প্রতীকী ছবি
ভোর সাড়ে পাঁচটা। রাজধানীর আকাশে ভাল করে আলো ফোটেনি তখনও। পূর্ব দিল্লির পাণ্ডব নগরের রাস্তায় লোকজন কমই। আচমকাই দেখা যায় এক মহিলা নগ্ন অবস্থায় এ-দিক ও-দিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আসলে সাহায্য চাইছেন। কেউ যদি তাঁকে থানা পর্যন্ত পৌঁছে দেন। কিন্তু আশপাশের লোকজন নির্বিকার। পথচলতি মানুষ তাঁর দিকে তাকিয়েও মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন। একটা বড় সাদা গাড়ি থামল বটে, কিন্তু কোনও সাড়া না দিয়েই হুশ করে বেরিয়ে গেল। শেষমেশ দাঁড়ায় একটি অটো। তার চালকই মহিলাকে থানায় পৌঁছে দিতে রাজি হন। তত ক্ষণে স্থানীয় এক বাসিন্দার ফোনে চলে আসে পুলিশের একটি আপৎকালীন গাড়িও। অবশেষে সেই গাড়িই তাঁকে নিকটবর্তী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে শারীরিক পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
হোলির ভোরে এমনই এক অমানবিক মুখ দেখাল নির্ভয়ার শহর। নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের সাড়ে চার বছর পরেও দিল্লির পরিস্থিতি যে খুব একটা বদলায়নি, সেই ছবিটাও আরও এক বার স্পষ্ট হলো। পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলাকে গণধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে পাঁচ যুবককে। ধৃতেরা হল নবীন কুমার, প্রতীক কুমার, বিকাশ মেহরা, স্বরিৎ এবং লক্ষ্য ভাল্লা। এদের মধ্যে চার জন নয়ডার কল সেন্টারের কর্মী। স্বরিৎ একটি বেসরকারি সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার। গণধর্ষণ, জোর করা আটকে রাখা-সহ একাধিক মামলা রুজু করা হয়েছে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে।
আজ ভোরের গোটা ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ হাতে পেয়েছে সংবাদমাধ্যম। টিভি চ্যানেলে বিবস্ত্র মহিলার আকুতিতে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া দিল্লি শহরকে দেখে আঁতকে উঠেছেন অনেকেই।
আরও পড়ুন: জল নিয়ে বিবাদ, জুতোও চাটতে হল অরুণাচল থেকে আসা পড়ুয়াকে
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ছাব্বিশের ওই নেপালি মহিলা বিবাহবিচ্ছিন্না। দুই সন্তানকে নিয়ে দিল্লির মুনিরকা এলাকায় থাকেন।
কী হয়েছিল কাল রাতে? পুলিশকে ওই মহিলা জানিয়েছেন, বিকাশকে তিনি গত কয়েক মাস ধরে চিনতেন। গত কাল হঠাৎই তাঁকে পার্টিতে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করে বিকাশ। তাতে মহিলা রাজি হন। একটি গাড়ি করে পাণ্ডব নগরের ওই ফ্ল্যাটে পৌঁছনোর সময় মহিলার আপত্তি সত্ত্বেও আরও দু’জনকে গাড়িতে তোলে বিকাশ। পরে ওই ফ্ল্যাটে পৌঁছে তিনি দেখেন, সেখানে আরও কয়েক জন যুবক উপস্থিত। সেই সময় বিকাশ কাজ আছে বলে বেরিয়ে যায়। বিকাশের বন্ধুরাই তাঁকে জোর করে মদ খাইয়ে বন্ধ ঘরে ধর্ষণ করেছে বলে মহিলার অভিযোগ। এ কথা পুলিশকে জানালে তার ফল ভাল হবে না বলেও তাঁকে শাসানো হয়েছিল। পরে একটা সময় বিকাশ ফিরে আসে। আজ ভোরে এক যুবক ঘরের তালা খুলে দেওয়ায় মহিলা কোনও মতে বারান্দায় গিয়ে দোতলা থেকে ঝাঁপ দেন। স্থানীয় কেউ কেউ সে দৃশ্য দেখেওছেন। পুলিশ জানিয়েছে, লাফানোর জন্য ওই মহিলার পায়ে আঘাত লেগেছে, তবে তা গুরুতর নয়।
তবে নির্যাতিতা মহিলার বয়ানে কিছু অসঙ্গতি পেয়েছে পুলিশ। তাই তদন্ত এখনও জারি রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy