Advertisement
০৪ মে ২০২৪
চক্ষু ব্যাঙ্ক

রজত জয়ন্তী, তবু শুরু হয়নি কাজ

শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চক্ষু ব্যাঙ্ক কবে চালু হয়েছিল, কেউ বলতেই পারছিলেন না। বরং প্রশ্ন শুনে অনেকের চোখ কপালে! বিস্ময়ের সঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন, এখানে চক্ষু ব্যাঙ্ক? অধ্যক্ষা শিল্পী বর্মন বললেন, ‘‘সে অনেকদিন আগের কথা।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:০১
Share: Save:

শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চক্ষু ব্যাঙ্ক কবে চালু হয়েছিল, কেউ বলতেই পারছিলেন না। বরং প্রশ্ন শুনে অনেকের চোখ কপালে! বিস্ময়ের সঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন, এখানে চক্ষু ব্যাঙ্ক? অধ্যক্ষা শিল্পী বর্মন বললেন, ‘‘সে অনেকদিন আগের কথা।’’ আর প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপস্বপন ধর জানালেন, ‘‘এখন এর বয়স ২৫ ছুঁইছুঁই। রজত জয়ন্তী করা যেতে পারে।’’

কী কাজ এই ব্যাঙ্কের—সে আরেক জটিল প্রশ্ন। শুরুতে দুটো পদ সৃষ্টি হয়েছিল। পাবলিসিটি অফিসার ও পিয়ন। সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল একটা রেফ্রিজারেটর। পাবলিসিটি অফিসার কী প্রচার করবেন, বা কেমন ধরনের জনসচেতনতা কার্যক্রম করবেন, সে সম্পর্কে কখনও কোনও নির্দেশ পাননি। এই দোলাচলে থাকতে থাকতেই তিনি অবসর নিয়েছেন। পদটি থাকলেও সে পদে আর কাউকে নিযুক্তি দেওয়া হয়নি। পিয়নকে হাসপাতালের অন্য কাজে লাগানো হয়। আর রেফ্রিজারেটরটিও কিছুদিন হাসপাতালের অন্য কাজে লেগেছিল।

কেন চক্ষু ব্যাঙ্ক কার্যকর হল না? সন্দীপবাবু জানান, চক্ষু ব্যাঙ্ক তো শুধু ঘোষণা করলেই হয় না। সে জন্য ‘আই ব্যাঙ্ক সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’-র অ্যাক্রেডিটেশন এবং ‘অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট অ্যাক্টে-এর অধীনে রেজিস্ট্রেশন করাতে হয়। এর কোনওটিই শিলচর মেডিক্যাল কলেজের নেই। তাঁর কথায়, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর দুটোর জন্যই আবেদন জানান। হাজার তিনেক টাকার একটা ফি লাগে। প্রথমে তা নগদে পাঠানো হয়েছিল। পরে বলা হয়, ড্রাফট দিতে হবে। তাও করা হয়। সেটা ২০০৯ সাল। পরে দেখা যায়, গুয়াহাটিতে রাজ্য সচিবালয়েই সে ফাইল পড়ে রয়েছে।

কাগজে-কলমে চক্ষু ব্যাঙ্ক রয়েছে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ এবং ডিব্রুগড় মেডিক্যাল কলেজেও। তবে সক্রিয় নয়। ‘ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর কন্ট্রোল অব ব্লাইন্ডনেস’ সে কতারণেই সে দু’টিকে ধর্তব্যের মধ্যে আনছে না। তাদের কথায়, অসমে শুধু দু’টো চক্ষু ব্যাঙ্ক কাজ করছে। সেগুলি হল গুয়াহাটির শঙ্কর নেত্রালয় ও যোরহাটের জেউতি আই ব্যাঙ্ক। দু’টিই গড়ে উঠেছে বেসরকারি উদ্যোগে। শিবসাগর ও তিনসুকিয়ায় জেউতির দুটো আই ডোনেশন সেন্টারও রয়েছে। এই যখন রাজ্যের পরিস্থিতি তখন অধ্যক্ষা শিল্পী বর্মন ফের নতুন করে বিষয়টি নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছেন। তিনি জানান, শিলচর মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু ব্যাঙ্কটিকে কর্মক্ষম করে তুলতে নতুন করে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। এ বার অনুমোদন মিলবে।

এই বছর ভারত সরকার অন্ধত্ব মুক্ত ভারত অভিযানের ডাক দিয়েছে। সে ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আজ ‘সক্ষম’ নামে এক সংস্থা ও শিলচর মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগ যৌথভাবে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সহায়তায় ছিল কেশব স্মারক সংস্কৃতি সুরভি। সারাদিনের অনুষ্ঠানে যেমন সাধারণ মানুষের জন্য নেত্রদান বিষয়ক আলোচনা ছিল, তেমনি চিকিৎসকদের জন্য ছিল টেকনিক্যাল সেশন। প্রথম পর্বে উপস্থিত ছিলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দিলীপচন্দ্র নাথ, জেলা উন্নয়ন কমিশনার মধুমিতা চৌধুরী, মেডিক্যাল কলেজের সুপার এএস বৈশ্য, স্বাস্থ্য বিভাগের তিন যুগ্ম অধিকর্তা সুদীপজ্যোতি দাস, কৃষ্ণা কেম্প্রাই ও উমেশ ফাংচু। উপাচার্য দিলীপচন্দ্র নাথ বলেন, ‘‘চক্ষুদান নিয়ে মানুষ বিভ্রান্তিতে। কোথায় চক্ষু দান করবেন, কী ভাবে চক্ষু সংগ্রহ করা হবে, সে সব বিষয় এখনও একানকার সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট নয়।’’

সক্ষমের পক্ষে চেয়ারপার্সন রুমা দাস, আহ্বায়ক ধ্রুবজ্যোতি নাথ, সাংগঠনিক সচিব মিঠুন রায় ও রাজীব বিশ্বাস জানান, বিভিন্ন কারণে মানুষ অন্ধ হয়। এর মধ্যে কর্নিয়ার জন্য চোখে না-দেখার সমস্যা পুরোপুরি আরোগ্য হয়। সে জন্য অন্যের চোখ থেকে কর্নিয়া নিয়ে তা প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন। মানুষের মৃত্যুর পর ছ’ঘণ্টা পর্যন্ত চোখ সতেজ থাকে। ওই সময়ের মধ্যে তা তুলে এনে প্রতিস্থাপন করতে হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

silchar medical college Rajat jayanti
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE