Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Ustad Imdad Khan

মেয়ের মৃত্যুতেও রেওয়াজ থামেনি ইমদাদের

সেতার আর সুরবাহারের সঙ্গে তাঁর নাম সমার্থক। তিনি ছিলেন সাধক স্বভাবের মানুষ। যখন রেওয়াজ করতেন বা সঙ্গীত পরিবেশন করতেন, সেটাই হয়ে উঠত তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। লিখছেন বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্যসেতার আর সুরবাহারের সঙ্গে তাঁর নাম সমার্থক। তিনি ছিলেন সাধক স্বভাবের মানুষ। যখন রেওয়াজ করতেন বা সঙ্গীত পরিবেশন করতেন, সেটাই হয়ে উঠত তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। লিখছেন বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৮ ১২:৩৯
Share: Save:

সে দিন সব কিছু ভুলে থাকতেই যেন রেওয়াজে ডুবে ছিলেন সেতারি ইমদাদ খান। মন-প্রাণ এক করে ঢেলে দিয়েছিলেন বেহাগের সুরে। অদ্ভুত এক অস্থিরতা আর আশঙ্কা তাঁকে বারংবার গ্রাস করতে চাইলেও ইমদাদ মনের জোরেই সব কিছুকে অগ্রাহ্য করে রেওয়াজ চালিয়ে গেলেন। কিছু দিন ধরে তাঁর আদরের মেয়েটি কঠিন রোগে আক্রান্ত। তার অবস্থার অবনতি ঘটেছে জেনেও ইমদাদ তাঁর সেতারটিকে তুলে নিয়ে এই জাগতিক পরিমণ্ডল থেকে এক মহাজাগতিক পরিমণ্ডলের দিকে শান্তির খোঁজে পা বাড়িয়েছিলেন।

রেওয়াজ চললেও তাঁর স্ত্রী যখন মেয়ের অসুস্থতার খবর জানিয়ে এক বার তাঁকে আসতে বললেন, ইমদাদ কিন্তু রেওয়াজ ছেড়ে উঠলেন না। শান্ত ভাবে স্ত্রীকে বলেছিলেন ডাক্তারকে খবর দিতে। যথাসময়ে ডাক্তার এলেও মেয়েটিকে বাঁচানো যায়নি। মেয়ের মৃত্যুসংবাদ যখন ইমদাদের কাছে পৌঁছল, তখনও তিনি রেওয়াজ ছেড়ে উঠলেন না। বলেছিলেন, লোক ডাকিয়ে মেয়ের দাফনের ব্যবস্থা করতে। রেওয়াজ শেষে তিনি যখন উঠলেন, তার আগেই নিভে গিয়েছে প্রদীপের শিখা। সদ্য সন্তানহারা পিতৃহৃদয় সে দিন হয়তো সবার চোখের আড়ালে গুমরে কেঁদে উঠেছিল। তবু সেই যন্ত্রণা আর শোকের সবটুকুই ইমদাদ সমর্পণ করেছিলেন তাঁর সেতারের সুরে।

মেয়ের মৃত্যুও এই সুরসাধকের রেওয়াজে বিঘ্ন ঘটাতে পারেনি। তাঁর রেওয়াজ নিয়ে শোনা যায় আরও এক কাহিনি। ট্রেনে করে কোথাও যাওয়ার সময় রেওয়াজের সময় হলেই তিনি কোনও কিছু না ভেবেই একটা স্টেশনে নেমে পড়তেন, শুধুই রেওয়াজ করার জন্য।

ইমদাদ ছিলেন সাধক স্বভাবের মানুষ। যখন রেওয়াজ করতেন বা আসরে সঙ্গীত পরিবেশন করতেন, তখন সেটাই হয়ে উঠত তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। সেতারের সঙ্গে তাঁর নামটা সমার্থক। আজও সঙ্গীত জগতে তিনি এক বিস্ময় আর কিংবদন্তি। মৃত্যুর ৯৮ বছর পরেও সেই ‘ইমদাদখানি বাজ’ যখন ধ্বনিত হয় তাঁর উত্তরসূরিদের সেতারে, তখন শুধু একটি নাম হয়েই স্মৃতির অতলে রয়ে যান প্রবাদপ্রতিম এই সেতারি। তবে শুধু সেতার নয়, তিনি দক্ষ ছিলেন সুরবাহার বাদনেও।

ইমদাদের জন্ম ১৮৪৮-এ উত্তরপ্রদেশের আগরার কাছে এটাওয়া-য়। ছোটখাটো চেহারার মানুষটির গায়ের রং ছিল মাজামাজা। মাথায় রাজপুত দোপাট্টা পাগড়ি, দাড়ি-গোঁফে ছিল সাদা, বাদামি আর খয়েরির সংমিশ্রণ। পরনে চুড়িদার, পাজামা আর অঙ্গরাখা। তাঁর বাবা সাহাবদাদ খান ওরফে হদ্দু সিংহ ছিলেন প্রখ্যাত ধ্রুপদী শিল্পী তথা দিল্লি দরবারের সভাগায়ক। তিনি গ্বালিয়র ঘরানার হস্সু খান ও হদ্দু খানের শিষ্য ছিলেন। পরে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় তাঁর নাম পরিবর্তন হয়।

ইমদাদের সঙ্গীতের তালিম শুরু হয় তাঁর বাবার কাছেই। সেটা ছিল কণ্ঠ সঙ্গীতের। পরবর্তী কালে সেতারি আমির খানের সান্নিধ্যে এসে সেতারের প্রতি তাঁর আগ্রহ গড়ে ওঠে। শুরু হয় সেতার ও সুরবাহার শিক্ষা। তিনি তালিম পেয়েছিলেন কিরানা ঘরানার বন্দে আলি খান, সেনিয়া ঘরানার সাজ্জাদ মহম্মদ খান এবং জয়পুর ঘরানার রজব আলি খানের কাছে। পণ্ডিত বিষ্ণু নারায়ণ ভাতখণ্ডে রচিত হিন্দুস্তানি সঙ্গীত পদ্ধতি (চতুর্থ খণ্ড) থেকে জানা যায় যে, ইমদাদও এক সময় শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের অধীনে চাকরি করেছিলেন। সেখানেই স্বনামধন্য সাজ্জাদ মহম্মদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

সেতার-সুরবাহারে কোনও বিশেষ ঘরানার তালিম না থাকলেও তাঁর সৃষ্ট ধারাই এক বিশেষ ঘরানা। ইমদাদ খান জীবনের প্রায় ২০ বছর কাটিয়েছিলেন কলকাতায়। প্রথমে মেটিয়াবুরুজে লখনউর নির্বাসিত নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের দরবারে, তার পরে পাথুরিয়াঘাটার মহারাজ যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের সভায়। শেষ দশ বছর তারাপ্রসাদ ঘোষের বাড়িতে। শেষ জীবনে ইনদওরের হোলকরদের সভাশিল্পী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।

ইমদাদের আসরের সেই সব কাহিনি আজও জলসাঘরের ইট কাঠ পাথরের আনাচে কানাচে প্রতিধ্বনিত হয়। মহিষাদলের কুমার দেবপ্রসাদ গর্গের একটি লেখা থেকে জানা যায় তাঁর আসরের বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা। ছেলেবেলার স্মৃতি হাতড়ে এক সান্ধ্য আসরের বর্ণনা দিতে গিয়ে দেবপ্রসাদ লিখেছিলেন, সন্ধ্যা সাতটা-সাড়ে সাতটা নাগাদ ইমদাদ খান বেহাগে আলাপ শুরু করেছিলেন। প্রায় পনেরো মিনিট বাজানোর পরে তাঁর মনে হয়েছিল খান সাহেব যেন যন্ত্রণায় কাঁদছেন। এতটাই মর্মস্পর্শী ছিল সেই বেহাগের সুর। ‘‘...সে কান্নার কোনও ভাষা ছিল না, শুধু ব্যথার ঝঙ্কারে উপর থেকে মোমবাতির ঝাড়গুলোর ভিতর থেকে সেই কান্না দেওয়ালে দেওয়ালে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল... আসরের মধ্যেই আমি ডুকরে কেঁদে উঠলুম... পিতৃদেব কোনও উত্তর দিলেন না, তাঁর চোখেও তখন দেখি জল টলটল করছে। তাড়াতাড়ি রুমালে চোখ মুছে বেচারাম খানসামাকে আদেশ করলেন আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যেতে... পরের দিন সকালে হাত মুখ ধোওয়ার পরে শুনলুম বাইরে পিতৃদেব ডেকে পাঠিয়েছেন। বেচারামের কোলে চড়ে বাইরে এসে দেখলুম যে পিতৃদেবের সামনে ইমদাদ খান বসে আছেন। তিনিই হাসিমুখে বেচারামের কোল থেকে আমায় কোলে তুলে নিলেন। ওঁর কোলে চড়ে বলেই ফেললুম— আমি কান্না চাপতে চেষ্টা করেও পারিনি, কী করব? ইমদাদ খান পিতৃদেবকে বললেন— ‘মুঝে ইস বেহাগকে লিয়ে বহুত ভারী কুরবানি দেনা পড়া’।’’ এই বেহাগের রেওয়াজ করার সময় তিনি হারিয়েছিলেন আদরের মেয়েকে।

(বাঁ দিক থেকে) ইনায়েৎ খান, ইমদাদ খান, ওয়াহিদ খান

দেবপ্রসাদ গর্গের লেখা থেকেই ইমদাদের আরও একটি আসরের কথা জানা যায়। যা থেকে স্পষ্ট হয় সে কালের শিল্পীদের মধ্যে চলত কেমন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সেই আসরে ইমদাদ ছাড়াও ছিলেন গওহরজান ও ধামারি বিশ্বনাথ রাও। ইমদাদ খান ছিলেন তবলিয়াদের যম। সকলেই তাঁর সঙ্গে সঙ্গত করতে ভয় পেতেন। সেই আসরে আনা হয়েছিল যে যুগের প্রসিদ্ধ তবলিয়া প্রসন্নকুমার সাহাকে। তবে তিনি ‘প্রসন্ন বণিক’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। সুরবাহারে আলাপ বাজানোর পরে সেতার তুলেই প্রসন্নবাবুকে বলেছিলেন ইমদাদ খান, ‘‘একটা মোমবাতি পুড়তে যত সময় লাগে, ততক্ষণ তোড়া না বাজালে আসর জমবে না।’’ এর উত্তরে প্রসন্নবাবু বলেছিলেন, ‘‘গৎ তোড়াই আসল বাজ। যতক্ষণ তা বাজবে, আমার ঠেকাও ততক্ষণ চলবে।’’ ইমদাদের সঙ্গে সেই আসরে বাজাতে এসেছিলেন তাঁর পুত্র আব্দুল ওয়াহিদ খান। আসরে তিনিও শুরু করেছিলেন একটি নতুন তোড়া।

ইতিমধ্যেই ইমদাদ খান ঝালার কাজ শুরু করতেই ঘটে গেল এক বিপর্যয়! প্রসন্নবাবু ‘উপজ’ আরম্ভ করতেই ইমদাদ হেঁকে বললেন ‘ঠেকা’। তখনই ইমদাদ বললেন, ‘‘বাবুকো ইতনা পসিনা ইতনাহি মে আ গিয়া, তাজ্জব!’’ প্রসন্নবাবুও এর উত্তরে হাঁকলেন ‘তোড়া’। তখন নিরুপায় হয়ে ইমদাদ খান তোড়ায় ফিরে এলেন। এ ভাবেই বেশ কিছু ক্ষণ বাজানোর পরে ঘেমে-নেয়ে দুই শিল্পী একেবারে অস্থির। এমনই নানা কারণে সে দিনের আসরের আবহাওয়া একেবারে আগুন হয়ে উঠল। এক সময়ে হঠাৎ প্রসন্নবাবু ইমদাদকে বলে বসলেন, ‘‘তুম বেটা লেকে বাজাতা কিঁউ? মুঝসে লড়না হ্যায় তো বেটাকো বন্ধ করওয়া দো, ইয়া তো মুঝকো ফওরান এক বেটা লা দো, অভি বত্তি আধিভি গলি নহি।’’

ওই ‘এক বেটা লা দো’ কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গেই আসরে উপস্থিত গওহরজান উঠে গিয়ে তিন জনকে থামিয়ে দিয়ে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, সেই আসর ‘ডান্ডাবাজির আখড়া’ নয়, বরং তার মর্যাদা ও আভিজাত্য অনেক। শোনা যায়, আসরে উপস্থিত শ্রোতারা যখন প্রসন্নবাবুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেন তিনি ক্রমশ সুরবাহারটির কাছে এসে বসেছিলেন, তার উত্তরে প্রসন্নবাবু বলেছিলেন, শ্রাদ্ধ বেশি দূর গড়ালে সুরবাহারের তুম্বাটি ইমদাদ খানের মাথায় ভাঙার জন্যই তিনি এগিয়ে এসেছিলেন!

পুত্র ইনায়েৎ খান

ইমদাদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও কত কাহিনি। বিডন স্ট্রিটের সঙ্গীতরসিক তারাপ্রসাদ ঘোষের বাড়িতে সে কালের বহু প্রখ্যাত শিল্পী এসে থাকতেন। সেখানে প্রায়ই বসত গানের জলসা। ইমদাদ খান এ বাড়িতে দশ বছর কাটিয়েছিলেন। এমনই এক সময় প্রবাদপ্রতিম কালে খানও এ বাড়িতে এসে ছিলেন। একই বাড়িতে থাকলেও ওই দুই শিল্পীর থাকার ঘর ছিল বাড়ির দুই ভিন্ন প্রান্তে। ইমদাদ কালে খানকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। কেননা তিনি জানতেন কালে খান কত বড় মাপের শিল্পী ছিলেন। সেই সময় ইমদাদের পুত্র ইনায়েৎ খানও ছিলেন কলকাতায়। এক দিন কথায় কথায় ইমদাদ কালে খানকে অনুরোধ করেছিলেন তাঁর পুত্র ইনায়েৎকে খেয়ালের তালিম দেওয়ার জন্য। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, একই বাড়িতে যখন তাঁরা রয়েছেন, খান সাহেব তাঁর পুত্রকে শেখাতে আপত্তি করবেন না। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে কালে খান এতে রাজি হননি। শোনা যায় এই নিয়েই দু’জনের মধ্যে শুরু হয় মতান্তর।

এক দিন নিজেদের সঙ্গীতচর্চার ধারাকে কেন্দ্র করে দু’জনের মধ্যে বচসার সূত্রপাত হয়। সে সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তারাপ্রসাদ। হঠাৎই কালে খান ইমদাদকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন যে, ইমদাদ যা সেতারে বাজাবেন, তিনি সে সব গলায় গেয়ে দেখিয়ে দেবেন। কিন্তু তাঁর গলার কাজ ইমদাদ কি সেতারে বাজিয়ে দেখাতে পারবেন? এর পরেই কালে খান ইমদাদের সেতার বাজানোর ঢং এমনকী মিড়, গমক, আশ ইত্যাদি অলঙ্কার অনায়াসে গেয়ে দেখিয়ে দিলেন। এতে ইমদাদ খান স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। মনে মনে ভাবলেন, কালে খান তো তাঁর ঘরে আসতেন না, তা হলে কী করে তাঁর সঙ্গীতের খুঁটিনাটি জিনিস হুবহু তুলে ধরলেন? এর পরেই ইমদাদ খানকে চ্যালেঞ্জ করে কালে খান বললেন, এ বার তাঁর গানের খুঁটিনাটি জিনিস সেতারে বাজিয়ে দেখাতে। এই বলে তিনি তাঁর গলায় আশ্চর্য কয়েকটি তানের নিদর্শন দেখালেন। শোনা যায়, গানের কথার মতোই ইমদাদ প্রতিটি বোল ফুটিয়ে তুলতে পারতেন তাঁর সেতারের সুরে। এর উত্তরে সে দিন ইমদাদ খান কী করেছিলেন, তা জানা না গেলেও, গৃহকর্তা তারাপ্রসাদ ঘোষ সেই বিবাদে ছেদ টেনে এই দুই শিল্পীর বচসা থামিয়ে ছিলেন।

ইমদাদের রেকর্ড

কিন্তু সেই বচসা থামল না। এর পরে ইমদাদ খান অত্যন্ত রেগে গিয়ে বলেছিলেন, সেই বাড়িতে কালে খান থাকলে তিনি থাকবেন না। এ কথা শুনে অবশ্য কালে খান নিজেই চলে যাওয়ার কথা বলেছিলেন তারাপ্রসাদবাবুকে। যদিও তারাপ্রসাদ তাঁর থাকার আলাদা ব্যবস্থা করেছিলেন, তবু কালে খান বেশি দিন সেখানে থাকেননি। কিছু দিন পরেই চলে গিয়েছিলেন ঢাকায়।

সঙ্গীতরসিকদের মতে, পাঁচ বাগিচার ফুলে ইমদাদ তাঁর সুরের ডালি ভরিয়েছিলেন। তাঁর বাদনশৈলী ‘ইমদাদখানি বাজ’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। কণ্ঠসঙ্গীতের মতোই এতে থাকে সুরের, তানের নিবিড়তা এবং একাত্মতা। আবার ইমদাদ খান সেতারের আলাপে ধ্রুপদের বেশ কিছু বিষয়বস্তু প্রয়োগ করেছিলেন। এর ফলে তাঁর সৃষ্ট ঘরানার সুরের পাশাপশি অলঙ্করণও ছিল বিশেষ আকর্ষক। তিনি মসিতখানি গৎ বাজাতেন স্বাভাবিকের চেয়ে ধীর গতিতে এবং তাতে ফুটিয়ে তুলতেন নানা অলঙ্করণ। ভারতে রেকর্ডিংয়ের আদিযুগে ইমদাদ খানের সেতারের বেশ কিছু রেকর্ড করা হয়েছিল। দুর্লভ সেই সব রেকর্ড আজও খুঁজে ফেরেন সঙ্গীত রসিক এবং রেকর্ড সংগ্রাহকরা। সেই সব রেকর্ডে ছিল জৌনপুরি, বেহাগ, ভৈরবী, আশাবরী, দরবারী-কানাড়া, কাফি, সোহিনী ইত্যাদি রাগ।

ইমদাদের দুই পুত্র ইনায়েৎ খান এবং আব্দুল ওয়াহিদ খান ছাড়াও তাঁর কাছে তালিম নিয়েছিলেন মাম্মন খান, জমিরুদ্দিন খান, শীতলচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ রায়চৌধুরী প্রমুখ। খুব অল্প বয়স থেকেই ইমদাদ তাঁর পুত্রদের একটানা বারো ঘণ্টা রেওয়াজ করাতেন। ১৯২০ সালে, ৭২ বছর বয়সে ইমদাদ খানের মৃত্যু হয়। তাঁর সৃষ্ট ‘ইমদাদখানি বাজ’-এর ঐতিহ্যবাহী ধারাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর পুত্রদ্বয় ইনায়েৎ খান ও ওয়াহিদ খান। ইনায়েৎ সেতারকে একটা অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তার নাম হয় ‘ইমদাদ খানি-ইনায়েৎ খানি বাজ’। ইনায়েৎ খান সেতারকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, তা বোধহয় আজও কেউ ছুঁতে পারেনি। পরবর্তী কালে ঐতিহ্যবাহী ধারাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ইমদাদের পৌত্র বিলায়েৎ খান। তাঁদেরই উত্তরসূরিদের সেতারে বেঁচে আছে সেই ‘ইমদাদখানি বাজ’।

ঋণ:

সঙ্গীত সঙ্গ ও প্রসঙ্গ:
কুমার দেবপ্রসাদ
গর্গ: ‘দেশ’ বিনোদন ১৯৮১

সঙ্গীতের আসরে:
দিলীপকুমার মুখোপাধ্যায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE