এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৭
ভারত আর বাংলাদেশের সম্পর্কে ‘সোনালি অধ্যায়’-এর শুরু তাঁরই হাতে! স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তেমনই মনে করেন।
০২২৭
সেই ভরসার মানুষটির কাঁধেই এ বার নতুন দায়িত্ব দিয়েছে মোদী সরকার। দেশের সম্মানরক্ষার ভার আপাতত তাঁরই হাতে।
০৩২৭
নয়াদিল্লিতে শুরু হয়েছে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে। রাজধানী এখন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতাদের ঠিকানা। দিল্লিতে তাঁদের জন্য ঢালাও আয়োজন। সেই আয়োজনের খুঁটিনাটি দেখাশোনার দায়িত্ব যাঁর কাঁধে দিয়ে নিশ্চিন্তে রয়েছে কেন্দ্র, তিনিই হলেন এই মানুষটি।
০৪২৭
পেশায় দেশের ফরেন সার্ভিস অফিসার। তবে বছরখানেক হল অবসর নিয়েছেন। কিন্তু এত মানুষ থাকতে হঠাৎ তাঁর উপরেই ভরসা কেন?
০৫২৭
একদা বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশনারের দায়িত্ব সামলেছেন। রেকর্ড বলছে, দু’দেশের সীমানা নিয়ে দীর্ঘ দিনের যে সমস্যা, তা মিটেছিল তাঁর চেষ্টাতেই।
০৬২৭
ভারত-বাংলাদেশের মাঝের ছিটমহল নিয়ে জটিলতা ছিল দীর্ঘ দিন ধরে। সীমারেখার অবস্থানের জন্য ওই এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে সমস্যায় পড়ত দু’দেশই। কোনও বাড়ির সদর দরজা বাংলাদেশে তো ঘর ভারতে। আবার কোনও বাড়ির উঠোন ভারতে হলেও রান্নাঘর বাংলাদেশে। এই জটিলতা সামলে দু’দেশের সীমান্ত সমস্যার মিটিয়েছিলেন এই আইএফএস কর্তা।
০৭২৭
নাম হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। জন্মসূত্রে সিকিমের মানুষ তিনি। তবে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা মুম্বইয়ে। বাবা হিন্দু, মা বৌদ্ধ। দার্জিলিং নিবাসী এই সিকিমি সন্তানের নাম রাখা হয়েছিল হর্ষবর্ধন শেরিং লা। খটোমটো ঠেকায় মুম্বইয়ের স্কুল সেই পদবি পাল্টে করে দেয় শ্রিংলা! বহু দিন বাংলাদেশে থাকায় ঝরঝরে বাংলায় কথা বলতে পারেন তিনি।
০৮২৭
২০০৫ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী মিশনে কর্মরত ছিলেন শ্রিংলা। ইরাকের ‘তেলের বদলে খাদ্য’ প্রকল্পে বিশাল অঙ্কের ঘুষের অভিযোগে একটি স্বাধীন তদন্ত করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। নিউ ইয়র্কের সংশ্লিষ্ট শিবিরে যোগাযোগের সূত্রে এক হাজার শব্দের ওই রিপোর্ট আগেই হাতে পান শ্রিংলা। সেই সময়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রণেন সেনকে সঙ্গে সঙ্গে জানান, তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী নটবর সিংহের নাম রয়েছে ওই রিপোর্টে। বিদেশ মন্ত্রককে কিছু না জানিয়ে রণেন সেন সে সময় সরাসরি যোগাযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে। পদত্যাগ করানো হয় নটবরকে।
০৯২৭
২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সে দেশে ৫০ হাজার আবাসন প্রকল্পে হাত দিয়েছিল ভারত। সে সময় বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণের বিরুদ্ধে ওই প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন শ্রীলঙ্কার দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারতীয় যুগ্মসচিব। ওই চাপানউতরের মধ্যেই শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের দায়িত্বে আনা হয় শ্রিংলাকে। যিনি বিতর্ক সরিয়ে সফল ভাবে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ করেন। শুধু তাই-ই নয়, তাঁর সময়েই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমশ ভাল হতে থাকে।
১০২৭
২০১৬ থেকে ২০১৯ বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশনারের দায়িত্ব সামলেছেন হর্ষবর্ধন। সেই সময় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে অনেক লেখালিখিও করেছেন তিনি।
১১২৭
তাঁর আমলেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে দিল্লি এসেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেটা ২০১৭ সালের এপ্রিল মাস।
১২২৭
সেই সফরকেই ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ‘সোনালি অধ্যায়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন মোদী। সমাধান হয়েছিল দু’দেশের একাধিক দ্বিপাক্ষিক সমস্যার।
১৩২৭
হর্ষবর্ধন নিজে বসেছিলেন ভারত-বাংলাদেশের সীমারেখা নিরূপণকারী কমিটির মাথায়।
১৪২৭
সেই সাফল্যের পর নিশ্চিত ভাবেই হর্ষবর্ধনের উপর ভরসা বেড়েছিল মোদী সরকারের। বাংলাদেশের পর তাঁকে আরও বড় দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয় আমেরিকায়।
১৫২৭
২০১৯ সালে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসাবে আমেরিকায় যান হর্ষবর্ধন। তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শোনা যায় ওয়াশিংটনে পৌঁছনোর দু’দিনের মধ্যে ট্রাম্পের কাছে নিজের পরিচয়পত্র এবং কাজের উদ্দেশ্য সংক্রান্ত খতিয়ান নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তিনি। মাত্র এক বছর তিনি ছিলেন আমেরিকায়। এই এক বছরে আমেরিকার ২১টি প্রদেশ ঘুরেছেন হর্ষবর্ধন।
১৬২৭
আমেরিকাবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করার পাশাপাশি আমেরিকায় পাঠরত প্রবাসী ছাত্রছাত্রীদের সমস্যার বিষয়েও কথা বলেন হর্ষবর্ধন। সেই জনসংযোগ কতটা ফলপ্রসূ ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় কিছু দিনের মধ্যেই।
১৭২৭
আমেরিকায় হর্ষবর্ধন রাষ্ট্রদূত থাকাকালীনই আয়োজিত হয় একটি জনসভা। গোটা বিশ্বের আলোচনায় উঠে আসে সেই সভার নাম— ‘হাউডি মোদী’।
১৮২৭
২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর টেক্সাসের হিউস্টনে বসেছিল ‘হাউডি মোদী’র আসর। সেখানে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনতে। অধিকাংশই প্রবাসী ভারতীয়। মোদী এবং ট্রাম্প যৌথ বিবৃতি দিয়েছিলেন সেই সভায়।
১৯২৭
সেই প্রথম কোনও বিদেশি রাষ্ট্রনেতা আমেরিকার মাটিতে এত বড় জনসভা করলেন। আর সেই প্রথম আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যৌথ ভাবে এমন সভা করলেন অন্য কোনও দেশের রাষ্ট্রনেতা।
২০২৭
হর্ষবর্ধনই পরিকল্পনা করেছিলেন সেই সভার সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে। কূটনীতিকরাও মেনেছিলেন সফল হয়েছে ‘হাউডি মোদী’।
২১২৭
২০২০-র জানুয়ারি মাসে আমেরিকা থেকে ফিরিয়ে আনা হয় হর্ষবর্ধনকে। পর পর দু’টি দায়িত্বেই ১০০-এ ১০০ পেয়েছিলেন এই আইএফএস কর্তা।
২২২৭
বাংলাদেশ এবং ওয়াশিংটনে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সফল দৌত্য সেরে আসা হর্ষবর্ধনের পদবি নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে বার বারই দেখা গিয়েছে কৌতূহল ও আগ্রহ। সম্প্রতি সিকিমের আইসিএফএআই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্মানিক ডক্টরেট নিতে গিয়ে যে বক্তৃতা দেন শ্রিংলা, তার অনেকটাই নেপালিতে। বলেন, ‘‘আমার ভাষা নেপালি, যা সিকিমেরও একটি ভাষা।’’
২৩২৭
মোদী সরকার বড় পুরস্কার প্রস্তুত রেখেছিল হর্ষবর্ধনের জন্য। দেশে ফেরার ১৮ দিনের মাথায় হর্ষবর্ধনকে দেশের বিদেশ সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যে কাজ দীর্ঘ দিন সামলেছেন দেশের বর্তমান বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তখন অবশ্য ভারতের বিদেশমন্ত্রী ছিলেন সুষমা স্বরাজ।
২৪২৭
নতুন দায়িত্ব পেয়ে হর্ষবর্ধন বলেছিলেন, মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বও বাড়ল। তবে সেই দায়িত্ব পালনে যে তিনি যোগ্য, সে ব্যাপারে সন্দেহ ছিল না ঊর্ধ্বতনদের।
২৫২৭
গত বছর এপ্রিলে দেশের বিদেশ সচিব হিসাবেই অবসর গ্রহণ করেন হর্ষবর্ধন। এখন তিনি ৬১। তবে তিনি অবসর নিলেই বা কী! বড় কাজের জন্য মোদী সরকার এখনও তাঁর উপরেই নির্ভরশীল। তাই জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের মতো আয়োজনে তাঁর উপরেই ভরসা করেছে কেন্দ্র।
২৬২৭
শ্রিংলা ইংরেজি এবং বাংলা-সহ একাধিক ভারতীয় ভাষা বাদে ফরাসি, ভিয়েতনামি এবং নেপালি ভাষায় কথা বলতে পারেন। তাঁর স্ত্রীর নাম হেমাল শ্রিংলা। তাঁদের এক পুত্রসন্তান রয়েছেন।
২৭২৭
দিল্লিতে ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর হর্ষবর্ধনের কড়া নজরদারিতে বসল বিদেশ থেকে আসা রাষ্ট্রনেতা এবং অতিথিদের সমাবেশ। মোদী সরকারের বিশ্বাস, বাংলাদেশ আর আমেরিকার মতোই এই পরীক্ষাতেও ১০০-এ ১০০ পাবেন, পাওয়াবেন হর্ষবর্ধন।