Advertisement
০৩ মে ২০২৪
National

ট্রাম্পের হাত ধরেই পাকিস্তানকে আরও চাপে ফেলতে চায় ভারত

‘শত্রুর শত্রু আমার মিত্র’, এই যুক্তিতে ভাবী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অদূর ভবিষ্যতে ‘বন্ধু’ হয়েই যেতে পারেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর! ক্ষমতাসীন হওয়ার পর গত দু’বছরে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র স্লোগানের পালে যে তেমন বাতাস লাগেনি, অঙ্কের নিরিখে যে ততটা বড় বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি ভারতে! তাই এক জন আদ্যোপান্ত ‘ব্যবসায়িক’ (পড়ুন, প্রফেশনাল) মনোবৃত্তির মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তাঁর ‘আপৎকালীন বন্ধু’ হিসেবে পাওয়াটা খুব জরুরি ভারতের প্রধানমন্ত্রীরও।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ১৯:০২
Share: Save:

‘শত্রুর শত্রু আমার মিত্র’, এই যুক্তিতে ভাবী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অদূর ভবিষ্যতে ‘বন্ধু’ হয়েই যেতে পারেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর! ক্ষমতাসীন হওয়ার পর গত দু’বছরে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র স্লোগানের পালে যে তেমন বাতাস লাগেনি, অঙ্কের নিরিখে যে ততটা বড় বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি ভারতে! তাই এক জন আদ্যোপান্ত ‘ব্যবসায়িক’ (পড়ুন, প্রফেশনাল) মনোবৃত্তির মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তাঁর ‘আপৎকালীন বন্ধু’ হিসেবে পাওয়াটা খুব জরুরি ভারতের প্রধানমন্ত্রীরও। দেওয়া-নেওয়ার ‘স্বার্থে’ই ট্রাম্প-মোদী ‘বন্ধুত্ব’ আগামী দিনে পাকাপোক্ত হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল। এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশ।

‘বন্ধু’ হয়ে ওঠার জন্য কিন্তু প্রথমে হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্পই। তখন তিনি প্রেসিডেন্ট পদ-প্রার্থী। নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পের মুখে বার বার উঠে এসেছিল ভারতের প্রসঙ্গ। ফুটে উঠেছিল ভারত সম্পর্কে তাঁর পরিণত ভাবনা-চিন্তা। হাবেভাবে, কথায়-বার্তায়, প্রচারে বেরিয়ে ট্রাম্প বেশ কয়েক বার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, বেশ কয়েকটি ব্যাপারে ভারত তাঁর ‘পছন্দের দেশ’! আদ্যোপান্ত ‘ব্যবসায়িক’ মনোবৃত্তির ট্রাম্প তাঁর প্রচারে বার বার উল্লেখ করেছিলেন ভারতের অর্থনৈতিক বাড়-বাড়ন্তের কথা। দ্রুত আর্থিক শ্রীবৃদ্ধির কথা। বলেছিলেন, ‘দেশটা (ভারত) বেশ তাড়াতাড়ি বাড়ছে’। পরোক্ষে ভারতীয়দের মেধা ও দক্ষতাকে মেনে নিয়ে ট্রাম্প প্রচারে এও বলেছিলেন, ‘ওরা (ভারতীয়রা) আমাদের (মার্কিন জনতা) চাকরিগুলি নিয়ে নিচ্ছে!’ আবার ভারত বার বার সন্ত্রাসবাদের নিশানা হচ্ছে বলে সহানুভূতিও প্রকাশ করেছিলেন। এও বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলার দিকেই তাকিয়ে রয়েছি।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ মনে করছেন, এ ভাবেই পয়লা দফায় ভারতের দিকে ‘বন্ধুত্বের’ হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছেন ভাবী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিদেশি (পড়ুন, মার্কিন) বিনিয়োগের জন্য ভারতকে ‘পছন্দের জায়গা’ বলেই মনে করেন ট্রাম্প। আবার সন্ত্রাসবাদের ঝাপটা যে ভারতের গায়ে বার বার লাগছে, তা নিয়ে সহানুভূতি দেখিয়ে পরোক্ষে ট্রাম্প বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন, এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান তাঁর ‘অপছন্দের’! এ বার পা বাড়ানো দরকার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর।

তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আগামী দিনে ট্রাম্প কী ভাবে বিশ্ব পরিস্থিতি সামলান, তার ওপরেও ভারতের পা বাড়ানো নির্ভর করছে! সে ক্ষেত্রে দিল্লির ভরসা এইটুকুই, প্রচারে বেরিয়ে চিন-টিনের কথা বিশেষ বলেননি ট্রাম্প। কিন্তু দক্ষিণ চিন সাগর ইস্যুতে যে দেশগুলি ‘আরও বড় শত্রু’ হয়ে উঠেছে চিনের, সেই দক্ষিণ কোরিয়া আর জাপানের কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। বলেছিলেন, ‘চিনের সঙ্গে পাল্লা দিতে অস্ত্রশস্ত্রে আরও বলীয়ান হয়ে ওঠা উচিত দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের’। জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়া যে অদূর ভবিষ্যতে এশিয়ায় বড় শক্তি হয়ে উঠতে চলেছে, সে কথাও কবুল করতে দ্বিধা করেননি ট্রাম্প। সেই শক্তির পালে হাওয়া জোগাতে তাঁর আগ্রহ-উৎসাহে যে কোনও খামতি থাকবে না, সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। বলেছিলেন, ‘প্রয়োজনে দক্ষিণ চিন সাগরে মার্কিন সমর-সজ্জা আরও বাড়বে।’

ফলে ‘শত্রুর শত্রু’র ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ‘বন্ধু’ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা যে বাড়ল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সৌজন্যে চিন! দক্ষিণ চিন সাগরে ট্রাম্প মার্কিন সমর-সজ্জা বাড়িয়ে বেজিংকে চাপে রাখার চেষ্টা করলে দিল্লি যতটা খুশি হবে, ততটাই খুশি হবে টোকিও। সাগরে চিন-বিরোধী শক্তিটা বাড়লে এশিয়ার মাটিতেও যে দেশগুলি এখন বেজিংকে ঠেকাতে ফিলিপিন্সের পিছু নিয়েছে, তারা আরও বেশি করে দিল্লি, টোকিওর পাশে এসে দাঁড়াবে। যেহেতু এশিয়ার দেশগুলি চিনা বাণিজ্যের ‘তীর্থ ক্ষেত্র’, তাই এশিয়ার দেশগুলিতে এই ভাবে চিনের ‘দাদাগিরি’ কমানো সম্ভব হলে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র স্লোগানের পালে হাওয়াটা হয়ে উঠতে পারে জোরালো।

ভারতের পক্ষে আরও একটু সুখবর এটাই যে, গোড়া থেকেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি মনে-প্রাণে চান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হোন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পুতিন যদি বিচক্ষণ রাজনীতিক হন, তা হলে ট্রাম্পও তাঁর ‘দুর্দিনের বন্ধু’কে প্রেসিডেন্ট হয়ে ভুলে যাওয়ার ধৃষ্টতা নিশ্চয়ই দেখাবেন না! সে ক্ষেত্রে রুশ বন্ধুত্ব রাখতে গিয়ে ট্রাম্পের ‘চিনের খপ্পরে’ পড়ার সম্ভাবনা কম। তাতে দিল্লির লাভ বেশি!

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, আগামী দিনে ট্রাম্পের আফ-পাক নীতির ওপরেও নজর রাখবে ভারত। ট্রাম্প যদি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে সেটা যেমন উদ্বেগের কারণ হবে দিল্লির, তেমনই ট্রাম্প প্রশাসন যদি তালিবানদের বিরুদ্ধে আরও বেশি কড়া হয়, তা হলে তা ভারতের পক্ষে স্বস্তিকর হয়ে উঠবে।

আরও পড়ুন- হাত মিলিয়ে চলব, জিতে বললেন ট্রাম্প

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE