বিশ্ব উষ্ণায়ন রুখতে বিকল্প শক্তির ব্যবহার করা ছাড়া অন্য উপায় নেই বলেই জানিয়ে দিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। রবিবার বার্লিনে প্রকাশিত রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্টে গবেষক-বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সারা পৃথিবীতে বর্তমানে যে রকম হারে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হচ্ছে, তার জেরে ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা প্রায় চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। আরও বেশি করে বদলে যাবে আবহাওয়ার গতিবিধি। আর তা আটকানোর জন্য বাড়াতে হবে বিকল্প শক্তির ব্যবহার।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কার্বন দূষণ যত বাড়বে, ততই বাড়বে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা। বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধের বিভিন্ন পদ্ধতি ততই জটিল ও ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়াবে। ৩৩ পাতার রিপোর্টটিতে রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হওয়ার পরিমাণ ২০৫০ সালের মধ্যে ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কম করা গেলে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা দু’ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে পারে। এই দু’ডিগ্রি সেলসিয়াস কমানোটাকেই লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে বেঁধেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
রিপোর্ট প্রকাশের সময় রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষজ্ঞ দলের সহ-চেয়ারম্যান ওটমার এডেনহফার বলেছেন, “বিজ্ঞান একটা পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে। যে ভাবে দ্রুত হারে আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে, তা থেকে বাঁচতে আমাদের কিছু পদ্ধতি বদলাতেই হবে। দু’ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে, তার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করা প্রয়োজন খুব তাড়াতাড়ি।” রিপোর্ট প্রকাশের পর ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-এর প্রধান রাজেন্দ্র পচৌরি জানান, কার্বন দূষণ রুখতে যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। তাঁর কথায়, “দূষণ রোখার ট্রেনটাকে এ বার তাড়াতাড়ি যাত্রা শুরু করতে হবে। আর সারা পৃথিবীকেই সেই ট্রেনে সওয়ার হতে হবে।”
তথ্য বলছে, কয়লা, খনিজ তেল ইত্যাদি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১৭৫০ সাল থেকে মোট যত পরিমাণ কার্বন দূষণ হয়েছে, তার ৫০ শতাংশই হয়েছে শেষ ৪০ বছরে। আর তার হার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে ২০০০ সাল থেকে। তার জেরেই পৃথিবী জুড়ে বদলে গিয়েছে আবহাওয়ার ধারা। পরিবেশবিদ মহলের মাথাব্যথার কারণ হয়েছে খামখেয়ালি ঋতু পরিবর্তন। সমাধান হিসেবে বারবারই উঠে এসেছে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তির মতো অফুরান প্রাকৃতিক শক্তির ব্যবহার, শক্তির পুনর্নবীকরণের মতো বিষয়গুলি। আজকের রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট সেই বিষয়গুলিকেই একমাত্র উপায় বলে ব্যাখ্যা করল।
তবে এত কিছু সত্ত্বেও আশার আলো দেখছেন বিজ্ঞানী-গবেষকরা। বিশেষজ্ঞ দলের অধ্যাপক সদস্য জিম স্কিয়া বললেন, “সারা পৃথিবীর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রটাকেই যে আমূল বদলে ফেলতে হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি, পরমাণু শক্তি, জীবাশ্ম জ্বালানি ইত্যাদি ব্যবহার করা ও সংগ্রহ করে রাখাকেই জোর দিতে হবে।” বিজ্ঞানীদের মতে, এ ভাবে শক্তি ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনলে তা অর্থনৈতিক ভাবেও সাশ্রয়কারী হবে। আর এই পরিবর্তন আনার জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারকেই সেতু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। স্কিয়া আরও বলেন, “দু’ডিগ্রি উষ্ণতা কমানোর জন্য কৃত্রিম বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেই সঙ্গে কার্বন দূষণের পরিমাণ কম করতে হবে। কিন্তু এতে যদি আরও একটা দশক পার হয়ে যায়, তবে পৃথিবীকে বাঁচাতে অনেকটা বেশি দাম দিতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy