Advertisement
১১ মে ২০২৪

জোটের সমর্থনে অঙ্কই অস্ত্র ইয়েচুরিদের

আসন্ন পলিটব্যুরোর বৈঠকে ঝড়ের পূর্বাভাস মিলছে। সেই ঝড় ঠেকাতে জোটের পক্ষেই সওয়ালের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সীতারাম ইয়েচুরি ও আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা। তাঁদের প্রধান যুক্তি হতে চলেছে, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার সুবাদেই বামেদের ভোটব্যাঙ্কে ধস আটকানো গিয়েছে। তৃণমূলের ‘হিংসাত্মক আক্রমণ’ রুখে জমি ধরে রাখতে আগামী লোকসভা ভোট পর্যন্তও ওই জোট ধরে রাখতে হবে।

হাসিমুখে। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের শপথ অনুষ্ঠানে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সঙ্গে প্রকাশ কারাট এবং প্রবীণ নেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন। বুধবার তিরুঅনন্তপুরমে। ছবি: পিটিআই।

হাসিমুখে। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের শপথ অনুষ্ঠানে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সঙ্গে প্রকাশ কারাট এবং প্রবীণ নেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন। বুধবার তিরুঅনন্তপুরমে। ছবি: পিটিআই।

জয়ন্ত ঘোষাল ও প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০৩:১৭
Share: Save:

আসন্ন পলিটব্যুরোর বৈঠকে ঝড়ের পূর্বাভাস মিলছে। সেই ঝড় ঠেকাতে জোটের পক্ষেই সওয়ালের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সীতারাম ইয়েচুরি ও আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা। তাঁদের প্রধান যুক্তি হতে চলেছে, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার সুবাদেই বামেদের ভোটব্যাঙ্কে ধস আটকানো গিয়েছে। তৃণমূলের ‘হিংসাত্মক আক্রমণ’ রুখে জমি ধরে রাখতে আগামী লোকসভা ভোট পর্যন্তও ওই জোট ধরে রাখতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গ, কেরল-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পর্যালোচনায় আগামী রবি ও সোমবার দিল্লিতে দু’দিনের পলিটব্যুরো বৈঠক। নামে পাঁচ রাজ্যের ভোটের পর্যালোচনা হলেও পশ্চিমবঙ্গের ভোটই সেখানে প্রধান বিষয় হয়ে উঠবে। পলিটব্যুরোয় প্রকাশ কারাটের অনুগামীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। স্বাভাবিক ভাবেই ইয়েচুরি ও পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের কোণঠাসা করতে উদ্যত হবে কারাট শিবির। সে ক্ষেত্রে ইয়েচুরিকে গদি ছাড়তে বলার দাবি ওঠার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না!

সিপিএম সূত্রের খবর, এই আক্রমণ সামলাতে ইয়েচুরি নিজে একটি লিখিত নোট তৈরি করেছেন। জোটের সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল এবং আগামী দিনেও তা ধরে ধরে রাখা জরুরি তার পক্ষে সেখানে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। কী সেই যুক্তি? ইয়েচুরি শিবিরের বক্তব্য, প্রথমত, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানো একা সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্ত ছিল না। প্রকাশ কারাট, বৃন্দা কারাট থেকে শুরু করে গোটা কেন্দ্রীয় কমিটি তাতে সায় দিয়েছিল। ঠিক যে ভাবে পরমাণু চুক্তির বিরোধিতা করে প্রথম ইউপিএ-সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করাও কারাটের একার সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হয় না। তাকে পার্টির সিদ্ধান্ত হিসাবেই দেখা হয়। কমিউনিস্ট পার্টিতে কোনও সিদ্ধান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়। তা সমষ্টিগত সিদ্ধান্ত।

দ্বিতীয়ত, ২০১৪-র লোকসভা ভোটে বামেরা রাজ্যে মাত্র দু’টি আসন পেয়েছিল। কংগ্রেস পেয়েছিল চারটি আসন। এ বারের বিধানসভা ভোটে বামেরা ৩৩টি আসন পেয়েছে। কংগ্রেস পেয়েছে ৪৪টি। লোকসভা ভোটে কংগ্রেস ও বামেদের মোট ভোটের হার যা ছিল, এ বার মোট ভোটের হার তার থেকে কমেনি। যা থেকে স্পষ্ট, বামেদের ভোটে ধস আটকানো গিয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বামেদের নিজস্ব ভোটের হার কিছুটা কমেছে। কিন্তু তার প্রধান কারণ, বামেরা এ বার সব আসনে লড়েনি। ২০০৬-এর বিধানসভায় বামেরা ৫০.১৮% ভোট পেয়েছিল। তার পর থেকেই ভোটের হার কমতে শুরু করে। ২০০৮-এর পঞ্চায়েতে ৪৯.৪৯%, ২০০৯-এর লোকসভায় ৪৩.৩০%, ২০১১-র বিধানসভায় ৪২.৪৭%, ২০১৩-র পঞ্চায়েতে ৩৬.০৯%, ২০১৪-র লোকসভায় ২৯.৬১%। গত কয়েক বছর ধরে বামেদের ধারাবাহিক ভাবে ভোট কমার সময় ইয়েচুরি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না। এ বার বামেরা সব আসনে না লড়েও প্রায় ২৬% ভোট পেয়েছে।

তৃতীয়ত, তৃণমূলের ভোটের হার বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু তার প্রধান কারণ হল, বিজেপি-র ভোট পেয়েছে তৃণমূল। বিজেপি-র থেকে ৭% ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছে।

চতুর্থত, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করলেই যে ফল খারাপ হয়, এমন কোনও প্রমাণ নেই। ২০০৪ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যখন ইউপিএ-১ সরকারকে বামেরা সমর্থন করছিল, সে সময় অন্য রাজ্যের ৩-৪টি নির্বাচনে বামেদের ফল ভাল হয়েছিল। ফলে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লাভ হয় না, লোকসানই হয়, এই তত্ত্ব ভুল।

সবচেয়ে বড় যুক্তি, যে কারণে ভোটের আগে জোট হয়েছিল, সেই একই কারণে ভোটের পরেও জোট চলবে। তার কারণ হল, তৃণমূলের হামলা ঠেকানো। তা না হলে সংগঠন বা জমি, কোনওটাই ধরে রাখা যাবে না। ইয়েচুরি শিবিরের যুক্তি, ভোটের পরেও তৃণমূলের হামলা চলছে। স্থানীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে নিরুপম সেনের আত্মীয়দের বাড়িতেও হামলা হয়েছে। কাজেই তৃণমূলের সন্ত্রাস এবং বিজেপি-র মোকাবিলা করতে হলে জোট চালিয়ে যেতে হবে।

ইয়েচুরির বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হল, গত বছর যে বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসে তিনি সাধারণ সম্পাদকের পদে বসেছিলেন, সেই পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইন ভেঙে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পক্ষে সায় দিয়েছেন তিনি। তার পরেও কেন্দ্রীয় কমিটি পশ্চিমবঙ্গের জন্য যে রণকৌশল ঠিক করে দিয়েছিল, তাতে শুধু গণতান্ত্রিক শক্তিকে একজোট করার কথা বলা হয়েছিল। যার অর্থ ছিল, নিচু তলায় জোট হবে। বাস্তবে দেখা গিয়েছে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো নেতা রাহুল গাঁধীর সঙ্গে এক মঞ্চে গিয়ে প্রচার করছেন। এ নিয়ে প্রচার-পর্বেই আপত্তি তুলেছিল কেরল শিবির। এখন অভিযোগ উঠছে, ইয়েচুরি এ সব দেখেও চোখ বুজে ছিলেন!

এই অভিযোগের জবাবে ইয়েচুরি শিবিরের যুক্তি, সাধারণ সম্পাদক নিজে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য নেতৃত্বকে লিখে সতর্ক করেছিলেন, যাতে কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অমান্য করা না হয়। ব্যক্তিগত স্তরে নয়, সাধারণ সম্পাদক হিসেবেই সেই চিঠি লিখেছিলেন তিনি। কাজেই চোখ বুজে থাকার অভিযোগ সঠিক নয়। সেই চিঠিও পলিটব্যুরোয় পেশ করা হবে।

ঝড়ের মেঘ পলিটব্যুরোয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE