ভিটামিন-বি-টু দিয়ে বানানো সেই ব্যাটারি।
ভাবুন, ডাক্তাররা আমাদের যে ভিটামিন খেতে দেন আমরা দুর্বল হয়ে পড়লে, সেই ভিটামিনই এ বার ব্যাটারি চালাবে! যে ব্যাটারি দিয়ে আলো জ্বলবে! গাড়িও চলবে! করা যাবে অন্যান্য কাজও।
আর সেই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি আদৌ দাহ্য ও বিষাক্ত বস্তু হবে না বলে আমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারব। আবার সেই ব্যাটারি আক্ষরিক অর্থেই হবে এক ‘অক্ষয়কুমার’! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যার কোনও ক্ষয় হবে না। ওই ভিটামিনের ব্যাটারি বানানোর খরচ কম হয় বলে তার দামও হবে খুবই কম। হবে সহজলভ্যও।
আপাতত, শুধুই ভিটামিন বি-টু’র মধ্যে সেই অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা দেখা গিয়েছে, যা বিদ্যুৎ পরিবহণ করতে পারে আর তৈরি হওয়া বিদ্যুৎশক্তিকে সঞ্চয়ও করতে পারে। চাঞ্চল্যকর গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার-এনার্জি’ জার্নালে, জুলাইয়ের গোড়ায়।
বিদ্যুতে বুঁদ! গবেষণাগারে কেরামতি দেখাচ্ছে ভিটামিন বি-টু।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নশাস্ত্রের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো কাইশিয়াং লিন তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ‘‘এর আগে এমন চমকে দেওয়া ধর্ম দেখা গিয়েছিল একটি জৈব অণু ‘কুইনোন’ আর একটি ফুড-অ্যাডিটিভ ‘ফেরোসায়ানাইড’-এর মধ্যে। কিন্তু, ভিটামিন বি-টু’র মধ্যে আমরা যে ক্ষমতার সন্ধান পেয়েছি, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। এটা খুব সহজেই তড়িৎ সংশ্লেষ করতে পারে। তা সঞ্চয় করতে পারে। প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ পরিবহণ করতে পারে। আর খুব সস্তায় আর সহজে ভিটামিন বি-টু বানানো যায় বলে বাণিজ্যিক ভাবেও এর উৎপাদন লাভজনক হয়ে উঠবে।’’
ভিটামিন বি-টু দিয়ে বানানো ব্যাটারি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কী ভাবে ভিটামিন বি-টু’র মধ্যে এই অত্যাশ্চর্য ক্ষমতার হদিশ পাওয়া গেল?
সহযোগী গবেষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ্যার অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর উষসী মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘খাদ্যের জারণের পর যে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়, দেহে তা সঞ্চয় করে রাখার কাজে বড় ভূমিকা নেয় ভিটামিন বি-টু। ওই ভিটামিন বি-টু বিদ্যুতেরও সঞ্চয় ও পরিবহণ করতে পারে কি না, সেটা দেখার জন্য ভিটামিন বি-টু’র ওই গুণটিই আমাদের উৎসাহিত করেছিল। আমাদের শরীরে একই কাজ করে জৈব অণু ‘কুইনোন’ আর ফুড-অ্যাডিটিভ ‘ফেরোসায়ানাইড’। কিন্তু কোনও ব্যাটারিতে তড়িৎশক্তি সঞ্চয় করার জন্য যে ইলেকট্রোলাইট (তড়িৎ-দ্রাবক) লাগে, তার জন্য ‘কুইনোন’ আর ‘ফেরোসায়ানাইডে’র চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে ভিটামিন বি-টু। কারণ, তড়িৎশক্তির সঞ্চয় ও পরিবহণের জন্য অক্সিজেনের বদলে নাইট্রোজেন পরমাণু ইলেকট্রন দেওয়া-নেওয়া করে ভিটামিন বি-টু’র অণুতে। যা অনেক সহজে হয়। হয় দ্রুততরও। এই ভিটামিনের ব্যাটারি অনেক বেশি স্থায়ী হবে। তার সঞ্চয়-ক্ষমতা অনেক বেশি হবে। আর তা অনেক হাই-ভোল্টেজের বিদ্যুৎও উৎপাদন করতে পারবে।’’
আরও পড়ুন- কঠিন পিচে দারুণ ব্যাট করছে ‘অ্যাস্ট্রোস্যাট’!
ভিটামিন বি-টু’তে চলা ব্যাটারির পরীক্ষামূলক ব্যবহার।
কিন্তু, ব্যাটারির জন্য যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-টু লাগবে, তার নিয়মিত জোগান কতটা সম্ভব হতে পারে?
উষসীর কথায়, ‘‘ভিটামিন বানানো খুব সহজ। আর বিশেষ করে, ভিটামিন বি-টু বানানো যায় খুব সস্তায়। সহজেও। ফলে, ব্যাটারির ইলেকট্রোলাইটের জন্য ভিটামিন বি-টু’র বাণিজ্যিক উৎপাদনে কোনও অসুবিধা হবে না। উৎপাদন খরচ কম হবে বলে সেই ব্যাটারির দামও খুব কম হবে।’’
এই ব্যাটারিগুলিকে কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে, তা বেশি লাভজনক হবে?
ভিটামিন বি-টু’তে চলা ব্যাটারি চাালাচ্ছে ইনভার্টারও!
উষসী বলছেন, ‘‘আমাদের গবেষণার ফলাফল দেখাচ্ছে, যে ধরনের বিদ্যুৎশক্তি সাময়িক হয়, যেমন, সৌর-বিদ্যুৎ ও হাওয়া-বিদ্যুৎ, সেই বিদ্যুৎশক্তিকে অনেক বেশি সময় ধরে সঞ্চয় করে রাখার কাজে ‘কুইনোন’ বা ‘ফেরোসায়ানাইড’-এর চেয়ে অনেক বেশি সহায়ক হবে এই ভিটামিন বি-টু।’’
ছবি ও তথ্য সহায়তা: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy