Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Japan’s Disappearing Dessert

ধীরে ধীরে ‘ভ্যানিশ’ হয়ে যাচ্ছে মরুভূমি! কারণ কী?

ভূবিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ১ লক্ষ বছর ধরে এই মরুটিলাগুলি তৈরি হয়েছে। অতীতে চুগোকু পর্বত থেকে সেন্ডাই নদীর মাধ্যমে ভেসে আসা বালি জাপান সাগরে জমা হয়েছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
টোকিয়ো শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৩ ১৫:৫৩
Share: Save:
০১ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

চারিদিকে চিক চিক করছে সোনালি বালির দানা। বিস্তীর্ণ মরুভূমির সবচেয়ে উঁচু বালির স্তূপ থেকে উঁকি দিচ্ছে সূর্য, নীল আকাশ। শুনে মনে হতেই পারে আরব দেশের কোনও মরুভূমির কথা হচ্ছে। কিন্তু আসলে তা নয়। কথা হচ্ছে, জাপানের ছোট মরুভূমি অঞ্চল টোটোরির। যা জাপানের জনবিরল সান ইন অঞ্চলের উপকূল বরাবর বিস্তৃত। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, এই মরুভূমি ধীরে ধীরে ‘ভ্যানিশ’ হয়ে যাচ্ছে! আর তার কারণ জানতেই তৎপর বিশেষজ্ঞরা।

০২ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

টোটোরি মরুটিলাগুলি উপকূল বরাবর ১৬ কিলোমিটার বিস্তৃত। উচ্চতম মরুটিলাগুলি ৪৫-৫০ মিটার পর্যন্ত উঁচু। হাজার হাজার বছর ধরে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার পর সেগুলি বর্তমানে বিলুপ্ত হওয়ার পথে।

০৩ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

টোটোরির মরুটিলাগুলি জাপানের বৃহত্তম এবং জনবহুল দ্বীপ হোনশুর পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। ওসাকা থেকে প্রায় ২০০ কিমি এবং হিরোশিমা থেকে প্রায় ৩০০ কিমি দূরে থাকা টোটোরি জাপানের সবচেয়ে জনবিরল এলাকা।

০৪ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

ভূবিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ১ লক্ষ বছর ধরে এই মরুটিলাগুলি তৈরি হয়েছে। অতীতে চুগোকু পর্বত থেকে সেন্ডাই নদীর মাধ্যমে ভেসে আসা বালি জাপান সাগরে জমা হয়েছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, বাতাস এবং জলের স্রোতে সেই বালুরাশি থেকে টিলাগুলি তৈরি হয়েছে বলে মত ভূবিজ্ঞানীদের।

০৫ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

১৯২৩ সাল পর্যন্ত টোটোরির বাইরের মানুষের কাছে এই মরুটিলাগুলির কথা তুলনামূলক ভাবে অজানা ছিল। তবে বিখ্যাত জাপানি সাহিত্যিক তাকেও আরিশিমার লেখায় জায়গা পাওয়ার পর থেকে জাপান ব্যতীত অন্যান্য দেশের ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের কাছে গুরুত্ব বেড়েছে টোটোরির।

০৬ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

জাপানের পর্যটন শিল্প থেকে আয়ের একাংশ আসে টোটোরি থেকেই। প্রতি বছর গড়ে ১২ লক্ষ মানুষ টোটোরির মরুটিলা দেখার জন্য ভিড় জমান। পর্যটকেরা জাপানের এই ছোট মরুভূমিতে এসে একটি বালির সংগ্রহশালা পরিদর্শন করতে পারেন। এ ছাড়াও অনেক পর্যটক এই মরুভূমিতে এসে উটের পিঠে চেপে ঘুরে বেড়াতে এবং ‘স্যান্ডবোর্ডিং’-এর মত জনপ্রিয় খেলায় অংশ নিতে পছন্দ করেন।

০৭ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

বছরের পর বছর ধরে জাপানের ঘরে কোটি কোটি অর্থ এনে দিলেও আস্তে আস্তে টোটোরি মরুভূমি ছোট হয়ে আসছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, টোটোরির বালির টিলাগুলি ১০০ বছরের আগের আকারের তুলনায় মাত্র ১২ শতাংশে এসে ঠেকেছে।

০৮ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

কিন্তু কেন এই অবস্থা টোটোরির? কেন ধীরে ধীরে জাপানোর মানচিত্র থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে এই মরুভূমি?

০৯ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, অনেকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে টোটোরি অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করলেও, আসলে তা নয়। জাপানকে রক্ষা করার সমবেত প্রচেষ্টার কারণেই টোটোরির এই হাল বলে জানাচ্ছেন সে দেশের মানুষেরা।

১০ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে জাপান সরকারের তরফে পুরো দেশ জুড়ে বৃক্ষরোপণ প্রকল্প শুরু হয়েছিল। টোটোরিতেও সেই প্রকল্প শুরু হয়। প্রধান লক্ষ্য ছিল টোটোরির মরুটিলাগুলিকে বন ও কৃষিজমিতে পরিণত করা। যাতে মরুভূমি সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা চাষাবাদ করে জীবনযাপন করতে পারেন।

১১ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

পাশাপাশি, বালির ঝড়ের ক্ষতি রোধ করতে এবং পরিবেশকে আরও ভাল ভাবে লালন করতেও এই উদ্যোগ নেয় জাপানের প্রশাসন।

১২ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

টোটোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ ডাই নাগামাৎসু টোটোরির মরুটিলাগুলি নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা চালাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বালির ঝড় রুখতে এবং ওই এলাকাকে বাসযোগ্য করে তুলতে জাপানের দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে উপকূলীয় টিলাগুলিতে অনেক পাইন গাছ লাগানো হয়েছিল।’’

১৩ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

নাগামাৎসু আরও বলেন, ‘‘বিংশ শতাব্দীতে প্রযুক্তি আরও উন্নত হয়েছে। সেই প্রযুক্তির সাহায্যে টোটোরিতে উপকূলীয় জঙ্গল তৈরি হচ্ছে। বৃক্ষরোপণ অভিযান এতটাই সফল যে, উপকূলীয় টিলাগুলি ধীরে ধীরে আবাসিক এলাকায় রূপান্তরিত করা হচ্ছে। তবে টিলাগুলি অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।’’

১৪ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

উল্লেখ্য যে, টোটোরির বনাঞ্চলকে ঘিরে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে টোটোরি সিটির একাংশ। অনেকে সেখানে বসবাসও শুরু করে দিয়েছেন। সেই শহরকে আরও সাজিয়ে শীঘ্রই আরও মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন সে দেশের প্রশাসন। যদিও এর ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছে টোটোরি মরু এলাকা। টান পড়ছে পর্যটন শিল্পেও।

১৫ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

যখন টোটোরির মরুভূমিকে আবাদ করার জন্য বনাঞ্চল তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন এর একাংশ সংরক্ষণের পরিকল্পনাও করা হয়। পর্যটনশিল্প থেকে আসা বিপুল আয়ের কারণে এবং গবেষণার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। টোটোরির স্থানীয়েরাও মরুভূমির একাংশ সংরক্ষণের পক্ষেই ছিলেন।

১৬ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

তবে বর্তমানে মরুভূমির ১২ শতাংশ অবশিষ্ট রয়েছে। ক্রমেই বেড়ে চলা বনাঞ্চলের হাত থেকে অবশিষ্ট মরুভূমিকে রক্ষা করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বিজ্ঞানী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের। প্রায় নিয়মিত ওই বনাঞ্চলের আগাছা পরিষ্কার করতে যান স্বেচ্ছাসেবকেরা।

১৭ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

মরুভূমির বাকি অংশ সংরক্ষণ করতে এক বার ওই বনাঞ্চল কেটে ফেলার কাজেও হাত লাগানো হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।

১৮ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

সত্তরের দশকে জাপানের বিখ্যাত উদ্ভিদবিদ আকিরা মিয়াওয়াকি বনায়নের জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করেন। সেই পদ্ধতিতেই টোটোরির বিস্তীর্ণ মরুভূমি সবুজে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

১৯ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

প্রশাসন সূত্রে খবর, টোটোরির মরু অঞ্চল অদৃশ্য হতে শুরু হওয়ায়, পর্যটন থেকে আয় কমেছে। মরুভূমিতে বনাঞ্চল তৈরির সিদ্ধান্ত ‘ব্যুমেরাং’ হয়েছে বলেও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের দাবি।

২০ ২০
Japan’s Disappearing Dessert

টিলাগুলিকে চিরতরে ক্ষতির মুখে না ফেলে কী ভাবে টোটোরির মরু অঞ্চলকে সংরক্ষণ করে পর্যটন বাড়িয়ে তোলা যায়, সে দিকেও বিশেষ নজর রাখছে প্রশাসনে।

— ফাইল চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE