• দীর্ঘমেয়াদে এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি করতে চাই। কী করে শুরু করব? এসআইপির টাকা শেয়ার বাজারে খাটলে পুরো মূলধনটাই খোওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?
অভয় সাঁতরা
এসআইপি শুরু করার জন্য প্রথমেই তিনটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ১) কোন ফান্ড, ২) কত টাকার এসআইপি হবে এবং ৩) কত সময় অন্তর ওই টাকা জমা দেওয়া হবে। অর্থাত্—
• প্রথমে ঠিক করুন কোন ধরনের ফান্ডে (ইকুইটি বা শেয়ার ভিত্তিক, ডেট বা ঋণপত্র ভিত্তিক না কি মিক্সড বা মিশ্র) এসআইপি করবেন।
• খোঁজখবর নিয়ে বেছে ফেলুন ফান্ড, যেখানে এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি করতে চান আপনি। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কথা বলুন অভিজ্ঞদের সঙ্গে।
• কোনও মিউচুয়াল ফান্ডে নির্দিষ্ট সময় অন্তর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ঢেলে যাওয়ার পদ্ধতিই হল এসআইপি। সুতরাং এর পর ঠিক করুন কত টাকা করে জমা দেবেন। এবং কত দিন পর পর। টাকার পরিমাণটা অবশ্যই নিজের সাধ্য ও সামর্থ বুঝে ঠিক করবেন। আর সেটা কত দিন অন্তর দেবেন তা-ও স্থির করবেন আপনার সুবিধা অনুযায়ী। এমনিতে মাসে মাসে বা তিন মাস অন্তর টাকা জমার চলই বেশি।
• এসআইপি শুরু করে দিতে এর পর আবেদনপত্র ভর্তি করতে হবে।
• মাসের একটি নির্দিষ্ট তারিখে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেবে ফান্ড সংস্থাই। আপনাকে তার জন্য প্রতি বার চেক কাটতে হবে না।
এ বার আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। প্রথমেই বলেছি, যে-কোনও ধরনের ফান্ডেই এসআইপি করা যায়। চড়া রিটার্নের সম্ভাবনা থাকায় প্রচারের আলো বেশি পড়ে ইকুইটি ফান্ডের উপর। কিন্তু এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই যে, আপনাকে শেয়ার বাজার ভিত্তিক ফান্ডেই টাকা লাগাতে হবে। তবে আপনার প্রশ্ন অনুযায়ী আমি ধরে নিচ্ছি, আপনি ইকুইটি ফান্ডে এসআইপি করার কথাই ভাবছেন।
দেখুন, এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই যে, শেয়ার বাজার ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু ভাল রিটার্ন ঘরে তুলতে কিছুটা ঝুঁকি তো নিতে হবেই। বিশেষ করে চড়া মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাঞ্জা কষতে হলে। আসলে শেয়ার বাজার ভিত্তিক যে-কোনও লগ্নিতেই লোকসানের সম্ভাবনা অন্যান্য বিনিয়োগ মাধ্যমের তুলনায় বেশি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, যে-ইকুইটি ফান্ডে আপনি এসআইপি করবেন, তা যে সব সময়ে আপনার মনের মতো রিটার্ন দেবে, সেই গ্যারান্টি নেই। লগ্নিকারীরা কিন্তু এটা জেনেই টাকা ঢালেন যে, এখানে ঝুঁকি যেমন বেশি, তেমনি নজরকাড়া রিটার্নের সম্ভাবনাও অন্য অনেক লগ্নির তুলনায় বেশ খানিকটা বেশি।
তবে লোকসানের সম্ভাবনা কিছুটা এড়াতে প্রথম থেকেই এ ক্ষেত্রে কতগুলো কথা মাথায় রেখে চললে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। যেমন—
• এসআইপি-তে লগ্নির জন্য প্রথমেই দরকার ধৈর্য, শৃঙ্খলা আর বাজারের ওঠা-পড়ায় অবিচল থাকার কল্জে। কিছু দিন ন্যাভ টানা পড়লেই যদি টেনশনে ফান্ড ভাঙিয়ে ফেলেন, তা হলে কিন্তু মোটা টাকা কখনওই ঘরে তুলতে পারবেন না। লম্বা সময় ধরে টাকা আপনাকে লাগাতেই হবে।
• অনেকের ধারণা, পাঁচ-ছ’বছর সময়ই এসআইপি-র পক্ষে যথেষ্ট। আদপে তা নয়। চোখে পড়ার মতো রিটার্ন পেতে অন্তত ৮-১০ বছর বা তার থেকেও বেশি লাগাতার লগ্নির জন্য তৈরি থাকুন।
• যদি মনে করেন ইকুইটি ফান্ডে রাতারাতি মোটা মুনাফা করব, তা অসম্ভব। আসলে বাজারের সঙ্গে সঙ্গে এসআইপি-র ন্যাভ যত ওঠা-নামা করবে, তত তহবিল বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ ন্যাভ পড়লে, তবেই আপনার হাতে বেশি ইউনিট আসবে। আবার তার পর যখন তা উঠবে, তখন ওই ইউনিট থেকেই বেশি টাকা পাবেন আপনি।
• ফান্ডে লগ্নির একটা মস্ত সুবিধা হল, সেখানে ঢালা টাকা সাধারণত বিভিন্ন শিল্পের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। অর্থাত্ যাকে বলে ডাইভার্সিফায়েড ইক্যুইটি ফান্ড। ঝুঁকি কিছুটা এড়াতে এসআইপির করার জন্য ওই ধরনের ফান্ড বাছলেই ভাল।
• শেষে বলি, একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন, এমন কোনও ধরাবাঁধা নিয়ম নেই যে, একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পরে আপনাকে এসআইপি ভাঙিয়ে নিতেই হবে। অর্থাত্ প্রথমে আপনি যত দিনের জন্য এসআইপি করবেন বলে স্থির করেছেন বা আবেদনপত্রে লিখেছেন, সেই পর্যন্ত কাটিয়ে আসার পরে যদি দেখেন কাঙ্খিত লাভের মুখ এখনও দেখেননি বা আরও বেশি রিটার্ন চান, তা হলে এসআইপি-র মেয়াদ আরও বাড়িয়ে নিতে পারেন।
(পরামর্শদাতা নীলাঞ্জন দে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy