Advertisement
E-Paper

এই আজাদির অপেক্ষা করেছি ২৩ বছর: সঞ্জয়

ঠোঁটের কোণে ফিরে এসেছে স্বস্তির হাসি। মুম্বই বিস্ফোরণ মামলায় পাঁচ বছরের কারাবাসের বৃত্ত পূর্ণ করে আজ, মুক্তি পেলেন সঞ্জয় দত্ত। আর ইয়েরওয়াড়া জেল থেকে বেরোনো থেকে মুম্বইয়ের বাড়ি পৌঁছনো পর্যন্ত— দিন ভর ঠোঁটে লেগেই ছিল মুন্নাভাইয়ের চেনা হাসিটা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৯
পাঁচ বছর পরে মুক্তি পেলেন সঞ্জয় দত্ত। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে স্ত্রী মান্যতা এবং ছেলে শাহরান ও মেয়ে ইকরার সঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মুন্নাভাই। ছবি: পিটিআই।

পাঁচ বছর পরে মুক্তি পেলেন সঞ্জয় দত্ত। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে স্ত্রী মান্যতা এবং ছেলে শাহরান ও মেয়ে ইকরার সঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মুন্নাভাই। ছবি: পিটিআই।

ঠোঁটের কোণে ফিরে এসেছে স্বস্তির হাসি।

মুম্বই বিস্ফোরণ মামলায় পাঁচ বছরের কারাবাসের বৃত্ত পূর্ণ করে আজ, মুক্তি পেলেন সঞ্জয় দত্ত। আর ইয়েরওয়াড়া জেল থেকে বেরোনো থেকে মুম্বইয়ের বাড়ি পৌঁছনো পর্যন্ত— দিন ভর ঠোঁটে লেগেই ছিল মুন্নাভাইয়ের চেনা হাসিটা। স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে নিয়েই বসলেন সাংবাদিকদের সামনে। ষোলো আনা ফিল্মি কায়দায় জানিয়ে দিলেন, ‘‘আই অ্যাম নট আ টেররিস্ট।’’ বললেন, এই ‘আজাদি’র জন্য তেইশটা বছর অপেক্ষা করেছিলেন তিনি। অনুরোধ করলেন, ‘‘অস্ত্র আইনে জেলে গিয়েছিলাম। দয়া করে আমাকে মুম্বই বিস্ফোরণে দোষী বলবেন না!’’ ২০১৩-তে টাডা আদালত তাঁকে অস্ত্র মামলায় দোষী সাব্যস্ত করার পর এমনই এক সাংবাদিক বৈঠকে বোন প্রিয়া দত্তকে জড়িয়ে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেন সঞ্জয়। আজ সম্পূর্ণ হল বৃত্ত। আজ, ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রীর সঙ্গে ক্যামেরাবন্দি হলেন হাসিমুখে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা ভাবেই বললেন তাঁর পরিবারের কথা, জেলের থাকার দিনের কথা, আদালতের কথা। বললেন, এই দেশ তাঁর ধাত্রী মা। এই দেশে জন্মেছেন বলে গর্ববোধ হয়। পরিবারের কথা উঠতেই বললেন, ‘‘আজ, বাবাকে খুব মিস করছি।’’ জানালেন, প্রত্যেকটা দুর্বল মুহূর্তে, প্রতিবার কঠিন সময়ে সাহস জুগিয়েছেন তাঁর স্ত্রী মান্যতা। জেলে ঠোঙা বানিয়ে আয় করা সাড়ে চারশো টাকা আজ বাড়ি ফিরেই সংসার-কর্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছেন। উচ্ছ্বসিত মান্যতাও বলছেন, ‘‘এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না, ও সত্যিই বাড়ি ফিরে এসেছে।’’ সঞ্জয়ের কথা প্রসঙ্গে উঠে এসেছে তাঁর মা নার্গিসের কথাও। বললেন ‘‘খুব ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছি। আজ স্বাধীন হওয়ার পর মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে এসেছি।’’ মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘আদালত বলেছে, আমি সন্ত্রাসবাদী নই। এটা খুব বড় ব্যাপার। সুপ্রিম কোর্টও সেই কথায় সায় দিয়েছে। আজ যদি বাবা বেঁচে থাকতেন...।’’ সঞ্জয়ের মুক্তির দিনে বাবার কথা উঠে এসেছে তাঁর বোন তথা কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়া দত্তের মুখেও। দাদার জন্য সকাল থেকে বাড়িতেই অপেক্ষা করছিলেন প্রিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘এটা আমাদের জন্য খুব আবেগের দিন। বাবা থাকলে আজকের দিনটা তাঁর জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন হতো।’’

জেলে থাকাকালীন ভাল ব্যবহারের পুরস্কার হিসেবে কারাবাসের পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আট মাস আগেই মুক্তি পেয়েছেন সঞ্জয়। আজ সকাল আটটা পঁয়তাল্লিশ নাগাদ বেরিয়েছেন ইয়েরওয়াড়া থেকে। বাইরে গাড়িতে অপেক্ষারত তাঁর স্ত্রী মান্যতা, পরিচালক বন্ধু রাজকুমার হিরানি। তবে গাড়িতে ওঠার আগে পিছন ফিরে জাতীয় পতাকার দিকে তাকিয়ে একেবারে নায়কের ভঙ্গিতেই সেলাম ঠুকলেন। চুমু খেলেন মাটিতে। তার পর সোজা পুণের বিমানবন্দরে। চার্টার্ড ফ্লাইটে উড়ে এলেন মুম্বই।

শহরে ফিরে প্রথমেই গেলেন সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরে। সেখান থেকে মেরিন লাইন্সে। মা নার্গিসের কবরে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরলেন পালি হিলসের বাড়িতে। সঞ্জয়ের ফ্ল্যাট ‘ইম্পেরিয়াল হাইটসে’র সদর দরজায় লাগানো হয়েছে সুনীল দত্তের ছবি। ফুলের তোড়া আর স্বাগত-বার্তা লেখা পোস্টারে ভরে গিয়েছে দরজা। কোনওটা বলছে, ‘‘ওয়েলকাম ব্যাক সঞ্জু বাবা’’, কোনওটায় আবার মা নার্গিসের সঙ্গে মুন্নাভাইয়ের ছোটবেলার ছবি।

পড়ুন

• মুক্তির পর মুন্নার মুহূর্ত

ভিড় করে আসা সুখস্মৃতির সঙ্গে সঙ্গে ফিরে এসেছে বিতর্কও। জেলে থাকাকালীন একাধিক বার বিভিন্ন কারণে প্যারোলে লম্বা ছুটি পেয়েছেন ৫৬ বছরের এই অভিনেতা। কখনও স্ত্রীর অসুখে, কখনও আবার নিজের শরীর খারাপ থাকার কারণে। অভিযোগ উঠেছে, জনপ্রিয় অভিনেতা বলেই সঞ্জয়কে বাড়তি সুবিধে পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। আজ সকালে সঞ্জয় ছাড়া পাওয়ার আগে এই বাড়তি সুবিধের অভিযোগ তুলে জেলের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কয়েক জন। আজ যদিও সকলের সামনেই সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তারকা। বলেছেন, ‘‘এটা ভুল ধারণা। আমাকে কোনও বাড়তি সুবিধে দেওয়া হয়নি। বরং সেলিব্রিটি হওয়ার জন্য আমাকে অনেক কিছুই করতে দেওয়া হয়নি।’’ সময় সম্পূর্ণ হওয়ার আট মাস আগে এই অভিনেতার মুক্তির বিরোধিতা করে ইতিমধ্যেই বম্বে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। যদিও সঞ্জয়ের মুক্তির পর সেই মামলা স্থগিত করে দেওয়া হয়।

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। তবে আজকের মুক্তির দিনে তা মনে রাখছেন না মুন্নাভাই। মা-বাবার স্মৃতি আর পরিবারের কথাই বার বার বলছেন। সঞ্জুর মুক্তির খবরে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোয় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাঁর ভক্তরা। অভিনন্দন জানিয়েছেন বলিউডের সহকর্মীরা। আর তা নিয়েই থাকতে চাইছেন ‘স্বাধীন’ সঞ্জয়।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy