মহড়া: দল নিয়ে পরে প্র্যাক্টিসে নামতে পারলেন খালিদ। নিজস্ব চিত্র
ঠান্ডা নয়, পাহাড়ে খেলতে গিয়ে মাঠের বাইরে অন্য রকম বিরোধিতার সামনে খালিদ জামিলের ইস্টবেঙ্গল।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে স্টেডিয়ামে কী হবে বোঝা যাচ্ছে না, তবে তার তিরিশ ঘণ্টা আগে যা হল সেটা কিন্তু অন্য রকম ইঙ্গিত দিচ্ছে। সোমবার সকালে আল আমনাদের কার্যত গালাগালি দিতে দিতে বের করে দেওয়া হল মাঠ থেকে। পুরো সময় অনুশীলনও করতে দেওয়া হয়নি। এদুয়ার্দো ফেরিরা এবং মহম্মদ রফিকদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ালেন আইজলের টিমের লোকজন। শুধু তাই নয়, যাতে সমস্যায় পড়েন সে জন্য নিয়ম থাকলেও ম্যানেজার্স মিটিং-এর জন্য ইস্টবেঙ্গলের ফুটবল ম্যানেজার রজত গুহকে গাড়িও পাঠানো হয়নি সংগঠকদের পক্ষ থেকে। শেষ মুহূর্তে পরিস্থিতি আন্দাজ করে হেঁটেই সভা স্থলে পৌঁছন তিনি। পুরো ঘটনা জানিয়ে ম্যাচ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল।
সব মিলিয়ে ম্যাচের আগেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে লাল-হলুদ শিবির। পরিস্থিতি আন্দাজ করে ইস্টবেঙ্গল কোচ বলে দিয়েছেন, ‘‘আইজলের পরিবেশ আমার খুবই পছন্দের। এখানকার মানুষদেরও আমি চিনি, জানি। আমার বহু সুখ স্মৃতি আছে এখানে। কিন্তু পেশাদার একজন কোচ হিসাবে নতুন একটা চ্যালেঞ্জ নিতে চেয়েছিলাম বলেই কলকাতায় গিয়েছি। আইজল ভাল টিম। খুব ভাল খেলছে। ওদের দর্শকদের মাঠে স্পোর্টিং মনোভাব আশা করব।’’
গত বছর আইজলকে আই লিগ দেওয়ার পর হঠাৎ-ই ইস্টবেঙ্গলে নাম লিখিয়েছিলেন খালিদ। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন টিমের হৃদপিন্ড আল আমনা-সহ আরও কয়েকজনকে। সেটা যে ফুটবলপাগল মিজোরামের ফুটবলপ্রেমীরা ভাল চোখে নেননি সেটা জানেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। খালিদ সে জন্য প্রলেপ দিতে চেয়েছেন ম্যাচের আগে। কিন্তু তাতে যে কাজ হচ্ছে না সেটা আইজলের পর্তুগিজ কোচ পাওলো মেনজেসের বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কলকাতায় আমরা যখন ম্যাচটা খেলতে গিয়েছিলাম তখন সে ভাবে তৈরি-ই ছিলাম না। তা-ও আমরা ২-২ ড্র করেছিলাম। আর এ বার তো আমার টিমে জেতার রাস্তায় রয়েছে। আমরা তিন পয়েন্টের জন্য খেলব। আক্রমণাত্মক ফুটবলই দেখতে পাবেন সবাই।’’
এ দিন সকালে ঝামেলার সূত্রপাত উইলিস প্লাজা, আল আমনারা মাঠে অনুশীলন করতে আসার পর। ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা নির্ধারিত সময়ে মাঠে এসে দেখেন সেখানে দুটো দল অনুশীলন করছে। একটি মেয়েদের, অন্যটি পুলিশের। খালিদ জামিল টিম নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। সাড়ে ন’টার বদলে পৌনে দশটায় মাঠে নামেন অর্ণব মণ্ডল, কাতসুমি ইউসারা। দেরিতে নামলেও খালিদদের জন্য নির্ধারিত এক ঘণ্টা অনুশীলন করতে দেওয়া হয়নি। তাঁদের দলের অনুশীলন আছে বলে আইজলের লোকজন মাঠে ঢুকে পড়েন।
এসব সত্ত্বেও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের শপথ নিয়েছে খালিদ ব্রিগেড। আইজল ম্যাচ জিততে না পারলে খেতাব যুদ্ধে অনেকখানি পিছিয়ে পড়বেন আল আমনারা। সে জন্যই খালিদ নামিয়ে দিচ্ছেন সব বিদেশিকেও। কোচের পাশে বসে সাংবাদিক সম্মেলনে উইলিস প্লাজাও বলে দিয়েছেন, ‘‘আমি একশো শতাংশ ফিট এবং আইজলের বিরুদ্ধে খেলার জন্য তৈরি।’’ দুপুর দুটোয় খেলা। ওই সময় আইজলে তেমন ঠান্ডা নেই। আবহাওয়া থাকে কলকাতার মতো। তাই চিন্তিুত নন কেউই। তবে কৃত্রিম ঘাসের মাঠ নিয়ে সমস্যা তাঁরা। এখানে আগে এক বছর টানা খেলে যাওয়া আল আমনা বলে দিলেন, ‘‘এখানকার টার্ফ তেমন ভাল নয়। অন্য রকম। খেলার শেষ দিকে পায়ের পেশীতে টান ধরে। তা ছাড়া এখানে শ্বাসকষ্ট হয় শেষের দিকে। তাই শুরুতেই গোল তুলে নিতে হবে।’’
আল আমনার সঙ্গে কাতসুমিও মনে করছেন, খেতাবের লড়াইতে টিঁকে থাকতে হলে এখন সব ম্যাচই ইস্টবেঙ্গলের কাছে ফাইনাল ধরে খেলতে হবে। কাতসুমি বলে দিলেন, ‘‘পাহাড় আমাদের যে কোনও সময় বিপদে ফেলতে পারে। তবে আমরা ফোকাসড। নিজেদের কাজটা আমরা নিজেরাই কঠিন করেছি। তিন পয়েন্ট আমাদের চাই।’’ দুই ডিফেন্ডার অধিনায়ক অর্ণব মণ্ডল এবং এদুয়ার্দো আবার বলে দিচ্ছেন, ‘‘কিছুতেই গোল খাওয়া চলবে না আমাদের। গোল করে তা ধরে রাখতে হবে।’’
সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি তাতে পাহাড় বনাম সমতলের লড়াই ঘিরে ঠান্ডার এই আবহেও দুপক্ষের সমর্থকরাই তপ্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy