চোখের সামনেই থাকবে এক টুকরো চাঁদ!
অপেক্ষা আর কয়েকটা মাস। তার পরেই চাঁদের থেকে আনা এই পাথর চলে আসবে এ দেশের আমজনতার সামনে। চন্দ্রাভিযানের বছরে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরিকে যা উপহার দিয়েছিলেন ভারতে নিযুক্ত সেই সময়কার মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ বি কিটিং। স্ফটিক আধারে রাখা চাঁদের পাথরের পাশেই থাকছে মাউন্ট এভারেস্ট-এর দু’টি পাথর। এর একটি বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদকে উপহার দিয়েছিলেন খোদ তেনজিং নোরগে। অন্যটি জ্ঞানী জৈল সিংহের হাতে তুলে দিয়েছিলেন বাচেন্দ্রি পাল।
এ সব দেখতে হলে আসতে হবে রাষ্ট্রপতি ভবনের অভিনব সংগ্রহশালায়। গত দু’বছর ধরে চলা প্রস্তুতিপর্ব শেষ। আগামিকাল সোমবারই উদ্বোধন হচ্ছে সংগ্রহশালাটির। সোমবারই রাষ্ট্রপতি হিসেবে চার বছর পূর্ণ করছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেই উপলক্ষে সন্ধেয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসছেন রাষ্ট্রপতি ভবনে। তিনিই সংগ্রহশালাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। আজ জানানো হয়েছে, ২ অক্টোবর থেকে সকলের জন্য সংগ্রহশালাটি খুলে দেওয়া হবে। টিকিট লাগবে মাথা পিছু ৫০ টাকা।
প্রযুক্তি ও ঐতিহাসিক গুরুত্বে এমন সংগ্রহশালার জুড়ি মেলা ভার। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রের বক্তব্য, প্রণব মুখোপাধ্যায় নির্বাচিত হওয়ার পর চার বছরে যে বিভিন্ন বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন, তার মধ্যে এটি নিঃসন্দেহে অন্যতম সেরা। তিনতলা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত এই ভবনটির দু’টি তলা ভূগর্ভস্থ। রাষ্ট্রপতির সচিব অমিতা পল জানিয়েছেন, ‘‘প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেই ভবনের দরজা সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, চেয়েছিলেন দেশের ঐতিহ্য সংরক্ষিত হোক। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ীই এই কাজ হয়েছে।’’
এক লাখ কুড়ি হাজার বর্গফুটের এই বিশাল কর্মকাণ্ডের প্রধান রূপকার সরোজ ঘোষ জানাচ্ছেন, ‘‘সাধারণত আমাদের দেশের সংগ্রহশালাগুলি বস্তু-নির্ভর হয়। কিন্তু আমরা বস্তু বা অবজেক্ট-এর পাশাপাশি ঘটনা নির্ভর বিষয়ও রাখছি।’’ ব্রিটিশ আমলের এই গভর্নমেন্ট হাউস তথা আজকের রাষ্ট্রপতি ভবনের সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলনের যে পর্ব জড়িয়ে রয়েছে, সেটিকে ধরে রাখা হয়েছে সংগ্রহশালায়। আর সেই ‘ধরে রাখার’ জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তিরও আমদানি করা হয়েছে। কোথাও ‘থ্রি ডি হলোগ্রাফিক প্রজেকশান’-এ দেখা যাচ্ছে কাকচক্ষু স্ফটিকের মধ্যে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন রাজেন্দ্র প্রসাদ! আবার কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজে দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন লর্ড আরউইন-এর সঙ্গে চুক্তি করে হাউস থেকে বেড়িয়ে আসছেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী। এখানেই শেষ নয়, তাজ্জব হয়ে দর্শকরা দেখবেন গাঁধীর পিছনে পিছনে হেঁটে আসছেন তাঁরাও!
তিনটি তলার একটি বরাদ্দ হয়েছে ১৩ জন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির জন্য। তাঁদের ব্যবহার করা বিভিন্ন সামগ্রী, বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া উপহার (সোনার তরবারি থেকে মশলা দিয়ে তৈরি জাহাজ) রয়েছে সেখানে। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত কক্ষে, অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে রয়েছে তাঁর ব্যবহার করা প্রায় এক ডজন পাইপও! অন্য তলায় রয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবনে সংরক্ষিত বহু দুর্মূল্য তৈলচিত্র, স্থাপত্যকর্ম। রাষ্ট্রপতি ভবনকে জনকল্যাণের সঙ্গে যুক্ত করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। গ্রন্থাগার, ছবি আঁকা, যোগব্যায়াম-সহ বিভিন্ন বিষয়ের ক্লাস শুরু হয়েছে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য। লেখক, শিল্পী, গবেষক, প্রযুক্তিবিদদের রাষ্ট্রপতি ভবনের আতিথ্য দিয়ে তাঁদের কর্মশালাও চালু করা হয়েছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি ভবনে এসে থেকে গেলেন সাহিত্যিক অমিতাভ ঘোষ। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজ্যপালদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রণববাবু। তাঁর নির্দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy