Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

হার বাঁচালেও শেষ চারে নেই এটিকে

রবি কিন চোটের জন্য খেলেননি। তাঁর নাম ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে ‘চোট কিংগ’। চোদ্দো ম্যাচের মধ্যে মাত্র পাঁচ বার লাল-সাদা জার্সি পরে মাঠে নেমেছেন আইরিশ তারকা।

স্বস্তি: পিছিয়ে থেকে সমতা ফেরানোর পরে এটিকে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

স্বস্তি: পিছিয়ে থেকে সমতা ফেরানোর পরে এটিকে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৪
Share: Save:

এটিকে ২ : কেরল ব্লাস্টার্স ২

অ্যাশলে ওয়েস্টউডের মনে হয় জেতার ভাগ্য নেই।

টেডি শেরিংহ্যামের চেয়ারে বসার পরে ব্রিটিশ কোচের কপালে শুধুই হার অথবা ড্র। পয়েন্ট নষ্টের সিরিজ। টানা পাঁচ ম্যাচ জিততে পারল না এটিকে। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে প্রথমবার এ রকম অধঃপতন হল কলকাতার।

দু’বার পিছিয়ে পড়েও সমতায় ফিরেছিল এটিকে। কিছুটা চমকে দিয়েই। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে দু’বারের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা আট নম্বরেই না আটকে থাকে শেষ পর্যন্ত। এবং সেই হতাশা থেকেই প্রথমবার এটিকে কোচ স্বীকার করে নিলেন বাকি ম্যাচগুলো জিতলেও সেমিফাইনালে যাওয়া সম্ভব নয়। ‘‘শেষ চারে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। শেষ ছয়ে থেকে যদি সুপার কাপে খেলার সুযোগ পাওয়া যায়, এখন সেই চেষ্টাই করতে হবে,’’ বলে দিয়েছেন জয়েশ রানেদের কোচ।

রবি কিন চোটের জন্য খেলেননি। তাঁর নাম ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে ‘চোট কিংগ’। চোদ্দো ম্যাচের মধ্যে মাত্র পাঁচ বার লাল-সাদা জার্সি পরে মাঠে নেমেছেন আইরিশ তারকা। চোটের সিরিজের মধ্যেও এ দিন এটিকের সবথেকে চমক ছিল গোলকিপার নির্বাচনে। দেবজিৎ মজুমদারের চোট। তাই সবাইকে অবাক করে মোহনবাগানের বাতিল এবং দশ দিন আগে টিমে যোগ দেওয়া কিপার সোরম পুইরেই-কে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল কলকাতার জার্সিতে। তা সত্ত্বেও অ্যাশলের টিম লড়াই চলাল সমানতালে। তবে কেরল কোচ ডেভিড জেমসের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে যে, ম্যাচটা জিততে পারলেন না তিনি। শেষ মুহূর্তে টোমাস থর্প গোললাইন সেভ করে অ্যাশলের টিমকে এক পয়েন্ট দিয়ে গেলেন। প্রাক্তন বেঙ্গালুরু কোচের এ বারের কোচিং ‘স্কোর বোর্ডে’ চার ম্যাচে এ দিনই প্রথম এল এক পয়েন্ট। গত সাড়ে তিন বছরে সাত বার মুখোমুখি হয়ে এটিকে-কেরল। প্রতিবারই ভিভিআইপি বক্স আলো করে থাকতেন ভারতীয় ক্রিকেটের দুই তারকা সচিন তেন্ডুলকর বা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। দু’জনেই দু’টি টিমের অন্যতম মালিক। সচিন যখন খেলতেন তখন তাঁকে বলা হত মাস্টার ব্লাস্টার। তাঁর নামের সঙ্গে সঙ্গত করেই কেরল টিমটার নামকরণ— কেরল ব্লাস্টার্স। কোচিতে উদ্বোধনী ম্যাচের দিন সস্ত্রীক হাজির ছিলেন সচিন। এ দিন অবশ্য যুবভারতীতে তিনি ছিলেন না। আর এ বার এটিকের ম্যাচে সৌরভকে তো প্রায় দেখাই যাচ্ছে না। রহস্যটা কী সেটাও অজানা। আসলে দুই প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সম্ভবত তাঁদের টিমের পারফরম্যান্সে এতটাই হতাশ যে, মাঠে আসার প্রয়োজন অনুভব করছেন না। ফলে এই মরসুমে অন্তত সচিন বনাম সৌরভ হচ্ছে না আইএসএলের মাঠে।

আরও পড়ুন: জয়ে ফিরল পুণে, হার গুয়াহাটির

কিন্তু কোথা থেকে যুবভারতীতে এলেন সচিনের টিমের এত হলুদ-সমর্থক? যাঁরা প্ল্যাকার্ড বা পতাকা নিয়ে এসেছিলেন দিমিত্রি বার্বাটভ, সি কে বিনীতদের উৎসাহ দিতে। খবর নিয়ে জানা গেল টিমের সঙ্গেই কোচি থেকে এসেছেন শ’খানেক সমর্থক। ওঁরা সবাই কেরলের ফ্যানস ক্লাব ‘মঞ্জাপডা’-র সদস্য। মালওয়ালিতে ‘মঞ্জাপডা’ শব্দের অর্থ ‘ইয়োলো আর্মি’ বা হলুদ সেনা। স্থানীয় কিছু কেরল সমর্থকও ছিলেন ওই গ্যালারিতে। দু’বার আইএসএলের ফাইনাল হয়েছে কেরল এবং কলকাতার। দু’বারই জিতেছে সৌরভের টিম। সম্ভবত সেই উত্তাপ নিতেই এ দিন প্রায় হাজার তিনেক এটিকে সমর্থকও এসেছিলেন তাঁদের টিমের এই লক্ষ্যহীন ম্যাচ উপভোগ করতে।

সেটা যে তাঁরা করেননি, তা কিন্তু নয়। দু’টো অবাক গোলের পর বার্বাটভের আসাধারণ গোল। লেভারকুসেন, টটেনহ্যাম হটস্পার, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে প্রচুর গোল আছে বার্বাটভের। বুলগেরিয়ার অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার বহু ম্যাচ গোল করে টিমকে জিতিয়েছেন অবলীলায়। এ বার চোটের জন্য কেরলে তেমন সাফল্য পাননি। সাইত্রিশ বছর বয়েসে কী করবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। এ দিন অবশ্য ইপিএল তারকা দেখালেন বয়স হলেও প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটে। হাফ ভলিতে তাঁর গোলটা ২-১ এগিয়ে দিল কেরলকে। সেটা অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। টোমাস থর্প ম্যাচটা ২-২ করে দিলেন শেষ পর্যন্ত।

বিরতির আগে অবশ্য মজার গোল হল দু’দলেরই। কেরলের প্রশান্তের তোলা বলে হেড করলেন গুজন বলডিভশন। সেটি এটিকের জর্ডি মন্টেলের কাঁধে লেগে গোলে ঢুকল দিক বদল করে। পাল্টা কলকাতা ১-১ করল প্রায় একই রকম ভাবে। রায়ান টেলরের মাটি ঘেঁষা শট কেরলের লালরুয়াথারার পায়ে লেগে দিক বদল করে গোলে ঢুকল।

এ বারের আইএসএল লোক টানতে ব্যর্থ। কেন সেটা হচ্ছে তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চালাচ্ছেন সংগঠকরা। তবে এটা ঘটনা অন্তত এদিনের দুটো টিমে সুরজিৎ সেনগুপ্ত, সুভাষ ভৌমিক, সুব্রত ভট্টাচার্যের মতো তো নয়-ই, কৃশানু দে বা বিকাশ পাঁজির মাপের একজন ফুটবলারকেও পাওয়া গেল না, যাঁরা ম্যাচের রং বদলাতে পারেন অনায়াসেই।

এটিকে: সোরাম পুইরেই, আশুতোষ মেটা, টোমাস থর্প, জর্ডি মন্টেল (রুপার্ট ননগ্রাম) (শঙ্কর শাম্পিঙ্গরাজ, কিগান পেরিরা, বিপীন সিংহ, রায়ান টেলর, জয়েশ রানে, ডারেন কালদেইরা ও মার্টিন প্যাটারসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ATK kerala Blasters ISL 4 Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE