদ্ভাবনা আর ঐক্য নিয়ে চলে দেশ। এই প্রসঙ্গে পরোক্ষে ফের টেনে আনলেন গো-রক্ষকদের তাণ্ডব প্রসঙ্গ। হিংসা ছাড়তে বললেন। বললেন, সাম্প্রদায়িকতা, জাতিবাদ নিয়ে কোনও সমঝোতা হবে না। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান ও চিন নিয়ে তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেও লালকেল্লা থেকে কোনও সংঘাতের বার্তা কিন্তু দিলেন না মোদী। শুধু ভারত সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত বলে নাম না করেই ছুঁয়ে গেলেন প্রসঙ্গ।

বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে যখন নানা ভাবে বিবাদ বাধছে, সেই সময় সব রাজ্যকে সঙ্গে নিয়ে চলার উপরেই জোর দিলেন বারবার। পূর্ব ভারতের উন্নয়নের নামে পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশার নাম করলেন। যেখানে রাজনৈতিক ভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য মুখিয়ে রয়েছেন তাঁর সেনাপতিরা। লালকেল্লা থেকে এ দিন বারবার সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, ‘টিম ইন্ডিয়া’র ডাক দিলেন। বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে শিশুমৃত্যু নিয়ে তোলপাড় চললেও এত দিন চুপ ছিলেন মোদী। চাপের মুখে আজ বক্তৃতার শুরুতেই এই নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি।

এ সব দেখে বিজেপির অনেক নেতা মনে করছেন, তিন বছর আগে এই মোদী নিজের বক্তৃতায় নানা এজেন্ডা তৈরি করতেন। এখন সে নিয়েই বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। সে কারণেই এমন বদল। আর এখানেই নিজেদের জয় দেখছে বিরোধীরা। কংগ্রেসের প্রথম সারির এক নেতার কথায়, ‘‘একজোট বিরোধীরা যে চাপ তৈরি করতে পেরেছে, তার ফলেই মোদীকে এখন এ ভাবে রক্ষণাত্মক পথে হাঁটতে হচ্ছে।’’

কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ২ কোটি রোজগার দেবেন বলেছিলেন। আজ বলছেন, নিজেরা রোজগার খুঁজুন। নোট বাতিলে কত কাজ হারিয়েছে, তার ব্যাখ্যা নেই। কৃষকদের সহায়ক মূল্য বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি মানেননি। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জিএসটির বিরোধিতা করেছিলেন। আজ বিরোধীদের সমর্থনে পাশ করা জিএসটির কৃতিত্ব একা নিচ্ছেন। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা বললেন, কিন্তু তার পরেও সন্ত্রাস চলছে। নোট বাতিলের পর দাবি করেছিলেন, সন্ত্রাস, মাওবাদ, দুর্নীতি ঘুচবে। সবই চলছে রমরমিয়ে!’’ একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কাশ্মীর নিয়েও মুখে যা বলবেন, হয়তো কাজে করবেন তার উল্টো!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE