অভিমন্যু ঈশ্বরন ১৪২ এবং ১১০
আটত্রিশ বছর আগে এই দিনেই টেস্ট অভিষেক কিংবদন্তি কপিল দেবের। তাই ১৬ অক্টোবর দিনটা ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম ‘রেড লেটার ডে’ বলাই যায়। কিন্তু এমন দিন, যেখানে জাতীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে একসঙ্গে দুই প্রান্তে দুই ভারতীয় তরুণের ব্যাট ঝলসে উঠছে, ভবিষ্যতের দিশা দেখছে ভারতীয় ক্রিকেট! এমন দিন বোধহয় সারা বছরে কমই আসে।
জয়পুরে বাংলার ওপেনার অভিমন্যু ঈশ্বরনের একই রঞ্জি ম্যাচে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দিন মুম্বইয়ে দিল্লির ঋষভ পন্থের ট্রিপল সেঞ্চুরি জাতীয় নির্বাচকদের যে রবিবার সারা দিন বেশ ব্যস্ত রেখেছিল, তা এক সদস্যের প্রতিক্রিয়াতেই বোঝা গেল। বললেন, ‘‘দুটোই অসাধারণ ইনিংস। একটা ছেলে পরপর দু’ইনিংসে দুটো সেঞ্চুরি করল। সে আবার ওপেনার। অন্য দিকে এমন একজন ট্রিপল সেঞ্চুরি করল, যে আবার উইকেটকিপারও। দুটোই আমাদের মনে রাখতে হবে।’’
রঞ্জি ট্রফির একই ম্যাচে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি বাংলার দুই কিংবদন্তির রয়েছে। পঙ্কজ রায় ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। পঙ্কজবাবু আবার এই কীর্তি ঘটিয়েছিলেন এক বার নয়, দু’বার। বাংলার হয়ে এই রেকর্ড রয়েছে আর একজনেরও। অশোক মলহোত্র। উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে ২১ বছর বয়সি অভিমন্যুর ১৪২-এর পর ১১০-এর খবর শুনে যিনি এ দিন বললেন, ‘‘অসম্ভব ভাল টেম্পারামেন্ট না থাকলে এটা করা যায় না। অভিমন্যু আমার কোচিংয়েও রঞ্জি খেলেছে। খুব ঠান্ডা মাথার ছেলে। এ রকম মাইলস্টোন গড়া ওর পক্ষেই সম্ভব।’’ এই সেঞ্চুরির পর বাংলা ২৭৪-৬-এ ডিক্লেয়ার করে দেয় এ দিন। নিষ্ফলা ম্যাচে ফের ব্যাট করতে নেমে ৭০-০-তে শেষ করে। বাংলাও তিন পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট।
মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঋষভের ট্রিপল আবার দিল্লির ক্রিকেটে নজির। তিনিই দ্বিতীয় দিল্লিওয়ালা, যিনি রঞ্জি ট্রফিতে ত্রিশতকের মালিক। প্রয়াত রমন লাম্বা বাইশ বছর আগে হিমাচল প্রদেশের বিরুদ্ধে ৩১২ করেছিলেন। তার পর এই ঋষভ। ওয়াংখেড়েতে ড্র ম্যাচে রান-বন্যার (চার দিনে ১২৮৩) মধ্যে তাঁর ৩২৬ বলে ৩০৮-এর ইনিংসটা ছিল দু’দিন আগের প্রতিপক্ষের স্বপ্নিল গুগালের করা ৩৫১-র জবাব। ‘‘দু’দিন ফিল্ডিংয়ে খাটিয়েছে। এর পর দু’দিন ব্যাটিং করব না?’’ রবিবার সন্ধ্যায় দিল্লি ফেরার পথে মুম্বই বিমানবন্দর থেকে মোবাইলে হরিদ্বারজাত কিপার-ব্যাটসম্যান বেশ উত্তেজিত ভাবে বললেন কথাগুলো। ২১ বছর বয়সি এমনিতে অবশ্য শান্ত স্বভাবের। ঋষভ বললেন, ‘‘দু’দিন ধরে ফিল্ডিং করার পরেই ঠিক করে নিয়েছিলাম, একবার ব্যাট পাই। কিছুতেই ক্রিজ ছাড়ব না। একেবারে কামড়ে পড়ে থাকব। যা রান উঠবে উঠবে। তখন অবশ্য তিনশোর কথা ভাবিইনি।’’
ঋষভ পন্থ ৩২৬ বলে ৩০৮
হরিদ্বার থেকে দেহরাদুন আর কতই বা দূর। ৫০ কিলোমিটার। একই রাজ্যের দুই শহর। অঞ্চলের প্রভাব কি না জানা নেই, দেহরাদুনের ছেলে অভিমন্যুর গলাতেও একই সুর। বললেন, ‘‘উইকেটে পড়ে থাকাটাই ছিল আজকের প্ল্যান। আর উইকেটে থাকলেই রান আসবে। এটা ভেবে ব্যাট করতে নেমেছিলাম। সেঞ্চুরির কথা পরে মনে এল।’’ কিংবদন্তিদের তালিকায় ঢুকে পড়ার বিষয়টা ইনিংসের পরে জানেন তাঁর দিদির কাছ থেকে। একটুও উত্তেজিত না হয়ে বললেন, ‘‘জানি এই রেকর্ড কাদের আছে। আমিও পেরেছি বলে ভাল লাগছে। তবে দায়িত্বটাও বেড়ে গেল। ওঁরা সবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। আমাকেও ইন্ডিয়ার জার্সি পরে খেলতে হবে।’’
দেহরাদুন থেকে ফোনে অভিমন্যুর গর্বিত বাবা আরপি ঈশ্বরন বললেন, ‘‘সৌরাশিস লাহিড়ির একশোতম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচের সময় আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, তুইও একশো ফার্স্ট ক্লাস খেলতে পারবি তো? ওর জবাব ছিল, ‘আমি একশো ফার্স্ট ক্লাস খেলে কী করব? আমাকে তার আগেই ইন্ডিয়া টিমে ঢুকতে হবে।’ ওর লক্ষ্য এটাই।’’
মাত্র আট বছর বয়সে বাড়ি-ঘর ছেড়ে ক্রিকেটের জন্য কলকাতায় আসা অভিমন্যুকে নিয়ে সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘‘ছেলেটা এত ওয়ার্কলোড নিতে পারে, যা কল্পনাও করতে পারবেন না। সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও ব্যাটিংটা করতে জানে ও। নিজে জানে কী পারে, কী পারে না। এটাও ওর প্লাস পয়েন্ট।’’
তার একটু পরেই দিল্লিতে বসে দেশকে এক ডজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার দেওয়া ঋষভের কোচ ফোনে তারক সিংহ বললেন, ‘‘ঋষভ এই ম্যাচে যেটা খেলেছে, এটাই ওর ন্যাচরাল খেলা। ম্যাচের আগে ওকে বলেছিলাম, তুই রানের কথা ভাববি না। উইকেটে থাক, রান এমনিই আসবে। সেটাই করল ও। ওর মতো ছাত্র পেলে গুরুদেরও ভাল লাগে। ছেলেটা লম্বা রেসের ঘোড়া।’’
সত্যিই যদি লম্বা রেসের ঘোড়া হন ঋষভ ও অভিমন্যু। যদি তাঁরা ভবিষ্যতে টেস্ট সাফল্য পান, তা হলে কে বলতে পারে, কপিল দেবের টেস্ট অভিষেকের পাশাপাশি তাঁদের উত্থানের দিন হিসেবেও ১৬ অক্টোবর দিনটা ‘রেড লেটার ডে’ থেকে যাবে কি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy