Advertisement
০২ মে ২০২৪

চার দিনের টেস্ট দেখছেন শাস্ত্রী

বাঁ হাতি স্পিনার এবং দশ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন শুরু করেছিলেন শাস্ত্রী। ধাপে ধাপে তিনি দশ নম্বর থেকে নয় নম্বর, নয় থেকে আট, আট থেকে সাত— এ ভাবে ওপেনার হিসেবে সফল হয়েছেন।

মতামত: আলি ব্যাখারকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিলেন রবি শাস্ত্রী।

মতামত: আলি ব্যাখারকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিলেন রবি শাস্ত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:৫১
Share: Save:

ভবিষ্যতে চার দিনের টেস্ট দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন রবি শাস্ত্রী। ভারতীয় দলের হেড কোচের বিশ্লেষণ, টেস্টকে যে টি-টোয়েন্টির সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে তার জন্য অনেক বেশি চিন্তাভাবনা প্রয়োজন।

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট সম্প্রচারকারী চ্যানেল সুপারস্পোর্টে প্রাক্তন অধিনায়ক এবং সর্বময় কর্তা আলি ব্যাখার-কে দেওয়া একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে শাস্ত্রী টেস্ট বনাম টি-টোয়েন্টির লড়াই নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছেন, তাতে তিনি বলেছেন, শক্তিশালী দলগুলির মধ্যে আরও বেশি করে খেলা করা উচিত। ‘‘আমি বলছি না, দুর্বল দলগুলোকে একদম বের করে দিতে। নিশ্চয়ই ওরাও থাকুক। কিন্তু শক্তিশালী দলগুলির মধ্যে বেশি খেলা হোক। ভারতে বেশি করে আসুক অস্ট্রেলিয়ায়। বা ভারত বেশি করে যাক দক্ষিণ আফ্রিকায়। তা হলে টেস্ট ক্রিকেট বেঁচে থাকবে।’’ তার পরেই তাঁর সংযোজন, ‘‘অদূর ভবিষ্যতে আমি দেখতে পাচ্ছি, টেস্ট ম্যাচ চার দিনের হয়ে যেতে পারে।’’

বাঁ হাতি স্পিনার এবং দশ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন শুরু করেছিলেন শাস্ত্রী। ধাপে ধাপে তিনি দশ নম্বর থেকে নয় নম্বর, নয় থেকে আট, আট থেকে সাত— এ ভাবে ওপেনার হিসেবে সফল হয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ক্যারিবিয়ান পেস ব্যাটারিকে সামলে সেঞ্চুরি করেছেন বার্বেডোজে। ব্যাখারের প্রশ্নের উত্তরে শাস্ত্রী তাঁর বার্বেডোজের সেঞ্চুরিকে সেরা আখ্যা দিচ্ছেন। ‘‘মার্শাল, বিশপ, অ্যামব্রোজ, ওয়ালশ। এ রকম পেস ব্যাটারিকে সামলে সেঞ্চুরি করাটা সেরা প্রাপ্তি বলেই মনে করি,’’ সাক্ষাৎকারে বলেছেন শাস্ত্রী।

তবে পরের দিকে এর সঙ্গে মজা করে তিনি যোগ করেন, ‘‘পাকিস্তানে গিয়েও পেস ব্যাটারিকে খেলতে হয়েছে। ইমরান, সরফরাজ, শকুর রানা, খিজার হায়াত। দু’জন দুরন্ত ফাস্ট বোলার, তাদের সঙ্গে দু’জন দেশভক্ত আম্পায়ার। পায়ে লাগলেই যারা আউট দিয়ে দেবে।’’ মনে করিয়ে দেওয়া যাক, নিরপেক্ষ আম্পায়ার আসার আগে পাকিস্তানে সফরকারী দলের জন্য সব চেয়ে বেশি বাউন্সার ধেয়ে আসত দেশভক্ত শকুর রানাদের দিক থেকেই। ডিআরএস আসার অনেক আগে তখন পায়ে লাগলেই পাক আম্পায়ারেরা আঙুল তুলে দিতে দ্বিধা করতেন না।

ক্রিকেট ইতিহাসে অনন্য এক কীর্তি রয়েছে শাস্ত্রীর। যা অনেকেই হয়তো ভুলে গিয়েছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ছয় ছক্কার রেকর্ড তো তাঁর ছিলই। তাঁর আগে একমাত্র গ্যারি সোবার্সের যা ছিল। কিন্তু শাস্ত্রীর বিরল কৃতিত্ব হচ্ছে, যুবরাজ সিংহ যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছয় ছক্কা মারছেন, তখন ধারাভাষ্যকার হিসেবে তিনিই ছিলেন মাইকের সামনে। তিলকরাজ-কে ছয় ছক্কা মারার অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘তিনটে ছয় মারার পরে আমি প্রথম ভাবতে শুরু করি, কেন নয়? চেষ্টা করে দেখা যেতেই পারে। বোলার অনেক সাবধানতা নিয়ে বল করেছিল শেষ তিনটি বল। আমাকে তারতম্য ঘটাতে হয়েছিল। কিন্তু পেরেছিলাম।’’ সোবার্সের ছয় ছক্কা? ‘‘দারুণ। আমি অনেক বার দেখেছি। কিন্তু আমার সময় কোনও টিভি ছিল না। সেই কারমে আমার ছয় ছক্কার কোনও ফুটেজ নেই।’’ যুবরাজের ছয় ছক্কার সময় তাঁর কমেন্ট্রি করার কথা ছিল না। কাকতালীয় ভাবে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার ডেভিড লয়েড তাঁকে সেই সময় কমেন্ট্রি করতে ডাকেন। এবং, যুবরাজ যখন ছয় ছক্কা মারছেন, মাইক হাতে তার বর্ণনা করেছিলেন শাস্ত্রী-ই।

১৯৯২-৯৩ মরসুমে দক্ষিণ আফ্রিকায় ঐতিহাসিক সফরে নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে সাক্ষাৎ সারাজীবন মনে রাখবেন শাস্ত্রী। সেই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বোর্ড প্রধান ছিলেন ব্যাখার। শাস্ত্রী সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমাদের ক্যাপ্টেন ছিল আজহার। আমি ছিলাম সহ-অধিনায়ক। ওর সঙ্গে হাত মেলানোর পরেই আমার চোখের দিকে তাকালেন উনি। তার পরেই আমার নাম ধরে বললেন, রবি— তোমার চোখ দু’টোর মধ্যে খুব ভয় দেখানোর ভঙ্গি আছে। কিন্তু আমি তোমাকে বলতে পারি, দক্ষিণ আফ্রিকা খুব বন্দুত্বপূর্ণ একটা দেশ। এখানে তোমাক থাকতে ভাল লাগবে।’’ বলেই শাস্ত্রীর সংযোজন, ‘‘সত্যিই উনি ঠিক বলেছিলেন। আমার পাসপোর্ট দেখলেই বোঝা যাবে, সব চেয়ে বেশি ভিসা দক্ষিণ আফ্রিকারই রয়েছে। সব চেয়ে বেশি বার আমি এখানে এসেছি।’’ দুনিয়ার সেরা অলরাউন্ডারদের সঙ্গে খেলেছেন তিনি। ইয়ান বোথাম, কপিল দেব, ইমরান খান, রিচার্ড হ্যাডলি। কাকে সেরা মনে করো? ব্যাখার জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘অলরাউন্ড দক্ষতা দেখতে গেলে বোথাম। মাঝের তিন-চার বছরে যেমন ব্যাট করে জিতিয়েছে, তেমনই বল হাতে। আর কপিল ছিল সব চেয়ে প্রতিভাবান।’’ তাঁর দেখা সেরা বোলার? এক কথায় বলে দিতে পারলেন শাস্ত্রী— ম্যালকম মার্শাল। তার পরে যদি কারও নাম করতে হয়, ওয়াসিম আক্রম। ‘‘এত সম্পূর্ণ পেস বোলার আমি আর কখনও দেখিনি। আক্রম বলকে কথা বলাতে পারত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Ravi Shastri Test Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE