কোমর ছাপানো একঢাল চুল!
মনে হয় না, যদি আপনারও থাকত?
পরমুহূর্তেই মনে হয় রিমি বা নীলাঞ্জনাদের কথা। ন’টা থেকে ন’টার অফিসে দৌড়চ্ছে ওরা। ভেজা চুল ড্রায়ারে শুকিয়ে। নয়তো এ ওকে পরামর্শ দিচ্ছে, ‘লম্বা চুল? পাগল নাকি! ম্যানেজ করবি কী করে!’ তাই বব কাট-ই ভরসা।
কিন্তু সত্যিই কি একরাশ লম্বা চুল ম্যানেজ করা এতটাই কঠিন? ভেবে দেখুন, দু’তিন প্রজন্ম আগে আমাদের ঠাকুমা-দিদিমাদেরও ছিল। হয়তো এখনকার মতো বিজ্ঞাপনের অত চমক ছিল না।
কিন্তু আমরা বাস করছি এমন যুগে, যেখানে বাতাসে পলিউশন, জলে ব্যবহৃত রাসায়নিকের সক্রিয়তার কারণে প্রায় সকলেরই চুল নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়ে চলেছে। এই লেখায় জানানো হল চুলের নানা সমস্যার সমাধান, প্রাত্যহিক যত্ন, বিশেষ কয়েকটি যোগব্যায়াম, আধুনিক ফ্যাশনমাফিক চুলের স্টাইল তৈরির কথা।
কেশ-কথা
১) মাথার ত্বকের মধ্যে অসংখ্য ফলিকল, আর অতি সূক্ষ্ম ছিদ্র আছে। এই ফলিকল থেকে সরু সুতোর মতো যে বৃদ্ধি হয় তাকেই বলা হয় চুল।
২) চুল আমাদের মাথাকে তাপ ও আঘাত থেকে রক্ষা করে।
৩) ত্বকের মেন শ্যাফট, ফলিকল, সেবাশিয়াস গ্রন্থি, প্যাপিলা, পিলিপেনিস, পিগমেন্ট গ্র্যানিউলস, কিউটিক্যালস—এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে চুলের সৌন্দর্য ও তাজাভাব বজায় থাকে না।
৪) চুলের আয়ু ২ থেকে ৬ বছর। প্রতিমাসে আধ ইঞ্চি করে চুল বাড়ে। মাথার প্রতি বর্গইঞ্চিতে প্রায় ১০০০ চুল থাকে। তিনটি ধাপে চুল বাড়ে। ক) অ্যানাজেন—এই সময়ে নতুন চুল গজায় ও বাড়ে। খ) ক্যাটাজেন—চুলবৃদ্ধির বিশ্রাম অবস্থা (২থেকে ৬)। গ) টেলোজেন—এই সময়ে চুল পড়ে যায়।
চুলের প্রকৃতি
১) চুলের যত্ন নেওয়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার চুলের প্রকৃতি কী রকম।
২) চুল শুষ্কপ্রকৃতির হলে অনুজ্জ্বল ও বিবর্ণ দেখাবে। ডগা ফাটার সমস্যাও থাকবে। সামান্য টান পড়লেই এই ধরনের চুল ছিঁড়ে যায়।
৩) শুষ্ক চুলের জন্য প্রয়োজন ভাল কন্ডিশনার। হট অয়েল ম্যাসাজ খুব উপকারী।
৪) শ্যাম্পু যেন মৃদু প্রকৃতির হয়। শ্যাম্পু করার পর ভিনিগারে চুল ধুয়ে নিলে ভাল হয়। এগ শ্যাম্পু চুলের জন্য খুব উপকারী।
৫) তৈলগ্রন্থির নিষ্ক্রিয়তার জন্য চুল শুষ্ক হয়। চুলে ব্রাশ করার সময় যেন করোটির ত্বকে চাপ পড়ে। তাহলে গ্রন্থিগুলো সক্রিয় হয়ে উঠবে। নিয়মিত ম্যাসাজও প্রয়োজন।
৬) তৈলাক্ত চুল হলে বিপরীত ট্রিটমেন্ট হবে। খুব বেশি ব্রাশিং তৈলগ্রন্থিগুলোকে আরও উত্তেজিত করে তুলবে। তৈলাক্ত চুলের তৈলগ্রন্থি এমনিতেই সক্রিয় থাকে, তাই হাল্কা ব্রাশ করাই ভাল।
৭) তৈলাক্ত চুল সব সময় নেতিয়ে থাকে। শ্যাম্পু করলে কিছুটা ফেঁপে থাকে। আবার দু’এক দিনের মধ্যে নেতিয়ে পড়ে।
তেলে চুল তাজা?
১) অতিরিক্ত তেল-মশলাদার খাবার, কড়া চা-কফি এড়িয়ে চলুন। পরিবর্তে তাজা শাকসব্জি, ফল, মাছ খাবেন।
২) চুল নিয়মিত ধোয়া এবং শ্যাম্পু করার দিকে নজর রাখতে হবে।
মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত তৈলাক্ত চুল সহজেই উঠে যায়, চুল পাতলা হয়। খুসকি এবং অ্যানাডোজেন হরমোন বেশি হবার ফলে মেয়েদের থেকে ছেলেদের চুল বেশি পড়ে।
একটু আগে থেকে যত্ন নিলে অনেক দিন পর্যন্ত চুল ঠিক রাখা যায়।
কন্ডিশনিং
১) পাকা কলা, মধু ও নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক হিসেবে চুলে লাগাতে হবে। আধঘণ্টা পরে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
২) নারকেল তেল, সিডার ভিনিগার, গ্লিসারিন ও ২টো ডিম একসঙ্গে মাথায় মাখতে হবে। আধঘণ্টা পর ধুতে হবে।
৩) ভেষজ তেলে আমলা ফোটাতে হবে অন্তত আধঘণ্টা। স্নানের আধঘণ্টা আগে তেলটি লাগিয়ে রাখতে হবে। তাহলে চুল নরম হবে।
৪) ভাল ভেষজ তেলের সঙ্গে ২ চামচ মধু ও দুধ, ডিমের সাদা অংশ ও পাকা পেঁপে চটকে মাথায়, বিশেষ করে চুলের ডগায়, লাগিয়ে রেখে আধঘণ্টা পর শ্যাম্পু করতে হবে।
৫) নিমপাতা, তুলসীপাতা, পুদিনাপাতা সমপরিমাণে নিতে হবে। জলে পাতাগুলো ফেলে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে, সেই জলে চুল ধুতে হবে। এতে চুলের কন্ডিশনিং হবে, খুসকিও দূর হবে।
৬) ৪ চামচ করে শশা ও লেবুর রস মিশিয়ে চুলে লাগালে খুসকি চলে যাবে।
৭) ত্রিফলার ক্বাথ ও ভেষজ তেল মিশিয়ে চুলে লাগালে খুসকি দূর হবে ও চুলের কন্ডিশনিংও হবে।
৮) আদা ও লেবুর রস ভিনিগারের সঙ্গে মিশিয়ে রোজ লাগালে খুসকি চলে যাবে ও চুলে চিকন ভাব আসবে।
চুলে চটজলদি গ্লো আনার ১০টি উপায়
১) শ্যাম্পু করার পর বিয়ার দিয়ে ধুয়ে নিন।
২) শ্যাম্পুর শেষে আধ মগ জলে আধখানা পাতিলেবুর রস দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। চুলে গ্লো হবে।
৩) শ্যাম্পু করার পরে চায়ের পাতা ভেজানো জল দিয়ে চুল ধুলে আসবে উজ্জ্বল আভা।
৪) কেশুতপাতা ও ভৃঙ্গরাজ পাতার রস আধঘণ্টা মাথায় লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করুন। তারপর জলে ভিনিগার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। মসৃণ ও চকচকে চুল পেয়ে যাবেন।
৫) পাকা চুলে যারা রং করতে চান না, তারা দু’দিন অন্তর ল্যাভেন্ডার দিয়ে চুল ধোবেন।
৬) একটা ডিম ও ভেষজ তেল মিশিয়ে মাথায় লাগান। এক ঘণ্টা বাদে শ্যাম্পু করে ফেলুন। মসৃণ চুল পাবেন।
৭) লবঙ্গগুঁড়ো, পার্সলে পাতা ও ডিম একসঙ্গে মিক্সিতে মিশিয়ে নিয়ে মাথায় লাগান। আধঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
৮) ভাতের মাড় দিয়ে চুল ধুলে চুল উজ্জ্বল হয়।
৯) ছোট পেঁয়াজ থেতো করে ১ ঘণ্টা মাথায় লাগিয়ে রাখুন। তারপর শ্যাম্পু করুন।
১০) ৪০-৫০ ফোঁটা মধু অল্প জলে মিশিয়ে চুল ধুয়ে নিন। মসৃণ ভাব ফিরে আসবে।
চুলের যত্নে অ্যারোমা
আপনি যে শ্যাম্পুটি ব্যবহার করেন, তার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা এসেনসিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। চুল তৈলাক্ত হলে মেশান ল্যাভেন্ডার বা বার্গাসেট। শুষ্ক চুল হলে জেরানিয়াম বা চন্দন তেল মেশাবেন। শুষ্ক বা ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য এটি বিশেষ উপযোগী।
শেষে বলি ভাল থাকুন, ভাল রাখুন ফ্লোরা বা ফুলের ছোঁয়ায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy