Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Swimmer

টানা ৪৩ ঘণ্টা সাঁতরালেন ৬৫ বছরের ‘ক্ষিদ্দা’

সত্তরের দশকে সিলেটের ধুপাদীঘিতে অরুণ নন্দীর ৩০ ঘণ্টার বিরতিহীন সাঁতার দেখে আগ্রহী হয়েছিলেন ক্ষিতীন্দ্রবাবু। তার পর নিজেই সাঁতার অনুশীলন শুরু করেন।

ক্ষিতীন্দ্রচন্দ্র বৈশ্য।-নিজেস্ব চিত্র।

ক্ষিতীন্দ্রচন্দ্র বৈশ্য।-নিজেস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৭ ১৮:২০
Share: Save:

এ এক অন্য ক্ষিদ্দার গল্প!

মতি নন্দীর উপন্যাসের মতো এ ক্ষিদ্দাও সারা ক্ষণ ‘ফাইট’ বলে চলেছেন। তবে নিজেকে। না হলে কী কেউ আর বর্ষার ভরা নদীতে টানা ৪৩ ঘণ্টা সাঁতার কাটতে পারে! এ গল্পে তাই কোনি-ক্ষিদ্দা মিলেমিশে একাকার।

এ ‘ক্ষিদ্দা’র আসল নাম ক্ষিতীন্দ্রচন্দ্র বৈশ্য। বয়স, ৬৫। বাড়ি, বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার জাহাঙ্গিরপুরে। ভরা বর্ষায় ময়মনসিংহের সরচাপুর থেকে কংশ নদীতে প্রায় ১৪৬ কিলোমিটার টানা সাঁতরালেন তিনি। গত ৪ আগস্ট সন্ধে সাড়ে ছ’টা নাগাদ সরচাপুর সেতু থেকে সাঁতার কাটা শুরু করেন। ৬ অগস্ট দুপুর সওয়া দুটো নাগাদ একটানা সাঁতার কেটে পৌঁছন নেত্রকোনার মদনের মগড়া সেতুতে। এই ১৪৬ কিলোমিটার এই নদীপথে তিনি ফুলপুর, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা, দুর্গাপুর, নেত্রকোনা সদর-সহ মোট ১০টি উপজেলা অতিক্রম করেন। দীর্ঘ এই নদীপথে টহল নৌকোয় ক্ষিতীন্দ্রবাবুর পাশে ছিলেন প্রশাসনের প্রতিনিধি, চিকিৎসক এবং সংবাদমাধ্যম। নদীর দু’ধারে ছিল হাজারো মানুষের ভিড়।

আরও পড়ুন: গ্যাটলিনের পর বোউই, ট্র্যাকে মার্কিন যুগ ফিরছে?

ক্ষিতীন্দ্রবাবু পরে জানান, গিনেস বুকে নিজের নাম তুলতেই এই সিদ্ধান্ত। তাঁর কথায়, ‘‘জীবনে অনেক সাঁতার কেটেছি। রেকর্ডও করেছি। কিন্তু ৬৫ বছর বয়সে ১৪৬ কিলোমিটার সাঁতারের সিদ্ধান্ত অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এর আগে কেউ এমন ভাবে কেউ সাঁতরেছেন কি না আমার জানা নেই। আমি আশা করি গিনেস বুকের রেকর্ডে আমার নাম উঠবে।’’

রেকর্ড গড়ে উঠে ক্ষিতীন্দ্রচন্দ্র বৈশ্য।-নিজেস্ব চিত্র।

সত্তরের দশকে সিলেটের ধুপাদীঘিতে অরুণ নন্দীর ৩০ ঘণ্টার বিরতিহীন সাঁতার দেখে আগ্রহী হয়েছিলেন ক্ষিতীন্দ্রবাবু। তার পর নিজেই সাঁতার অনুশীলন শুরু করেন। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের আগে মদনের জাহাঙ্গিরপুর উন্নয়ন কেন্দ্রে টানা ১৫ ঘণ্টা সাঁতরে খবরে এসেছিলেন। ১৯৭২-এ সিলেটের রামকৃষ্ণ মিশনের পুকুরে ৩৪ ঘণ্টা, সুনামগঞ্জের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরে ৪৩ ঘণ্টা, ১৯৭৩ সালে ছাতক উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরে ৬০ ঘণ্টা, সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরে ৮২ ঘণ্টা এবং ১৯৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুরে ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট সাঁতার প্রদর্শন করে জাতীয় রেকর্ডের আধিকারী হয়েছিলেন ক্ষিতীন্দ্রবাবু।

আরও পড়ুন: ‘ভারতীয় ক্রিকেটকে অন্য পর্যায় নিয়ে যাচ্ছে বিরাট’

১৯৭৬-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুরে ১০৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট সাঁতরে নিজেরই পুরনো রেকর্ড ভেঙেছিলেন। সেই রেকর্ডের স্বীকৃতি হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জগন্নাথ হলের পুকুর পাড়ে একটি স্মারক ফলক নির্মাণ হয়েছিল। ক্ষিতীন্দ্রবাবু ১৯৮০ সালে ১২ ঘণ্টা ২৮ মিনিটে ভারতের মুর্শিদাবাদের ভাগীরথীর জঙ্গীপুর ঘাট থেকে গোদাবরী ঘাট পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার নদীপথ সাঁতরে পাড়ি দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের এই মুক্তিযোদ্ধাকে সাঁতারের কারণেই ১৯৭৫-এ গণভবনে রুপোর নৌকো দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE