Advertisement
০৩ মে ২০২৪

বিজ্ঞানের অনুদানে আগ্রহী নয় কলেজ, ক্ষোভ মন্ত্রীর

গ্রামে-গ্রামে বিজ্ঞান চেতনা ছড়িয়ে দিতে অনুদানের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু বর্ধমান জেলার বেশির ভাগ কলেজই সেই অনুদান নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বুধবার বর্ধমানের বিবেকানন্দ মহাবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ছাত্র-যুব বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধন এসে এ কথাই বললেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও জৈব প্রযুক্তি দফতরের মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।

ছাত্রীদের বানানো মডেল ঘুরে দেখছেন মন্ত্রী।—নিজস্ব চিত্র।

ছাত্রীদের বানানো মডেল ঘুরে দেখছেন মন্ত্রী।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:১৬
Share: Save:

গ্রামে-গ্রামে বিজ্ঞান চেতনা ছড়িয়ে দিতে অনুদানের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু বর্ধমান জেলার বেশির ভাগ কলেজই সেই অনুদান নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বুধবার বর্ধমানের বিবেকানন্দ মহাবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ছাত্র-যুব বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধন এসে এ কথাই বললেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও জৈব প্রযুক্তি দফতরের মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।

এ দিনের অনুষ্ঠানে রবিরঞ্জনবাবু দাবি করেন, রাজ্যে বিজ্ঞানের উন্নত গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু গবেষণার ফল বেশির ভাগ সময়েই ফাইলবন্দী হয়ে থাকছে। তাই প্রযুক্তিগত দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে এ রাজ্য। তিনি জানান, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিজ্ঞান ভাবনা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার বিভিন্ন জেলায় বিজ্ঞান মেলা আয়োজন করছে। একই সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের নামে বিজ্ঞান গবেষণা, পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি কেনা, বিজ্ঞানের জার্নাল প্রকাশের জন্য অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক নতুন পাঠ্যক্রম চালুর জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রশান্ত মহলানবিশ, উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী, মেঘনাথ সাহার নামে বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রীর ক্ষোভ, “সরকারের কাছে টাকা পড়ে থাকলেও কোনও কলেজই সেটি নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তাহলে কী ধরে নিতে হবে, আমাদের রাজ্যে বিজ্ঞান চর্চায় ভাটা পড়েছে? ”

বিজ্ঞান চর্চায় ছাত্রছাত্রী উৎসাহ কমার জন্য শিক্ষকদের একাংশের মনোভাবকেই দায়ী করেন রবিরঞ্জনবাবু। এ দিনের অনুষ্ঠানে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যে কলেজে এই মেলা শুরু হয়েছে, সেখানে বিজ্ঞানের আটটি বিষয়ে অনার্স পড়ানো হয়। কিন্তু এই মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ক’জন বিজ্ঞান শিক্ষক উপস্থিত রয়েছেন উঠে দাঁড়ান।” এরপরে মাত্র একজন বিজ্ঞান শিক্ষক উঠে দাঁড়ান। দৃশ্যতই ক্ষুদ্ধ মন্ত্রী বলেন, “যখন অনুষ্ঠানে এলাম, দেখি গোটা হলঘর খালি। এই কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে অন্তত ২৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র এক জন কেন উপস্থিত, সেটা ভেবে দেখা দরকার।” শিক্ষকদের শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। কলেজ শিক্ষকদের বিজ্ঞান মেলায় অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে বিবেকানন্দ কলেজের অধ্যক্ষ শিবপ্রসাদ রুদ্র বলেন, “কলেজের বিজ্ঞান মেলার জন্য দু’দিন ক্লাস হবে না। তাই হয়ত অনেকে আসেননি। আবার অনেক শিক্ষক মডেল প্রদর্শনী ও মেলারই অন্য কাজে ব্যস্ত বলেও অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি।”

তহবিল থাকা সত্ত্বেও কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের পরিকাঠামো উন্নয়নে কেন উদ্যোগী হচ্ছে না কলেজগুলি? প্রশ্নের উত্তরে শিবপ্রসাদবাবুর দাবি, “গবেষনার জন্য মূলত বায়োটেকনোলজি বিভাগের জন্য টাকা দেওয়া হয়। এই বিভাগটি আমাদের কলেজে নেই। তাই ওই ভাতা বা বৃত্তি পাওয়ার জন্য আবেদন করার উপায় নেই।” বিজ্ঞানের অন্য বিভাগের জন্য টাকা দেওয়া হলে অবশ্যই নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

জেলার অন্যান্য কলেজের অনেক অধ্যক্ষই আবার মন্ত্রীর দাবির সঙ্গে সহমত হননি। বর্ধমান রাজ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তারকেশ্বর মণ্ডল বলেন, “আমরা কিছুদিন আগেই কলেজের তহবিল থেকে ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি কিনছি। সরকার যে এই বাবদ অনুদান দিচ্ছে সেটা জানতাম না। মন্ত্রীও আগে কিছু বলেননি। এ বার নিশ্চয় আবেদন করব।” বর্ধমান উদয়চাঁদ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সুকৃতি ঘোষাল বলেন, “গত বছর অনুদান চেয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি। এ বছর সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময় রয়েছে। আমরা অবশ্যই বৃত্তি চাইবো।”

আয়োজকরা জানিয়েছেন, এ বছর জেলায় বিজ্ঞান মেলায় মোট ৫টি কলেজ ও ৯০টি বিদ্যালয় ও প্রায় ৪০০ জন ছাত্রছাত্রী যোগ দিয়েছে। প্রদর্শিত হচ্ছে ৯৬টি মডেল ও ৭০টি পোস্টার। আজ, বৃহস্পতিবার সফল প্রতিযোগীদের পুরষ্কৃত করা হবে।

শেষ হল যুব বিজ্ঞান মেলা

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা যুব কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে ও দিঘা বিজ্ঞান কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় দিঘায় জেলা ছাত্র যুব বিজ্ঞান মেলা শেষ হল। দিঘা বিজ্ঞান কেন্দ্রে আয়োজিত দু’দিনব্যাপী বিজ্ঞান মেলায় জেলার ১৮৯টি স্কুলের সাড়ে পাঁচশোর বেশী ছাত্রছাত্রী যোগ দিয়েছিল। ছাত্রছাত্রীরা বাস্তুতন্ত্র, শক্তি সংরক্ষণ, কৃষি-সহ একাধিক বিষয়ের উপর মডেল ও পোস্টার উপস্থাপন করে। জেলা বিজ্ঞান মেলায় বিচারক হিসেবে ছিলেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিলাভ কবিরাজ ও শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মিনহাজ হোসেন। দিঘায় সফল প্রতিযোগীরা কলকাতায় রাজ্য বিজ্ঞান মেলায় যোগ দেবে। ছিলেন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য, বিধায়ক অখিল গিরি প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE