Pakistani agents using social media to honeytrap Indian officers and get sensitive information on missiles dgtl
Pakistan Honeytrap for India
ভারতের গোপন কথা জানতে ‘মাকড়সার জাল’ বিছিয়েছে পাকিস্তান, ফাঁদে পড়ছেন দাপুটে কর্তারাও!
ভারতের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপন তথ্য জানতে ফেসবুক, হোয়াট্সঅ্যাপে যেন ‘মাকড়সার জাল’ বিছিয়ে রেখেছে পাকিস্তান। তাতে বার বার ধরা পড়ে যাচ্ছেন অনেকে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৪ ১৪:০৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের এক এজেন্টের ফাঁদে পা দিয়ে সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছেন এক ব্যক্তি। তাঁর কাছ থেকে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। বেশ কিছু তথ্য নাকি ইতিমধ্যে হাতে পেয়েও গিয়েছে আইএসআই।
০২২১
পাকিস্তানে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে প্রবীণ মিশ্র নামের ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গুজরাতের ভারোচ থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি।
০৩২১
সিআইডির এডিজিপি রাজকুমার পাণ্ডিয়ান সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘‘প্রবীণ নামের ওই যুবক ‘হানিট্র্যাপের’ শিকার হয়েছেন। তিনি যে সংস্থায় কর্মরত, তার সঙ্গে ডিআরডিওর (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন) যোগ ছিল। তাই তাঁকে নিশানা করা হয়েছে।’’
০৪২১
গুজরাতের অঙ্কলেশ্বরের একটি সংস্থায় কাজ করতেন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রবীণ। ওই সংস্থা ডিআরডিওকে সিন্থেটিক রাসায়নিক সরবরাহ করে। কী ভাবে তিনি পাকিস্তানি চরের পাতা ফাঁদে পা দিলেন?
০৫২১
পুলিশ সূত্রে খবর, ডিআরডিওর ব্রক্ষ্মস ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা করছিল পাকিস্তান। সে বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ইতিমধ্যে গোপন খবর এসেছিল। সেই ষড়যন্ত্রেরই শিকার হয়েছেন প্রবীণ।
০৬২১
পাকিস্তানের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রথম খবর এসেছিল কাশ্মীরের উধমপুরের সেনাঘাঁটি থেকে। সতর্ক করে জানানো হয়েছিল, ডিআরডিও, হিন্দুস্থান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড এবং ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সংস্থায় কর্মরত অথবা প্রাক্তন কর্মীদের নিশানা করা হতে পারে।
০৭২১
প্রবীণের সঙ্গে যিনি যোগাযোগ করেছিলেন, তিনি নিজের পরিচয় দেন সোনাল গর্গ নামে। জানান, তিনি চণ্ডীগড়ের আইবিএমে কর্মরত। প্রবীণের সঙ্গে কথা বলতে ভারতীয় হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বরই ব্যবহার করেছিলেন ওই মহিলা।
০৮২১
ফেসবুকে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণার ছক কষেছিলেন সোনাল। প্রবীণকে তিনি প্রেমের ফাঁদে (হানিট্র্যাপ) ফেলেন। তার মাধ্যমেই প্রতিরক্ষা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে নেন তাঁর থেকে। এমনকি, প্রবীণের অফিসের সার্ভারে ক্ষতিকারক সফ্টঅয়্যারও ইনস্টল করে দেন তিনি।
০৯২১
জাতীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রবীণকে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৩ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। যুদ্ধের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপন নথি পাচার করে দেওয়ার শাস্তির কথা বলা হয়েছে ওই ধারায়। এ ছাড়া আইটি আইনের বেশ কিছু ধারাও এই মামলায় যোগ করা হয়েছে।
১০২১
তদন্তকারীদের মতে, ফেসবুকে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে প্রথমে প্রবীণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন সোনাল। নিজের ভুয়ো পরিচয় দেন। তার পর ভারতীয় হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বর থেকে চলতে থাকে কথোপকথন।
১১২১
প্রবীণের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ক্রমশ ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছিলেন সোনাল। একসময় প্রবীণ তাঁর প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগান সোনাল।
১২২১
প্রেমের নেশায় নিজের কর্তব্য ভুলে গিয়েছিলেন প্রবীণ। তাই দেশের প্রতিরক্ষা এবং ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সোনালের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন। যাতে সামগ্রিক ভাবে দেশের ক্ষতি হয়েছে। সোনালের মাধ্যমে সেই তথ্য এখন পাকিস্তানের হাতে।
১৩২১
প্রবীণের এই ঘটনা কিন্তু নতুন নয়। ভারতের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করার জন্য এর আগেও একই পন্থা অবলম্বন করেছে পাকিস্তান। এক বার নয়, একাধিক বার। ভারতের ‘গোপন কথা’ জানতে যেন মাকড়সার জাল বিছিয়ে ফেলেছে পাকিস্তান। আর তাতেই সতর্কতা সত্ত্বেও বার বার পা দিয়ে ফেলছেন তাবড় অফিসারেরা।
১৪২১
চলতি বছরের শুরুতে সত্যেন্দ্র সিওয়াল নামের এক যুবককে উত্তরপ্রদেশের এক গ্রাম থেকে পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা। তার আগে এমন আরও কয়েকটি ঘটনা খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল।
১৫২১
পর পর এই ঘটনাগুলির দিকে চোখ রেখে বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ভারতকে টার্গেট করতে পাকিস্তানের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ফেসবুক, হোয়াট্সঅ্যাপের মতো সমাজমাধ্যম। সেখানেই বিছানো হয়েছে ‘মাকড়সার জাল’। ভারতীয় সেনা দূতাবাস এবং অন্যান্য সংবেদনশীল দফতরে কর্মরতদের এ ভাবে নিশানা করা হচ্ছে।
১৬২১
সত্যেন্দ্রের ঘটনাও অনেকটা প্রবীণের মতোই। পুলিশি জেরার মুখে তিনি স্বীকার করেছেন, প্রেমের ফাঁদে পড়ে তিনি দেশবিরোধী কাজ করে ফেলেছিলেন। তাঁকে বিপথে চালনা করেছিলেন পূজা নামধারী কোনও এক আইএসআই এজেন্ট।
১৭২১
প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতিরক্ষার গোপন তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল চালু রয়েছে সেই ঠান্ডা লড়াইয়ের সময় থেকে। ইন্টারনেট যখন এত সহজলভ্য এবং সক্রিয় ছিল না, তখনও বিভিন্ন দেশের নাইটক্লাবে ঢুঁ মারতেন স্বল্পবসনা সুন্দরীরা। সৌন্দর্যের আড়ালে তাঁরা গুপ্তচরের পরিচয় গোপন করতেন। সাফল্যও আসত বার বার।
১৮২১
কয়েক বছর আগে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা ফেসবুকে অন্তত ১২৫টি মহিলার নামধারী অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করেছিল, যাঁরা পাকিস্তানের চর হতে পারেন। প্রত্যেকের প্রোফাইলেই এক জন বা দু’জন ভারতীয় অফিসার বন্ধু হিসাবে ছিলেন।
১৯২১
পাকিস্তানে বসেই যে এই চরবৃত্তি চলে, তা নয়। এর শিকড় ছড়িয়ে আছে বহু দূর পর্যন্ত। তাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা অথবা ইউরোপের কোনও না কোনও দেশে বসে পাকিস্তানি গুপ্তচরেরা ফাঁদ পেতে শিকার করছেন ভারতীয়দের।
২০২১
হানিট্রাপ ব্যবহার করায় অবশ্য পাকিস্তান প্রথম নয়। ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর প্রাক্তন স্পেশাল ডিরেক্টর এএস ডুলাট টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে কাজ করে রাশিয়াও। শত্রু দেশের গোপন তথ্য আদায়ের জন্য মহিলাদের এগিয়ে দেয় তারাও। ভারতীয় অফিসারদেরও এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল একাধিক বার।
২১২১
তবে আপাতত রাশিয়া নয়। ভারতের মাথাব্যথার কারণ পড়শি পাকিস্তান। সমাজমাধ্যমের এই বিপুল সম্প্রসারিত দুনিয়ায় পাকিস্তানের পাতা ফাঁদ কী ভাবে এড়াবেন ভারতীয় অফিসারেরা, সেটাই এখন নয়াদিল্লির কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।