Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

বৃষ্টি-হিমেল হাওয়া গায়ে মেখেই চললাম লোলেগাঁও

পুজোর ছুটি মানেই, ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়া। আমাদের বাড়িতে, এমনটাই রেওয়াজ। রীতি ভাঙা হয়নি এ বছরও। দশমীর রাতে বহরমপুর থেকে চেপে বসলাম বাসে। আমরা তিন জন (আমি, স্ত্রী ও কন্যা)। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ভাগীরথীর উপর দিয়ে চলেছি। স্লিপারের জানলা দিয়ে দেখলাম প্রতিমা নিরঞ্জন।

সুব্রতকুমার দাস
ইন্দ্রপ্রস্থ, বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩৫
Share: Save:

পুজোর ছুটি মানেই, ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়া। আমাদের বাড়িতে, এমনটাই রেওয়াজ। রীতি ভাঙা হয়নি এ বছরও।

দশমীর রাতে বহরমপুর থেকে চেপে বসলাম বাসে। আমরা তিন জন (আমি, স্ত্রী ও কন্যা)। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ভাগীরথীর উপর দিয়ে চলেছি। স্লিপারের জানলা দিয়ে দেখলাম প্রতিমা নিরঞ্জন।

শিলিগুড়ি পৌঁছলাম পরের দিন সকাল ৭টায়। তার পর সেখান থেকে কালিম্পং হয় চললাম লোলেগাঁও।

সারাটা পথ আমাদের সঙ্গী বৃষ্টি। কালিম্পঙের পর রাস্তা... না বলাই ভাল। কুয়াশা আর বৃষ্টির মাঝে আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে, হিমেল হাওয়া গায়ে মেখে, পথের সৌন্দর্য তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে করতে বেলা ১২টায় পৌঁছলাম গন্তব্যে।

দুপুরের খাওয়ার পাঠ চুকিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। নির্জন জঙ্গলের পথে আমরা তিনজন। তার মধ্যে অঝোরে বৃষ্টি। পাতার ফাঁকে ফাঁকে হাওয়ার শনশন শব্দ। কখনও আবার পায়ের নীচে বয়ে চলেছে জলধারা। মাঝেমাঝেই জোকের আক্রমণ।

পরের দিন রওনা দিলাম লাভা। দূরত্ব সামান্যই। কিন্তু রাস্তা নেই বললেই চলে। গাড়ির ঝাঁকুনিতে একে অন্যের গায়ে গড়িয়ে পরছি। এরই মধ্যে চালক হিন্দিতে বলে উঠলেন, ‘‘দেখেছেন, পাহাড় কেমন হাসছে..!’’ নির্জন ধূপিবনের পাশ দিয়ে পথ কেটে মেঘ আর কুয়াশা মেখে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা। ক্যামেরাবন্দি করে চলেছি, প্রকৃতির অপার্থিব রূপ।

লাভা়য় দু’রাত-তিন দিন ছিলাম। সঙ্গে ছিল ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি। এক দিন প্রকৃতি একটু সদয় হয়েছিল। হোটেল থেকেই দেখলাম সূর্যোদয়। দেখলাম আবির-রাঙা কাঞ্চনজঙ্ঘা।

এ বার নেওরা জাতীয় উদ্যান। ঘন জঙ্গল, বিভিন্ন পাখির কলরব, মাঝে মাঝে সাধারণ দু’একটা বুনো জন্তু। পথে সঙ্গী হল এক জন গাইড। তাঁকে নিয়ে দু’ঘণ্টার ট্রেক। নির্জন পথে একটানা ঝিঁঝিঁর ডাক, কোথাও কোথাও রাস্তা একেবারে সরু হয়ে গিয়েছে। পিছলও বটে। পথে মেঘরোদ্দুরের লুকোচুরি চলতেই থাকল। অবশেষে আমরা পৌঁছলাম ভিউ পয়েন্টে। সম্বিত ফিরল গাইডের ডাকে, —‘‘সাব, অব লটনা হোগা।’’

ফিরে এসে গেলাম রিশপ। ছোট্ট লেপচা গ্রাম এক মায়াবি জগৎ। স্থানীয় লোকজন জানালেন, আবহাওয়া ভাল থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘার দিগন্ত বিস্তৃত শোভা এখানে চাক্ষুষ করা যায়।

রিশপ থেকে সোজা শৈলশহর কালিম্পং। মধ্যহ্নভোজন সেরে বেলা ১২টা নাগাদ বেরলাম। ঘুরে দেখলাম রবীন্দ্রস্মৃতি বিজড়িত ‘ভানুভবন’ দেখে তার পর ‘পাইন ভিউ নার্সারি’, সুন্দরী ডেলো, অনিন্দ্যসুন্দর গল্‌ফ কোর্স...।

এ বার ফেরার পালা। ফেরার কথা ভাবতেই মন খারাপ হয়ে গিয়েছে্ল। আকাশে দেখি পূর্ণিমার চাঁদ। মনে পড়ল, এ দিন যে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো।

কী ভাবে যাবেন?

শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে ট্রেনে। বাসেও যাওয়া যেতে পারে। এনজেপি বা শিলিগুড়ি নেমে অথবা বিমানে বাগডোগরা পৌঁছে গাড়ি নিয়ে লোলেগাঁও।

কখন যাবেন?

জুন থেকে সেপ্টেম্বর, এই চারটি বর্ষা মাস ছাড়া যে কোনও সময় যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন?

লোলেগাঁওয়ে হোটেলের সংখ্যা কম। বন উন্নয়ন নিগমের কটেজ ও কিছু সংখ্যক বেসরকারি হোটেল রয়েছে। আছে হোম স্টে-র ব্যবস্থা। লাভায় অনেক হোটেল। তা ছাড়া বন দফতরের রিসর্ট রয়েছে।

ছবি: লেখক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lolegaon Travel Tour Guide Lava
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE