Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Presents

আপনারটা বেছে নিন

শেষ মুহূর্তে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার তোড়জোড় তো শুরু করেছেন। কিন্তু আপনি জানেন কি ঠিক কোন ফর্ম দাখিল করতে হবে আপনাকে? লিখছেন নারায়ণ জৈনরোজগারের সূত্র ধরে প্রতিটি শ্রেণির করদাতার জন্য আছে আলাদা আলাদা ফর্ম। আপনি যে শ্রেণির মধ্যে পড়েন, তার জন্য নির্দিষ্ট ফর্মই ভর্তি করতে হবে আপনাকে। যেমন, আপনি যদি চাকরিজীবী হন তা হলে এক রকম, আবার স্বনিযুক্ত পেশাদার হলে আর এক রকম। ব্যবসায়ীদের জন্য আছে আলাদা ফর্ম। আবার সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের চরিত্র অনুযায়ী ভরতে হতে পারে ভিন্ন ভিন্ন ফর্ম।

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ০২:১০
Share: Save:

রোজগারের সূত্র ধরে প্রতিটি শ্রেণির করদাতার জন্য আছে আলাদা আলাদা ফর্ম। আপনি যে শ্রেণির মধ্যে পড়েন, তার জন্য নির্দিষ্ট ফর্মই ভর্তি করতে হবে আপনাকে। যেমন, আপনি যদি চাকরিজীবী হন তা হলে এক রকম, আবার স্বনিযুক্ত পেশাদার হলে আর এক রকম। ব্যবসায়ীদের জন্য আছে আলাদা ফর্ম। আবার সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের চরিত্র অনুযায়ী ভরতে হতে পারে ভিন্ন ভিন্ন ফর্ম। রোজগারের অঙ্কের তারতম্যের ভিত্তিতেও ফর্মের পার্থক্য হতে পারে। এ বার জেনে নিন আপনার জন্য ঠিক কোনটা।

ব্যক্তি আয়করদাতার জন্য

• আইটিআর ১ (সহজ): আপনার আয় কি বেতন/ পেনশন/ পারিবারিক পেনশন/ নিজের একটি বাড়ি/ অন্যান্য সূত্র থেকে (যে সব করবিহীন আয় ৫০০০ টাকার বেশি, লটারি বা ঘোড়দৌড় জিতে করা উপার্জন বাদ দিয়ে)? তা হলে আপনাকে এই রিটার্ন ফর্মটি পূরণ করে জমা দিতে হবে।

• আইটিআর ২: যে-আয়ে কর দিতে হয় না (ডিভিডেন্ড, কৃষি থেকে আয় ইত্যাদি) তা যদি ৫০০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়, তা হলে রিটার্ন জমা দিতে এই ফর্ম লাগবে। আপনি লটারি বা ঘোড়দৌড় জিতে রোজগার করলেও ভরবেন এই ফর্মটি।

• আইটিআর ৩: এমন হতে পারে যে, আপনি কোনও অংশীদারি সংস্থার (পার্টনারশিপ ফার্ম) একজন অংশীদার। এর পাশাপাশি আলাদা করে নিজের কোনও ব্যবসা আপনার নেই কিংবা স্বাধীন পেশাদার হিসেবেও কাজ না-করেন আপনি। সে ক্ষেত্রে আপনি নেবেন এই ফর্মটি।

• আইটিআর ৪: নিজের ব্যবসা থাকলে বা পেশাদার হিসেবে স্বনির্ভর হলে ও সেখান থেকে মুনাফা করলে, ফর্ম এটি। আইনজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের মতো স্বাধীন পেশাদার বা স্বনিযুক্ত ব্যক্তিদের এটিই পূরণ করতে হবে।

• আইটিআর ৪এস (সুগম): ক) আপনার যদি ছোট ব্যবসা থাকে এবং মোট ব্যবসা (টার্নওভার)/ বিক্রি (সেল)/ হাতে আসা মোট টাকার পরিমাণ (গ্রস রিসিট) বছরে এক কোটি টাকা না-পেরোয়, তা হলে আয়কর আইনের ৪৪এডি ধারায় আপনি অনুমানিক আয়ের ভিত্তিতে (প্রিজামটিভ ইনকাম স্কিম) কর দেওয়ার সুবিধা পাবেন। এ ক্ষেত্রে আপনার (ব্যবসার মালিক হিসেবে) আয় বা মুনাফা মোট ব্যবসা/বিক্রির অঙ্কের ৮ শতাংশের সমান ধরে নিয়ে তার উপর কর হিসাব হবে। এবং আপনাকে পূরণ করে জমা দিতে হবে এই আইটিআর ৪এস (সুগম) ফর্মটি।

খ) আপনি যদি পণ্য পরিবহণের ব্যবসা করেন এবং হাতে ১০টির বেশি মালপত্র পরিবহণের গাড়ি না-থাকে, তা হলে আয়কর আইন মাফিক ব্যবসাটি ছোট বলেই ধরা হয়। তখন ৪৪এ ই ধারায় আনুমানিক আয় ধরে কর হিসাব করার সুযোগ নিতে পারেন আপনি। প্রতিটি ভারী গাড়ির জন্য অর্থবর্ষের প্রতি মাসে বা মাসের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আয় ধরা হয় ৫০০০ টাকা। আর অন্যান্য গাড়ির জন্য ৪৫০০ টাকা। এই কর দিতেও আপনাকে ওই আইটিআর ৪এস (সুগম) রিটার্ন ফর্মই জমা দিতে হবে।

অংশীদারি সংস্থার জন্য

আইটিআর ৫: পার্টনারশিপ ফার্মকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে গেলে পূরণ করতে হবে এই ফর্মটি।

কোম্পানি করদাতার জন্য

আইটিআর ৬: যে-কোনও কোম্পানিকে রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য এই ফর্ম পূরণ করতে হয়।

দাতব্য ট্রাস্ট, রাজনৈতিক দল ইত্যাদির জন্য

• আইটিআর সেভেন: দাতব্য প্রতিষ্ঠান, ট্রাস্ট, সোসাইটি ইত্যাদি এবং রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদির জন্য এই ফর্ম। তারা কাগজের ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে পারে। আবার চাইলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে (ই-ফাইল) ডিজিটাল সই করেও জমা দিতে পারে। এ ছাড়া, আরও একটি পদ্ধতি আছে। ইন্টারনেটে রিটার্ন জমা দেওয়ার পর প্রদত্ত তথ্যের প্রমাণ (ভেরিফিকেশন) হিসেবে আইটিআর V ফর্ম পূরণ করে পাঠিয়ে দিতে পারে বেঙ্গালুরুতে, আয়কর দফতরের সেন্ট্রাল প্রসেসিং সেন্টারে (সিপিসি)।

তবে দাতব্য সংস্থা, ট্রাস্ট বা সোসাইটি-সহ এই শ্রেণির করদাতাদের সকলের ক্ষেত্রেই একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। তাদের হিসাবের খাতাপত্র যদি অডিট করাতে হয়, তা হলে কিন্তু তাদের আয়কর রিটার্ন ই-ফাইল করা বাধ্যতামূলক।

জমা যখন নেটে

রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখন ‘ই-ফাইলিং। বোঝাই যাচ্ছে অনলাইনে (ইন্টারনেট মারফত) আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা এটা। বিরক্তিকর লম্বা লাইন নেই। রিফান্ডের জন্য হা-পিত্যেশ নেই। সামনে একটি কম্পিউটার থাকলে ও ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া গেলে বাড়িতে বা অফিসের নিরিবিলিতে বসেই মাউসের ক্লিকে কেল্লা ফতে। যদি আপনার ই-ফাইলিংয়ের অভিজ্ঞতা এখনও পর্যন্ত না-থাকে, তা হলে দেখবেন দৌড়দৌড়ি না-করেও এত সহজে কাজটা করা যাবে এবং এতটাই কম সময় খরচ হবে যে, আপনি নিজেই ভারী অবাক হয়ে যাবেন। এ বার জানুন নেটে রির্টান জমার খুঁটিনাটি

১) ইন্টারনেট মারফত আয়কর রিটার্ন জমা তুলনায় অনেক সহজ। জমার পর প্রসেসিংয়ে আগের থেকে অনেক কম সময় লাগে। রিফান্ডও পাওয়া যায় তাড়াতাড়ি।

২) আপনি যদি ব্যক্তি আয়করদাতা হন এবং আগামী ৩১ মার্চ শেষ হওয়া ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে ৫ লক্ষ টাকার বেশি আয় করে থাকেন, তবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে রিটার্ন জমা দিতে বাধ্য আপনি।

সে ক্ষেত্রে আপনি ডিজিটাল সই করে তা জমা দিতে পারেন। কিংবা ই-ফাইলিংয়ের পর আইটিআর V ফর্ম ভেরিফিকেশন হিসেবে সিপিসি-তে পাঠিয়ে দিতে পারেন।

৩) যদি ৪৪এবি নম্বর ধারায় আপনাকে আয়কর অডিট করাতে হয় এবং আইটিআর ফোর রিটার্ন ফর্মটি আপনার জন্য উপযুক্ত হয়ে থাকে, তা হলে ডিজিটাল সই করেই রিটার্ন ই-ফাইলিং করতে হবে।

৪) পার্টনারশিপ ফার্ম এবং কোম্পানিকেও ডিজিটাল সই করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে রিটার্ন জমা দিতে হয়।

৫) যদি আপনি ভারতের নাগরিক হন এবং দেশের বাইরে আপনার আর্থিক সম্পদ থাকে বা সেখানে কোনও ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন কিংবা বিদেশে অবস্থিত কোনও অ্যাকাউন্টে সই করার অধিকার থাকে, তা হলে আপনি ডিজিটাল সই করে অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে পারেন। আবার ই-ফাইল করার পর আইটিআর V ফর্ম বেঙ্গালুরুর সিপিসি-তে পাঠিয়ে প্রদত্ত তথ্যের প্রমাণ দিতে পারেন।

স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব

আপনার আয় যদি বছরে ২৫ লক্ষ টাকার বেশি হয়ে থাকে, তা হলে আপনি উচ্চবিত্ত স্তরে পড়বেন। সে ক্ষেত্রে আইটিআর ৩ কিংবা আইটিআর ৪, যে রিটার্ন ফর্মই আপনার জন্য হোক না কেন, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি আলাদা আলাদা ভাবে দেখিয়ে জমা দিতে হবে। জানাতে হবে, স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ অর্থাৎ বাড়ি, জমি ইত্যাদি এবং সেগুলি কত টাকায় কিনেছিলেন এবং অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ এবং কত টাকায় কিনেছিলেন। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে পড়ছে, আর্থিক সম্পদ (ব্যাঙ্কে জমা অর্থ, অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকা টাকা, শেয়ার, ঋণপত্র, বিমা প্রকল্প, ঋণ, অগ্রিম দেওয়া অর্থ ও হাতে থাকা নগদ), গয়না, সোনার সম্পদ (বুলিয়ন), প্রত্নতাত্ত্বিক সম্ভার, আঁকা ছবি, ভাস্কর্য বা ওই ধরনের কোনও শিল্পকর্ম, গাড়ি, প্রমোদতরণী (ইয়ট), নৌকো ও বিমান।

এ ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়ে মোট সম্পদের বিবরণ দেবেন, সেগুলি কিনতে কত টাকা খরচ হয়েছিল তার হিসাব দাখিল করবেন ও সেই সঙ্গে সেগুলির জন্য যদি কোনও ঋণ নেওয়া হয়ে থাকে, সেটাও উল্লেখ করবেন তথ্য জমা দেওয়ার সময়।

তবে মনে রাখবেন, এই নিয়ম বেতনভুক আয়করদাতাদের জন্য নয়। স্বাধীন পেশাদার, ব্যবসা বা পার্টনারশিপ সংস্থা থেকে যাঁরা আয় করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

সিপিসি-র ঠিকানা

যদি ডিজিটাল সই ছাড়াই নেটে আয়কর রিটার্ন জমার অনুমতি দেওয়া হয়, তা হলে আইটিআর V ফর্মটি আয়কর দফতরের সেন্ট্রাল প্রসেসিং সেন্টারে (সিপিসি) পাঠাতেই হবে। কারণ রিটার্নে দেওয়া তথ্যের প্রমাণ হিসাবে ধরা হয় সেটি। সে ক্ষেত্রে যে দিন ই-ফাইলিং করেছেন, তার ১২০ দিনের মধ্যে (কিংবা বর্ধিত মেয়াদ) আইটিআর V ফর্মটি সিপিসি-তে পৌঁছতে হবে। ফর্মটির নির্দিষ্ট জায়গায় সই করে ওই কেন্দ্রের ঠিকানায় পাঠাতে পারেন সাধারণ পোস্ট বা স্পিড পোস্টে। সিপিসি-র ঠিকানা হল—

ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট-

সিপিসি, পোস্ট ব্যাগ নম্বর ১,

ইলেকট্রনিক সিটি পোস্ট অফিস,

বেঙ্গালুরু- ৫৬০১০০ (কর্নাটক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tax return narayan jain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE