Advertisement
১১ জুন ২০২৪

আনন্দে বিষাদে জাগে অন্তরাত্মা

রবীন্দ্রসঙ্গীত, লোকগীতি থেকে দেশাত্মবোধক। লিখছেন বারীন মজুমদারবাইশে শ্রাবণ উপলক্ষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গাঁধীভবনের প্রেক্ষাগৃহে রাগ অনুরাগ মিউজিক রিসার্চ অ্যাকাডেমি এবং সি ভি রমন সেন্টার ফর ফিজিক্স ও মিউজিক যৌথ ভাবে দুটি ভিন্ন ধারার অনুষ্ঠান উপস্থাপিত করল। রাগ অনুরাগের বিষয়বস্তু ছিল ভারতীয় শাস্ত্রীয়সঙ্গীত, রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রভৃতির সমন্বয়ে মূলত বৃন্দবাদনের অনুষ্ঠান ‘ইনার আই’ বা অন্তরাত্মা। তার আগে ছিল রবীন্দ্ররচনা ভিত্তিক একটি অনুষ্ঠান। যার শিরোনাম ছিল ‘চমকি কম্পিছে চেতনাধারা’।

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

বাইশে শ্রাবণ উপলক্ষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গাঁধীভবনের প্রেক্ষাগৃহে রাগ অনুরাগ মিউজিক রিসার্চ অ্যাকাডেমি এবং সি ভি রমন সেন্টার ফর ফিজিক্স ও মিউজিক যৌথ ভাবে দুটি ভিন্ন ধারার অনুষ্ঠান উপস্থাপিত করল। রাগ অনুরাগের বিষয়বস্তু ছিল ভারতীয় শাস্ত্রীয়সঙ্গীত, রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রভৃতির সমন্বয়ে মূলত বৃন্দবাদনের অনুষ্ঠান ‘ইনার আই’ বা অন্তরাত্মা। তার আগে ছিল রবীন্দ্ররচনা ভিত্তিক একটি অনুষ্ঠান। যার শিরোনাম ছিল ‘চমকি কম্পিছে চেতনাধারা’। এর আগে বহু বার রাগ অনুরাগের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছে এবং তার জন্যই মনে হয়েছে সাংগঠনিক দিক দিয়ে তাঁরা অত্যন্ত নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়েই চলেন। আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।
অন্তরাত্মা বা ইনার আই-এর বিষয়বস্তু ছিল একটি শিশুর জন্ম থেকে বড় হওয়া-জীবন যে ভাবে আনন্দে বিষাদে চলে তাই নিয়েই। ‘কী আনন্দ, কী আনন্দ, কী আনন্দ-দিবা রাত্রি নাচে মুক্তি, নাচে বন্ধ...’। মাঝে মাঝে বাবা-মার জীবনে যে অতৃপ্তিকর পরিস্থিতি আসে সেগুলির প্রতিও রচনাকার ও পরিচালক স্মৃতি লালা দৃষ্টিপাত করিয়েছেন। তিনি শুধু আনন্দ দান করেন না, প্রতিটি অনুষ্ঠানেই তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায় একটি বিশেষ বার্তা। সে বার্তা সামাজিক দায়বদ্ধতার। যেমন এ দিনের অনুষ্ঠানে সন্তান-সন্ততিদের তাঁদের পিতা-মাতার প্রতি দায়বব্ধতার কথ স্মরণ করিয়েছেন, স্মরণ করিয়েছেন এমন সব পরিস্থিতির যা কারও জীবনেই কাম্য নয়। বৃদ্ধাশ্রম পর্যায়ে পিতামাতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয়, ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানটি যেন বিদ্ধ করে মনকে। আর এ সবের সমাহারে তিনি ও তাঁর সুযোগ্য দল যে অনুষ্ঠানটি উপহার দিলেন তা এক কথায় টানটান-দর্শকদের অন্যমনস্ক হতে দেয় না। আর এই উপস্থাপনায় উত্তীয় জানার আলোক সম্পাত বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। এই রচনায় এক জায়গায় বলা হয়েছে ‘জীবনে চলার ছন্দ নিয়মমাফিক চলে। না যদি সদইচ্ছে থাকে তার থেকে আমরা নিজেদের সামলাতে পারি। জীবন যে আজ আর সুষ্ঠুভাবে চলে না তা প্রতিদিন সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে আসছে। এই অবক্ষয়ের যুগে তাঁর এই মিউজিক থেরাপি কতখানি কাজ করবে সেটা ভবিষ্যৎ বা সময় বলবে। তবে তাঁর এই প্রচেষ্টাকে অবশ্যই কুর্নীশ করতে হবে। সমগ্র প্রযোজনাতে তিনি যে ভাবে ছন্দকে ব্যবহার করেছেন তা এককথায় আনন্দদায়ক। এই আনন্দের সুরই তিনি শুরু থেকে শেষ অবধি রেখেছেন। কর্মই ধর্ম। মনুষেত্বরই জয়। রবীন্দ্রনাথের ‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে বা খরবায়ু বয় বেগে’ যেমন ব্যবহার করেছেন তেমনই লোকগীতির সুরে ‘গান গেয়ে ভাই দেশটারে বাঁচাও’ ব্যবহার করে প্রযোজনাকে সমৃদ্ধতর করেছেন। বেশ কয়েক জায়গায় সরোদ ও বেহালার ব্যবহার বেশ বুদ্ধিদীপ্ত।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পরিবেশিত হয় দেশাত্মবোধক গান ‘বন্দেমাতরম’। দেশাত্মবোধই পারে অন্তরাত্মাকে জাগিয়ে মানুষকে সঠিক পথে চালিত করতে। প্রযোজনার উদ্দেশ্য সফল।

হাজার কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত

রবীন্দ্রসঙ্গীত নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। লিখছেন পিয়ালী দাস

ছবি: উৎপল সরকার

স্মরণীয় বছরকে স্মরণীয় করে রাখল বিশেষ এক মুহূর্ত। হাজার কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হল রবি ঠাকুরের গান। রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি গীতাঞ্জলির শতবর্ষ পূর্তিতে সঙ্গীত ভারতী মুক্তধারা আয়োজন করেছিল এক অভিনব সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এদিনের অনুষ্ঠানে কলকাতা সহ ভারতের প্রায় দশটি মহানগর থেকে বিভিন্ন সঙ্গীত সংগঠনের হাজার জন শিল্পী অংশগ্রহণ করেন। গুরগাও, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, ভদোদরা, ভিলাই, পটনা, মুম্বই সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে শিল্পীরা এসেছিলেন। সমবেত কণ্ঠে শিল্পীরা গেয়ে চললেন একের পর এক রবীন্দ্রসঙ্গীত। যার মধ্যে মিলেমিশে ছিল প্রকৃতি, প্রেম, পূজা ও বিচিত্র পর্যায়ের গান। তবে আধিক্য ছিল পূজা পর্যায়ের গানের। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়—‘তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে’, ‘আলো আমার আলো’, ‘সুন্দর বটে তব’, ‘তুমি কেমন করে গান কর হে’, ‘প্রাণ ভরিয়ে’ গানগুলি। যেগুলি আলাদাভাবে শ্রোতাদের হৃদয় স্পর্শ করে। সম্মেলক সঙ্গীতের পরিবেশনে একাধিক মুখের উপস্থিতি চোখে পড়লেও হাজার সংখ্যাটা প্রায় কল্পনাতীত। অবশ্য এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছে অনুষ্ঠানের রূপকার তথা সংগঠনের কর্ণধার অরুন্ধতী দেবের জন্য। হাজার কণ্ঠের সমবেত কলতানে এদিনের অনুষ্ঠান শ্রোতাদের মনে দীর্ঘদিন থেকে যাবে নিঃসন্দেহে। তবে বিপুল সংখ্যক নারী কণ্ঠের পাশাপাশি পুরুষ কণ্ঠের অনুপাত আরেকটু বেশি হলে মন্দ হত না।

ঘাটতি ছিল না

চৈতী ঘোষ

গৌড়ীয় নৃত্যকে জনসমক্ষে প্রতিষ্ঠা করার ভূমিকায় মহুয়া মুখোপাধ্যায়ের অবদান অনস্বীকার্য। সম্প্রতি তারই পরিচালনায় আই সিসিআর-এ গৌড়ীয় নৃত্যভারতী আয়োজন করেছিল নিস্তারিণী কালী নৃত্যোৎসব। গৌড়ীয় নৃত্যে আধারিত নৃত্যপদগুলির মধ্যে বলরামনর্তন, চণ্ডীবন্দনা, গণেশ বন্দনা প্রভৃতি উল্লেখ্য। বিশেষত দশাবতার নৃত্যপদে নৃসিংহ অবতারে হিরণ্যকশিপুবধ ও কল্কি অবতারে ঘোড়ার পিঠে মঞ্চে অবতরণের দৃশ্যে অয়ন মুখোপাধ্যায়ের বলিষ্ঠ শরীরী ভঙ্গিমা ও অভিনয় দর্শকদের প্রশংসা অর্জন করে।

ব্রম্ভতাল ও বঙ্গাল রাগে আধারিত আলাপচারী ছিল একটি নৃত্তপ্রধান পদ। বাংলার লুপ্তপ্রায় এই রাগ ও তালগুলিকে পুনরুদ্ধার করার জন্য মহুয়া মুখোপাধ্যায়কে সাধুবাদ। অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে মালন অধিকারী ও সৌরজা ঠাকুরের দ্বৈত ভরতনাট্যম, কলামণ্ডলম গৌতমের কথাকলি নৃত্যে আধারিত পুতনামোক্ষম্, পারমিতা মৈত্রের কত্থক, মিত্রায়নের শিল্পিবৃন্দের গৌড়ীয় নৃত্য ও শর্মিলা বিশ্বাসের পরিচালনায় ওড়িশি নৃত্যাঙ্গিকে যুগলবন্দি ও শিবপার্বতীশব্দ নৃত্যপদ দুটি প্রশংসনীয়। অনুষ্ঠানের প্রাপ্তি ছিল কান্ডি নৃত্য। পরিসমাপ্তি ঘটে অশ্বঘোষের বুদ্ধচরিত আধারিত মহুয়া মুখোপাধ্যায়ের একক উপস্থাপনায়। গৌতম বুদ্ধের জীবনী ও বোধিলাভের আঙ্গিকে।

মনে পড়ে এখনও

নবীন ও প্রবীণের গানে কিশোর-স্মরণ। শুনলেন শিখা বসু

তোমায় পড়েছে মনে’।

এমন ভাবেই কিশোরকুমারকে স্মরণ করা হল গানে-গানে। শিল্পীরা ছিলেন প্রতীক চৌধুরী, শিবাজী চট্টোপাধ্যায়, জোজো, শিলাজিৎ, ইমন চট্টোপাধ্যায়, সংহতি দাস, সাক্ষর বসু, তুলিকা চক্রবর্তী, সওকত খান, পিলু ভট্টাচার্য, সুজয় ভৌমিক, অরিজিৎ চক্রবর্তী, বেলা সাধুখাঁ প্রমুখ। নবীন শিল্পীদের মধ্যে খুব ভাল গাইলেন সংহতি ‘কি লিখি তোমায়’, সাক্ষর বসু ‘আশা ছিল ভালবাসা ছিল’, তুলিকার সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে ‘আমার স্বপ্ন তুমি’।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়টি মনে রাখার মতো। ভোলা ভট্টাচার্যের ব্যবস্থাপনায় সব শিল্পী যখন সমবেত কণ্ঠে শোনালেন কয়েকটি গান।

তবে শিল্পীর আধিক্য এবং কয়েকজন শিল্পীর অকারণ গাইবার প্রচেষ্টা অনুষ্ঠানটিকে দীর্ঘতর করে তুলেছে। এ দিন সঞ্চালনায় ছিলেন দেবাশিস বসু, চন্দ্রমৌলি বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরজিৎ কর্মকার ও নির্মল সাহা।

শিল্পায়ন ৩৫

গোবরডাঙা শিল্পায়ন উদযাপন করল ৩৫ তম বর্ষপূর্তি উৎসব। সেই উপলক্ষে অ্যাকাডেমিতে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার নাট্য জগৎ-এর বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। নাট্যকার নির্দেশক ও অভিনেতা ব্রাত্য বসুর হাতে তুলে দেওয়া হল ‘শিল্পায়ন সম্মান ২০১৫’। এই সম্মান পেয়ে ব্রাত্য বলেন, ‘‘আশিস চট্টোপাধ্যায় এবং শিল্পায়ন ক্রমশ এই কলকাতার থিয়েটার এবং জেলার থিয়েটারের বিভেদ রেখা মুছে দিচ্ছেন।’’

এদিন সম্মাননা অনুষ্ঠানের পর দুটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। দুটি নাটকই গোবরডাঙ্গা শিল্পায়নের নিজস্ব প্রযোজনা।

প্রথমে ছিল নাটক ‘পড়শি’। লালনের দেহতত্ত্বের আদর্শের ওপর নির্মিত এই নাটকে একক অভিনয় করেছেন দীপা ব্রক্ষ্ম। আশিস চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় লালন-তত্ত্বের গভীর অনুভূতি আবারও মনকে নাড়িয়ে দেয়।

এছাড়াও ছিল নাটক ‘খোয়াব’। অভিনয় করেছেন দীপা ব্রক্ষ্ম, অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়, শৌভিক সরকার।

শিল্পায়নের এই বর্যপূর্তি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন নাট্যদলের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

গানের টানে

সম্প্রতি মোহিত মৈত্র মঞ্চে সুরঙ্গমা কলা কেন্দ্র আয়োজিত ‘কবি প্রণাম’ অনুষ্ঠানটি গান ও কবিতায় ছিল ঋদ্ধ। গানে ছিলেন শিবাজী চট্টোপাধ্যায়, অলক রায়চৌধুরী, গৌতম মিত্র, সুচিন সিংহ প্রমুখ।

আবৃত্তিতে মুগ্ধ করলেন মহুয়া দাস। তাঁর নিবেদনে ছিল কবি চিরঞ্জীব বসুর কবিতা ‘প্রথম বোলপুর’ রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠির অংশবিশেষ। প্রেক্ষাগৃহ ছিল পূর্ণ। শিবাজী চট্টোপাধ্যায়ের গান এখনও সমানভাবে মনকে টানে। সুচিন সিংহ তাঁর গানে মৌলিকত্ব অক্ষুণ্ণ রেখে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন।

উপভোগ্য নৃত্য সন্ধ্যা

গুরু গিরিধারী নায়েকের পরিচালনায় সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠিত হল ‘এক ওড়িশি সন্ধ্যা’। সুজাতা নায়েকের ‘দ্রেহি পদম্’ নিখুঁত পদচালনার গুণে উপভোগ্য হয়ে ওঠে। সুজাতা দক্ষ নৃত্যশিল্পী। অহনা বসুর ‘আরভি পল্লবী’, কোয়েল মান্না, শরণ্যা চক্রবর্তী, সুলগ্না বসু’র ‘সাবেরী পল্লবী’ উপভোগ্য। সুমিত চক্রবর্তী, শিপ্রা পাত্র, সুমিতা পাত্র, উপাসনা বন্দ্যোপাধ্যায়, ময়ূরাক্ষী সরকার প্রমুখের উপস্থাপনা ‘মেঘ পল্লবী’ ছিল মনোগ্রাহী। শেষ পরিবেশনা ছিল ‘বর্ষামঙ্গল’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE