Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Presents

আপনাদের প্রশ্ন

....

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৪ ০১:১৮
Share: Save:

করমুক্ত বন্ড সম্পর্কে জানি, যারা বছরে এক বার ভাল সুদ দেয়। এ রকম বন্ড এই মুহূর্তে বাজারে আছেও। আমি জানতে চাই এই বন্ডগুলি কোথা থেকে কী ভাবে কিনব? যে সুদ দেওয়া হয়, সেটা কি নিশ্চিত, না কি তাতে কোনও ঝুঁকি আছে?

এস কে বসু, হুগলি

হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। বাজারে এখন এই রকম অনেক করমুক্ত বন্ড পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন লগ্নি উপদেষ্টা সংস্থা ও ডিস্ট্রিবিউটরদের মারফত এই বন্ড কিনতে পারেন। ইন্টারনেটেই এর খোঁজ পেয়ে যাবেন। বন্ড কেনার জন্য আপনাকে প্রথমেই একটি আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। এই সংস্থাগুলিই আপনাকে তা দেবে। এমনকী লগ্নির অন্যান্য যা যা নিয়ম-কানুন রয়েছে, সেই সব কিছুর ক্ষেত্রেও আপনাকে কী করতে হবে-না-হবে, তা বলে দেবে তারাই। আমি ধরে নিচ্ছি আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং তাতে চেক কাটার সুবিধাও আছে। কারণ এই লেনদেন সাধারণত চেক মারফতই হয়।

সুদের প্রসঙ্গে বলব, বন্ডে একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ পাওয়ারই ব্যবস্থা থাকে। যে-সংস্থাটি বন্ড বাজারে ছাড়ছে, তারা শুরুতেই সেই হার ঘোষণা করে দেয়। এমনকী অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শর্তও বন্ডটি বাজারে আসার সময়েই ঘোষণা করে দেওয়া হয়। অর্থাত্‌ বন্ড কেনার আগেই আপনি জানতে পারবেন, তার মেয়াদ কত দিনের। সুদ কতটা দেওয়া হবে। অন্য আর কী কী শর্ত আছে ইত্যাদি।

তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল, এতে ঝুঁকি একেবারে যে নেই, তা কোনও সময়েই বলা যাবে না। বন্ড ক্রেতাদের সুদ বাকি পড়ার ঝুঁকি থাকে এখানে। কারণ যে-সংস্থা বন্ড বাজারে ছাড়ছে, পরে আর্থিক বিপাকে পড়ে সেটি ক্রেতাদের সুদ বা আসল কিংবা সুদ-আসল কোনওটাই দিতে পারল না, এমন হতেও পারে। এই সমস্যা এড়ানোর একটাই উপায় খুব সতর্ক ভাবে বন্ড বাছুন। সরকারি সংস্থার করমুক্ত বন্ড তুলনায় অনেকটাই সুরক্ষিত। অচেনা, অজানা বা হঠাত্‌ করে নজরে চলে আসা কোনও সংস্থার তুলনায় নামী কর্পোরেট গোষ্ঠী যে-সব বন্ড ছাড়ে, সেগুলি অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য। এ ছাড়া বন্ড কেনার আগে অবশ্যই তার রেটিং দেখে নেওয়া ভাল। মাথায় রাখবেন, চমকে দেওয়ার মতো বেশি সুদ দিচ্ছে, এমন বন্ডের দিকে লোভের বশে পা না-বাড়ানোই শ্রেয়।

আমার বয়স ২৮। ইঞ্জিনিয়ার। সরকারি সংস্থায় চাকরি করি। কোনও ভাল সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানে (এসআইপি) লগ্নি করতে চাই। কী ভাবে ভাল এসআইপি বেছে নেব?

চন্দন মুসিব

এসআইপি করার আগে আপনি বিচার করুন কয়েকটি বিষয় • আপনার প্রয়োজন ঠিক কী? • আপনার লগ্নির উদ্দেশ্য কী? • কতটা ঝুঁকি নিতে পারেন আপনি? এই উত্তরগুলির ভিত্তিতেই আপনি কোন ধরনের ফান্ড কেনার দিকে ঝুঁকবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ইক্যুইটি, ডেট ও মিক্সড ফান্ড-সহ আপনি যে-কোনও ধরনের ফান্ডেই এসআইপি করতে পারেন।

ইক্যুইটি ফান্ডের তহবিলের বেশির ভাগটাই লগ্নি করা হয় শেয়ার বা ইক্যুইটিতে। শেয়ারের দরে প্রতিনিয়ত যে ওঠা-পড়া চলে, তাতেই ফুলে-ফেঁপে ওঠে আপনার ফান্ডের বিনিয়োগ। তাই এই ফান্ডে রিটার্ন যেমন চড়া হওয়ার সম্ভাবনা, তেমনই কিছুটা বেশি ঝুঁকিও। বেশি রিটার্নের জন্য বহু এসআইপি-র টাকাই এই ধরনের ফান্ডে ঢালা হয়।

ডেট ফান্ডের টাকা পুরোটাই খাটে সরকারি ও বেসরকারি ঋণপত্রে (বন্ড, ডিবেঞ্চার, সিকিউরিটি ইত্যাদি)। ফলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই ইকুইটি ফান্ডের তুলনায় এর রিটার্ন কম হতে পারে। কিন্তু তেমনই অনেকটা কম ঝুঁকিও।

আবার মিক্সড বা মিশ্র ফান্ডের তহবিলের টাকা লগ্নি করা হয় মিলিয়ে-মিশিয়ে। শেয়ার ও ঋণপত্রে। গ্রাহকের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা বুঝে তহবিল বণ্টন করা হয় ওই ক্ষেত্রে। ফান্ড বাছার সময়ে এগুলো মাথায় রাখুন।

এসআইপি করলে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর (সাধারণত মাসে বা তিন মাসে) নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা করতে হয়। ফান্ড বাছা এবং প্রতি কিস্তিতে কত টাকা করে দেবেন, সেটা স্থির করাই আপনার প্রথম কাজ। সে ক্ষেত্রে আরও কতগুলি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে আপনাকে। যেমন— • কত টাকা করে লগ্নি করতে পারব? • কত সময় অন্তর টাকা জমা দেওয়া সুবিধাজনক হবে? • কত দিন ধরে এসআইপি চালাব?

যে-কোনও এসআইপি-তেই লম্বা সময় ধরে লগ্নি করলে রিটার্ন বেশি ভাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনার অল্প বয়স। স্থায়ী চাকরি করেন সরকারি সংস্থায়। কাজেই এই জায়গায় দাঁড়িয়ে লগ্নির মাধ্যম হিসেবে এসআইপি-কে বেছে নেওয়া একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত। সুতরাং আপনার লগ্নির লক্ষ্য পূরণ করবে, এমন কোনও ফান্ড বাছার চেষ্টা করুন। ইক্যুইটি ফান্ডে লম্বা সময় ধরে এসআইপি চালাতে পারেন। তাতে শেয়ার নির্ভর ফান্ডের ঝুঁকি এড়ানো যায় এবং রিটার্নের পরিমাণ অন্য অনেক ফান্ডের থেকে অনেকটাই বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর আপনার বয়স অল্প বলে লম্বা সময় ধরে একটু একটু করে লগ্নি চালিয়ে যাওয়া আপনার পক্ষে সুবিধাজনকও হবে।

চাইলে অবশ্য মাঝারি বা দীর্ঘ মেয়াদের ডেট ফান্ড বা ঋণপত্র ভিত্তিক ফান্ডে লগ্নির কথাও ভাবতে পারেন। এই ফান্ডগুলি থেকে আপনার একটি নির্দিষ্ট আয়ের ব্যবস্থা হতে পারে। বহু ভাল ভাল মিশ্র ফান্ডও রয়েছে। আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা, রিটার্নের খিদে এই সমস্ত বিচার করেই সিদ্ধান্ত নিন। প্রথমে ঠিক করুন কোন ধরনের ফান্ডে এসআইপি করবেন। তার পরে খোঁজখবর নিয়ে বেছে ফেলুন ফান্ড। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কথা বলুন অভিজ্ঞদের সঙ্গে।

একটা কথা এখানে স্পষ্ট করে দেওয়া ভাল। তা হল, কোনও ধরনের ফান্ডেই কিন্তু ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরের মতো নিশ্চিত রিটার্ন বলে কোনও বস্তু নেই। শেষ পর্যন্ত আপনি কত টাকা পাবেন, তা পুরোটাই নির্ভর করে শেয়ার ও ঋণপত্রের বাজার ওঠা-নামার উপর। যে এসআইপি-ই করুন না কেন, নিয়মিত তার পারফর্ম্যান্স দেখতে হবে আপনাকে।

(পরামর্শদাতা নীলাঞ্জন দে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

apnader proshno nilanjan dey
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE