Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আমাদের সেরা অস্ত্র দলগত সংহতি

কোলাপুরে অটো চালিয়ে কোনও মতে সংসার চালান অনিল যাদব। ছেলে অনিকেত যাদব অনূর্ধ্ব-১৭ ভারতীয় দলের আক্রমণের অন্যতম সেরা অস্ত্র। বৃহস্পতিবার গোয়ায় মরিশাসের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে গোলের পর একান্ত সাক্ষাৎকারে আনন্দবাজার-এর সামনে খোলামেলা ভারতীয় দলের স্ট্রাইকার।কোলাপুরে অটো চালিয়ে কোনও মতে সংসার চালান অনিল যাদব। ছেলে অনিকেত যাদব অনূর্ধ্ব-১৭ ভারতীয় দলের আক্রমণের অন্যতম সেরা অস্ত্র।

ভরসা: বিশ্বকাপে ভারতীয় দল তাকিয়ে অনিকেতের দিকে। ছবি: টুইটার

ভরসা: বিশ্বকাপে ভারতীয় দল তাকিয়ে অনিকেতের দিকে। ছবি: টুইটার

শুভজিৎ মজুমদার
শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২৭
Share: Save:

প্রশ্ন: মহারাষ্ট্রের ছেলে হয়েও ক্রিকেটের বদলে ফুটবল বেছে নেওয়ার কারণ কী?

অনিকেত যাদব: আমার জন্ম কোলাপুরে। আমাদের জেলায় ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবল অনেক বেশি জনপ্রিয়। প্রায় সারা বছরই ছোট-বড় প্রচুর টুর্নামেন্ট হয়। একাধিক ফুটবল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও আছে। বন্ধুদের সঙ্গে আমিও খুব ছোটবেলা থেকে ফুটবল খেলতে শুরু করি। আর তখন থেকেই ভারতের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতাম। দ্বিতীয়ত, আমার বাবা অনিল যাদব অটো চালান। ক্রিকেটের খরচ চালানোর মতো আর্থিক ক্ষমতা ছিল না বাবার।

প্র: শুরু লেফট ব্যাক হিসেবে। অথচ জাতীয় দলে স্ট্রাইকার। কী ভাবে বদলে গেল পজিশন?

অনিকেত: বছরখানেক আগে এফসি পুণে সিটি-র অনূর্ধ্ব-১৫ দলের ট্রায়ালে নির্বাচিত হই। জার্মানির একটি টুর্নামেন্টে কোচ আমাকে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলিয়েছিলেন। তার পর থেকেই স্ট্রাইকার ও মিডফিল্ড— দু’টো পজিশনেই খেলি।

প্র: প্রিয় ফুটবলার কে?

অনিকেত: নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র) ও সি কে বিনীত।

আরও পড়ুন: অভিযান শেষ সিন্ধু, সাইনার

প্র: কেন?

অনিকেত: নেমারের অসাধারণ বল নিয়ন্ত্রণ, গতি ও ফিটনেস আমাকে মুগ্ধ করে। বিনীতের লড়াই ভাল খেলতে উজ্জীবিত করে।

প্র: অনূর্ধ্ব-১৭ ভারতীয় দলে খেলার সুযোগ কী ভাবে এল?

অনিকেত: বছর দু’য়েক আগে ছুটিতে পুণে থেকে কোলাপুরে এসেছি। হঠাৎ শুনলাম, মুম্বইয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের জন্য ট্রায়াল নেওয়া হবে। আমার শৈশবের কোচ জয়দীপ আংরিওয়াল ট্রায়ালে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু মুম্বই পৌঁছনোটাই ছিল প্রধান সমস্যা। বাবার পক্ষে অটো চালানো বন্ধ করে আমাকে নিয়ে মুম্বই যাওয়া সম্ভব ছিল না।

প্র: তা হলে?

অনিকেত: একাই চলে গেলাম ট্রায়াল দিতে।

প্র: প্রায় আট ঘণ্টা বাসে করে একা মুম্বই যেতে ভয় করেনি?

অনিকেত: মা আমাকে একা অত দূরে একা যেতে দিতে চাননি। কিন্তু বাবা প্রচণ্ড উৎসাহ দিয়েছিলেন। মাকে বলেছিলেন, ওকে যেতে দাও। এই সুযোগ বারবার আসে না। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ দলে নির্বাচিত হলে ওর জীবন বদলে যাবে।

প্র: কী রকম ছিল জাতীয় দলে ট্রায়ালের অভিজ্ঞতা?

অনিকেত: মুম্বইয়ে নিকোলাই অ্যাডাম ও অভিষেক যাদব স্যার ট্রায়াল নিয়েছিলেন। প্রথম দিন একটু গুটিয়ে ছিলাম। কিন্তু ওঁরা আমাকে বলেছিলেন, ভুলে যাও যে ট্রায়াল দিতে এসেছ। মনে করো, পাড়ায় বন্ধুদের সঙ্গে খেলছ। তার পরেই চাপমুক্ত হয়ে খেলি। তবে নির্বাচিত ফুটবলারদের তালিকার আমার নাম দেখে প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না।

প্র: গত দু’বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করছে ভারতীয় দল। কতটা সমৃদ্ধ হয়েছে ফুটবলাররা?

অনিকেত: পেশাদারিত্ব কাকে বলে সেটা জাতীয় দলে সুযোগ না পেলে জানতেই পারতাম না। অনেক কিছু শিখেছি।

প্র: কী রকম?

অনিকেত: প্রথম হচ্ছে শৃঙ্খলা। আমরা কখন কী করব। ম্যাচ থাকলে তার আগের দিন কখন ডিনার শেষ করতে হবে। কী ধরনের খাবার খেতে হবে। আবার ম্যাচের পর দ্রুত তরতাজা হয়ে ওঠার জন্য কী কী খেতে হবে। এ ছাড়াও কী ধরনের অনুশীলন করতে হবে ফিটনেস বাড়ানোর জন্য— পুরোটাই কোচ ঠিক করে দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়। আমরা নিয়ম মানছি কি না, তার দিকেও কোচের কড়া নজর রয়েছে। দ্বিতীয়ত, কোচ শিখিয়েছেন দলের সাফল্যই আসল।

প্র: ভারতীয় দলের স্ট্রাইকারের অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে লক্ষ্য কী?

অনিকেত: নর্টন স্যার পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, তুমি স্ট্রাইকার হলেও গোল করার মতো জায়গায় যদি কোনও ডিফেন্ডার থাকে, তা হলে তাকেই বল দিতে হবে। আমরা দল হিসেবে খেলতে চাই। আমি গোল না করা সত্ত্বেও দল যদি জেতে, তা হলে সেটাই হবে সেরা প্রাপ্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Aniket Jadhav U-17 Indian Football team Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE