Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মাধ্যমিকে ভুল প্রশ্নপত্র ২ স্কুলে, ক্ষুব্ধ অসম

বিস্তর সতর্কতা, নজরদারি, জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের তদারকির পরেও ‘অপেশাদার’ বদনাম থেকে রেহাই পেল না অসম মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড বা সেবা।

প্রশ্নফাঁসের জেরে বিক্ষোভ। গুয়াহাটিতে। ছবি: পীতাম্বর নেয়ার।

প্রশ্নফাঁসের জেরে বিক্ষোভ। গুয়াহাটিতে। ছবি: পীতাম্বর নেয়ার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:০০
Share: Save:

বিস্তর সতর্কতা, নজরদারি, জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের তদারকির পরেও ‘অপেশাদার’ বদনাম থেকে রেহাই পেল না অসম মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড বা সেবা। গত বার হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার পর, আজ মাধ্যমিক পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে ভুল করে হোজাইয়ের স্কুলে গণিতের বদলে সমাজ বিজ্ঞান ও বাক্সার বরিমাখা স্কুলে গণিতের বদলে অসমীয়া প্রশ্নপত্র বিলি করা হয়। ফলে শুরু হয় প্রতিবাদ।

হোজাইয়ের জেলাশাসক জানান, প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের রঙের বিভ্রান্তিতে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সমস্যা তেমন বড় কিছু নয়। কিন্তু গণিতের প্রশ্নপত্র আসতে দেরি হওয়ায় বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু হতে দেরি হয়। পরে প্রশ্নপত্রের ফটোকপি করে বিলি করা হয়েছে। আসু এই ঘটনার দায় নিয়ে সেবার সভাপতির ইস্তফা দাবি করেছে। ইস্তফা দাবি করা হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মারও। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষামন্ত্রী ও সেবা প্রধানের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। আসুর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দিসপুরে বসে চমক দিলে হবে না। ছাত্রছাত্রীদের ন্যায় দিতে হবে। যাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় এই কাণ্ড তাদের শাস্তি দিতে হবে।’’

প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট সরকারের কাছে দাখিল করেত বলা হয়েছে। শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, প্রয়োজনে পরীক্ষার তারিখ বদলানো হতে পারে।

এবিভিপির দাবি, তদন্তের আগেই অভিযুক্তদের সাসপেন্ড করতে হবে। প্রশ্নপত্র বিলিতে বাইরের সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেবার সদর দফতরের সামনেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। সেবার প্রধান রমেশচন্দ্র জৈন জানান, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তাঁর জানা নেই। তাঁর কাছে খবর, থানা থেকে প্যাকেট পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার পরে প্যাকেট খুলেই প্রধানশিক্ষক দেখেন বিষয় অন্য। তিনি তা ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু যদি সত্যি প্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকে বা কোনও ছাত্রের হাতে প্রশ্নপত্র গিয়ে থাকে, সেই ঘটনার তদন্ত করা হবে। কিন্তু পরীক্ষা দু’টির দিন বদল হচ্ছে না বলে তিনি জানান। নির্দিষ্ট দিনেই পরীক্ষা হবে। তাঁর বক্তব্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে থাকলে বিকল্প প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে।

শুধু প্রশ্ন ফাঁসই নয়, অনেক স্কুলে পরীক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় ‘গ্র্যাফ পেপার’ পায়নি বলেও অভিযোগ। দক্ষিণ কামরূপ, চাবুয়া, কোকিলা, কলগাছিয়া, অভয়াপুরী-সহ বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষা কেন্দ্রে আলোও ছিল না। আজ সকাল থেকে আকাশ ছিল মেঘলা, অন্ধকার আবহাওয়া। তাই মোমবাতি জ্বালিয়ে অঙ্ক পরীক্ষা দিতে হয়েছে ওই কেন্দ্রগুলিতে। পরীক্ষা কেন্দ্র সিসিটিভি বাধ্যতামূলক করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। কিন্তু অনেক জায়গাতেই ক্যামেরা ছিল বিকল। বজালি হাথিনাপুর স্কুলে সিসি ক্যামেরা চুরি হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ দিকে, নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ে বরপেটা জেলার ১৩টি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে মোট ৩১ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মানকাচর-দক্ষিণ শালমারায় পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে ঢুকে ‘সাসপেন্ড’ হয়েছেন দুই ইনভিজিলেটর শিক্ষক আব্দুর রহিম মণ্ডল ও আবদুল ওয়ারিশ মিয়াঁ। পাশাপাশি, আজ থেকে রাজ্যে শুরু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও শুরু হয়েছে।

আজ মাধ্যমিক পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনও কাছাড় জেলায় টোকাটুকির দায়ে ১৮ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে কচুদরমের আরবি রায় হাই স্কুল ও বিহাড়ার যুধিষ্ঠির সাহা হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের ৫ জন করে পরীক্ষার্থী। লক্ষ্মীপুর মহকুমার নেহরু হাই স্কুল থেকে ৪ জন এবং কাটিগড়ার সিদ্ধেশ্বর হাই স্কুল থেকেও ২ জনকে পরীক্ষার হল থেকে বের করা হয়েছে। বহিষ্কৃত বাকি ২ জন শ্রীকোণা হাই স্কুল ও জনকল্যাণ হাই স্কুলের। অনুপস্থিতিতে কাছাড়ে প্রথম দিনের ইংরেজি পরীক্ষাকে টেক্কা দিয়েছে আজকের গণিত পরীক্ষা। প্রথম দিনে ৩২১ জন ছাত্র পরীক্ষায় বসেনি। এ দিন অনুপস্থিত ছিল ৩৭৫ পরীক্ষার্থী।

মাধ্যমিকের দ্বিতীয় দিন হাইলাকান্দিতে ধরা পড়ল দুই ভুয়ো পরীক্ষার্থী। জেলায় আরও ৬ জন পরীক্ষার্থীকে নকল করার দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, সিসিটিভি ক্যামেরার নজর এড়িয়ে হাইলাকান্দির রাঙ্গাউটি পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছিল দুই ভুয়ো পরীক্ষার্থী। বিদ্যালয় পরিদর্শকের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক এফ লস্কর ওই পরীক্ষাকেন্দ্রে যান। সন্দেহ হওয়ায় দু’জনের পরিচয় জানতে চান তিনি। তখনই পুরো বিষয়টি জানা যায়। দু’জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম আনোয়ার হুসেন লস্কর এবং উবাইদুর রহমান লস্কর। তারা অ্যাডমিট কার্ডে কারচুপি করে নিজেদের ছবি বসিয়েছিল। অতিরিক্ত জেলাশাসক জানান, পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। এ দিনই পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগে ৬ ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
অন্য দিকে, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ঘিরে এ দিন হাইলাকান্দিতেও বিক্ষোভ দেখানো হয়।

উচ্চমাধ্যমিকের অ্যাডমিট ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড দিতে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল করিমগঞ্জের কালীগঞ্জে। কালীগঞ্জ সেন্ট্র্যাল জুনিয়র কলেজের অধ্যক্ষ হুসেন আহমেদকে ঘেরাও করেন উত্তেজিত জনতা। চাপের মুখে পড়ে পরীক্ষার আধঘণ্টা আগে অ্যাডমিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড পরীক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে খবর, করিমগঞ্জ জেলার কালীগঞ্জের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র দিলদার আলি অ্যাডমিট কার্ড পাননি। তা নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছিল। পরীক্ষার আগে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁর কাছে ২৫ হাজার টাকা দাবি করা হয় বলে অভিযোগ। সেই কথাবার্তা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করেন ছাত্রটি।

আজ উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজি পরীক্ষা ছিল। দুপুর দেড়টা থেকে পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু দুপুর ১টা পর্যন্ত তাঁকে অ্যাডমিট কার্ড দেননি অধ্যক্ষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে তা সেগুলি ছাত্রের হাতে তুলে দেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Agitation Madhyamik Examination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE